07-04-2024 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 01-03-99 মধুবন


“সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে সংস্কার মিলন করা - এটাই হলো সত্যিকারের হোলী”


আজ বাপদাদা চারিদিকের নিজের হোলিয়েস্ট আর হাইয়েস্ট বাচ্চাদেরকে দেখছিলেন। বিশ্বে সবথেকে হাইয়েস্ট উঁচুর থেকেও উঁচু শ্রেষ্ঠ আত্মা তোমরা বাচ্চারা ছাড়া আর কেউ আছে? কেননা তোমরা সবাই হলে উঁচুর থেকেও উঁচু বাবার বাচ্চা। সমগ্র কল্প চক্র লাগিয়ে দেখো তো সবথেকে উঁচু পদের অধিকারী আর কেউ নজরে আসে? রাজ্য-অধিকারী স্বরূপেও তোমাদের থেকে উঁচু রাজ্য অধিকারী কেউ হয়েছে? আবার পূজা আর গায়ন-ও দেখো, যতটা বিধিপূর্বক তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পূজা হয়, তারথেকে বেশী আর কারো হয়? ড্রামার ওয়ান্ডারফুল রহস্য কতোই না শ্রেষ্ঠ যেটা তোমরা স্বয়ং চৈতন্য স্বরূপে, এই সময় নিজের পূজ্য স্বরূপের নলেজের দ্বারা জেনেও থাকো আর দেখতেও থাকো। একদিকে তোমরা চৈতন্য আত্মারা রয়েছো আর অন্যদিকে তোমাদের জড় চিত্র পূজ্যরূপে রয়েছে । নিজেদের পূজ্য স্বরূপকে দেখছো তাই না? জড় রূপেও আছো আবার চৈতন্য রূপেও আছো। তো এই খেলা বড়ই ওয়ান্ডারফুল তাই না! আবার রাজ্যের হিসেবেও সমগ্র কল্পে নির্বিঘ্ন, অখন্ড-অটল রাজ্য এক তোমাদের অর্থাৎ আত্মাদেরই চলে। রাজা তো অনেক হয় কিন্তু তোমরা হলে বিশ্বরাজন বা বিশ্বরাজনের রয়্যাল ফ্যামিলিতে সবথেকে শ্রেষ্ঠ। তো রাজ্যেও হাইয়েস্ট, পূজ্য রূপেও হাইয়েস্ট আর এখন সঙ্গমে পরমাত্ম-উত্তরাধিকারের অধিকারী, পরমাত্ম মিলনের অধিকারী, পরমাত্ম স্নেহের অধিকারী, পরমাত্ম পরিবারের আত্মারা আর কেউ হয়? তোমরাই হয়েছো তাই না? হয়ে গেছো নাকি হচ্ছো? হয়েও গেছো আর এখন তো উত্তরাধিকার নিয়ে সম্পন্ন হয়ে বাবার সাথে সাথে নিজের ঘরে ফিরে যাচ্ছো। সঙ্গমের সুখ, সঙ্গম যুগের প্রাপ্তিগুলি, সঙ্গম যুগের সময় শ্রেষ্ঠ লাগে তাই না! অত্যন্ত প্রিয় মনে হয়। রাজ্যের সময়ের থেকেও সঙ্গমের সময় ভালো লাগে, তাই না? ভালো লাগে নাকি তাড়িতাড়ি চলে যেতে চাও? তাহলে কেন জিজ্ঞেস করো যে বাবা বিনাশ কবে হবে? চিন্তা করতে থাকো - জানিনা বিনাশ কবে হবে? কি হবে? আমি কোথায় থাকবো?বাপদাদা বলছেন যেখানেই থাকবে - স্মরণের যাত্রায় থাকবে, বাবার সাথে থাকবে। সাকারে বা আকারে সাথে থাকবে, তবে কিছুই হবে না। সাকারে কাহিনী শুনেছো তাই না। বিড়ালের ছানাগুলি জ্বলন্ত ভাট্টিতে থাকা স্বত্তেও সেফ ছিল তাই না! নাকি পুড়ে গিয়েছিল? সবাই সেফ ছিল। তো তোমরা পরমাত্মার বাচ্চারা যারা সাথে থাকবে তারা সেফ থাকবে। যদি অন্য কোথাও বুদ্ধি যায় তাহলে কিছু না কিছু সেক (আঘাত) লাগবে, কিছু না কিছু প্রভাব পড়বে। সাথে কম্বাইন্ড থাকবে, এক সেকেন্ডও একলা হবে না তাহলে সেফ থাকবে। কখনও কখনও কাজকর্মে বা সেবাতে একলা অনুভব করো? কি করবো, একলা আছি, অনেক কাজ আছে! তারপর ক্লান্তও হয়ে যায়। তখন বাবাকে কেন সাথী বানাও না! দুই ভূজধারীকে সাথী বানিয়ে নাও, হাজার ভূজধারীকে কেন সাথী বানাও না। কে বেশী সহযোগ দেবে? হাজার ভূজধারী নাকি দুই ভূজধারী?

সঙ্গমযুগে ব্রহ্মাকুমার বা ব্রহ্মাকুমারীরা একলা হতে পারে না। কেবল যখন সেবাতে, কর্মযোগে অনেক বিজি হয়ে যাও তখন বাবার সাথও ভুলে যাও আর তখন ক্লান্ত হয়ে যাও। তারপর বলবে ক্লান্ত হয়ে গেছি, এখন কি করবো! ক্লান্ত হয়ো না। যখন বাপদাদা তোমাদেরকে সদা সাথ দেওয়ার জন্য এসেছেন, পরমধাম ছেড়ে কেন এসেছেন? ঘুমাবার সময়, ঘুম থেকে ওঠার সময়, কর্ম করার সময়, সেবা করার সময়, সাথ দেওয়ার জন্যই তো এসেছি। ব্রহ্মা বাবাও তোমাদের সবাইকে সহযোগ দেওয়ার জন্য অব্যক্ত হয়েছেন। ব্যক্ত রূপের তুলনায় অব্যক্ত রূপে সহযোগ দেওয়ার গতি খুব তীব্র হয়, এইজন্য ব্রহ্মা বাবাও নিজের বতন চেঞ্জ করেছেন। তো শিববাবা আর ব্রহ্মা বাবা দুজনে প্রত্যেক সময়ে তোমাদের সবাইকে সহযোগ দেওয়ার জন্য সদা হাজির থাকেন। তোমরা চিন্তা করলে - ‘বাবা’, আর তৎক্ষণাৎ তাঁর সহযোগ অনুভব করলে। যদি সেবা, সেবা, সেবা কেবল সেটাই স্মরণে থাকে, বাবাকে কিনারাতে বসে দেখার জন্য আলাদা করে দাও তো বাবাও সাক্ষী হয়ে দেখেন, দেখেন যে বাচ্চারা কতক্ষণ একা একা কাজ করতে পারে। তথাপি আসতে তো এখানেই হবে। তাই বাবার সাথ ত্যাগ করবে না। নিজের অধিকার আর প্রেমের সূক্ষ্ম সূতোর দ্বারা বেঁধে রাখো। কিন্তু তোমরা বাঁধন আলগা করে ফেলো। স্নেহকে ঢিলা করে ফেলো, অধিকারকে কিছু সময়ের জন্য স্মৃতি থেকে কিনারা করে দাও। তো এইরকম করবে না। যখন সর্বশক্তিমান সাথে থাকার অফার করছেন তো এইরকম অফার সমগ্র কল্পে আর পাওয়া যাবে? পাওয়া যাবে না, না? তো বাপদাদাও সাক্ষী হয়ে দেখেন, আচ্ছা দেখি কতক্ষণ একা একা করতে পারে!

তো সঙ্গমযুগের সুখ আর ভাগ্যকে ইমার্জ রাখো। বুদ্ধি বিজি থাকে তাই না, তো বিজি থাকার কারণে স্মৃতি মার্জ হয়ে যায়। তোমরা চিন্তা করো সারাদিনে যে কাউকে জিজ্ঞেস করবে যে বাবা স্মরণে থাকে নাকি বাবাকে স্মরণ করতে ভুলে যাও? তখন কি বলবে? না। এটা তো রাইট যে স্মরণে থাকে কিন্তু ইমার্জ রূপে থাকে নাকি মার্জ থাকে? স্থিতি কেমন থাকে? ইমার্জ রূপের স্থিতি নাকি মার্জ রূপের স্থিতি, এতে কি পার্থক্য আছে? ইমার্জ রূপে কেন স্মরণ থাকে না? ইমার্জ রূপের নেশা, শক্তি, সহযোগ, সফলতা হলো অনেক বড়। স্মরণ তো ভুলতে পারবে না কারণ এই সম্পর্ক এক জন্মের নয়, যদিও শিববাবা সত্যযুগে সাথে থাকবেন না কিন্তু সম্পর্ক তো এটাই থাকবে, তাই না! ভুলতে পারবে না, এটা হলো রাইট। হ্যাঁ, কেউ বিঘ্নের বশীভূত হয়ে যায় তো ভুলেও যায় কিন্তু যখন ন্যাচারাল রূপে থাকে তখন ভোলে না, কিন্তু মার্জ থাকে। এইজন্য বাপদাদা বলেন - বারংবার চেক করো যে সাথের অনুভব মার্জ রূপে আছে নাকি ইমার্জ? ভালোবাসা তো আছেই। ভালোবাসা ভেঙে যেতে পারে? ভেঙে যেতে পারে না, তাই না? তো ভালোবাসা যখন ভেঙে যেতে পারেনা তো ভালোবাসার লাভ নাও। লাভ নেওয়ার কায়দা শেখো।

বাপদাদা দেখছেন যে ভালোবাসাই বাবার বানিয়েছে। ভালোবাসাই মধুবন নিবাসী বানিয়ে দেয়। যদিও তোমরা নিজেদের স্থানে যেভাবেই থাকো, যতই পরিশ্রম করো কিন্তু তথাপি মধুবনে ঠিকই পৌঁছে যাও। বাপদাদা জানেন, দেখেন, কোনও বাচ্চার কলিযুগী সারকামস্ট্যান্স হওয়ার কারণে টিকিট নেওয়াও মুশকিল হয় কিন্তু ভালোবাসা পৌঁছেই দেয়। এইরকম না? ভালোবাসায় পৌঁছে যাও কিন্তু সারকামস্ট্যান্স তো দিন-দিন বৃদ্ধি হতেই থাকবে। সত্য হৃদয়ে সাহেব রাজী তো থাকেন-ই। কিন্তু স্থুল সহযোগও কোথাও না কোথাও যেকরেই হোক পেয়ে যাবে। ডবল ফরেনার্স হও কিম্বা ভারতবাসী, সকলের জন্যই বাবার এই ভালোবাসা সারকামস্ট্যান্সের দেওয়াল পার করিয়ে দেয়। এইরকমই হয় তাই না? নিজের-নিজের সেন্টারে দেখো তো এইরকম বাচ্চারাও আছে যারা এখান থেকে যায়, চিন্তা করে জানিনা পরের বছর আসতে পারবো নাকি পারবো না কিন্তু ঠিকই পৌঁছে যায়। এটাই হলো ভালোবাসার প্রমাণ। আচ্ছা।

আজ হোলী পালন করেছো? পালন করেছো হোলী? বাপদাদা তো হোলী পালনকারী হোলীহংসদেরকে দেখছেন। সকল বাচ্চার একটাই টাইটেল হলো হোলীয়েস্ট। দ্বাপর থেকে শুরু করে কোনও ধর্মাত্মা বা মহাত্মা সবাইকে হোলীয়েস্ট বানাতে পারেনি। নিজে হয় কিন্তু নিজের ফলোয়ার্সকে, সাথীদেরকে হোলীয়েস্ট, পবিত্র বানায়নি আর এখানে পবিত্রতা হলো ব্রাহ্মণ জীবনের মুখ্য আধার। এই পড়াশোনা কেমন? তোমাদের স্লোগানই হলো - “পবিত্র হও-যোগী হও”। স্লোগান আছে তাই না? পবিত্রতাই হলো মহানতা। পবিত্রতাই হলো যোগী জীবনের আধার। কখনও কখনও বাচ্চারা অনুভব করে যে যদি চলতে-চলতে মন্সাতে অপবিত্রতা অর্থাৎ ওয়েস্ট বা নেগেটিভ, পরিচিন্তনের সংকল্প চলতে থাকে তো যতখানি পাওয়ারফুল যোগ করতে চায়, কিন্তু হয় না। কেননা অল্প একটু অংশমাত্রও সংকল্পেও কোনও প্রকারের অপবিত্রতা রয়েছে ।তো যেখানে অপবিত্রতার অংশ আছে সেখানে পবিত্র বাবার স্মরণ যা রয়েছে, যেমন রয়েছে, সেইরকম আসতে পারে না। যেরকম দিন ও রাত একসাথে থাকে না। এইজন্য বাপদাদা বর্তমান সময়ে পবিত্রতার উপরে বার বার অ্যাটেনশন দিচ্ছেন। কিছু সময় পূর্বে বাপদাদা কেবলমাত্র কর্মে অপবিত্রতার জন্য ইশারা দিতেন কিন্তু এখন সময় সম্পূর্ণতার সমীপে আসছে। সেইজন্য মন্সাতেও অপবিত্রতার অংশ ধোঁকা দিয়ে দেবে। তো মন্সা, বাচা, কর্মণা, সম্বন্ধ-সম্পর্ক সবকিছুতেই পবিত্রতা অতি আবশ্যক। মন্সাকে হালকা করবে না কারণ মন্সা বাইরে থেকে দেখা যায় না কিন্তু মন্সা অত্যন্ত ধোঁকা দেয়। ব্রাহ্মণ জীবনের যে আন্তরিক উত্তরাধিকার সদা সুখ স্বরূপ, শান্ত স্বরূপ, মনের সন্তুষ্টি, তার অনুভব করার জন্য মনের পবিত্রতা চাই। বাইরের সাধন দ্বারা বা সেবার দ্বারা নিজেই নিজেকে খুশী করা - এটাও হলো নিজেকে ধোঁকা দেওয়া।

বাপদাদা দেখেন কখনও কখনও বাচ্চারা নিজেকে এই আধারে ভালো মনে করে, খুশী হয়ে গিয়ে নিজেকেই ধোঁকা দিয়ে দেয়, দিচ্ছেও। দিয়ে দেয় আর দিচ্ছেও, এটাও হলো এক গুপ্ত রহস্য। কি হয়, বাবা হলেন দাতা, তােমরা হলে দাতার বাচ্চা, তো সেবা যদি যুক্তিযুক্ত নাও হয়, মিক্স থাকে, কিছু স্মরণে আর কিছু বাইরের সাধন বা খুশীর আধারে হয়, হৃদয়ের আধারে নয় কিন্তু বুদ্ধির আধারে সেবা করে তো সেবার প্রত্যক্ষ ফল তাদেরও প্রাপ্ত হয়; কেননা বাবা হলেন দাতা আর তারা এটাতেই খুশী থাকে যে বাঃ আমি তো ফল পেয়ে গেছি, আমাদের সেবা খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু তাদের মনের সন্তুষ্টতা সদাকালের জন্য থাকে না আর আত্মারা যোগযুক্ত পাওয়ারফুল স্মরণের অনুভব করতে পারে না, তার থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তবে কিছুই প্রাপ্ত হবেনা, তা কিন্তু নয়। কিছু না কিছু প্রাপ্ত হয় কিন্তু জমা হয় না। উপার্জন করলে, খেলে আর শেষ। এইজন্য এই বিষয়েরও অ্যাটেনশন রাখবে। সেবা খুব ভালো করেছে, ফলও খুব ভালো প্রাপ্ত হয়েছে, তো খেলে আর শেষ। জমা কী হল? ভালো সেবা করেছো, ভালো রেজাল্ট হয়েছে, কিন্তু সেই সেবার ফল পেয়ে গেলে, জমা হয় না। এইজন্য জমা করার বিধি হলো - মন্সা, বাণী, কর্মে - পবিত্রতা। ফাউন্ডেশন হলো পবিত্রতা। সেবারও ফাউন্ডেশন হলো পবিত্রতা। স্বচ্ছ হবে, সাফ হবে। আর কোনও ভাব মিক্স থাকবে না। ভাবেও পবিত্রতা, ভাবনাতেও পবিত্রতা। হোলীর অর্থই হলো - পবিত্রতা। অপবিত্রতাকে পোড়াতে হবে। এইজন্য প্রথমে পোড়ায় তারপর উৎসব পালন করে আর তারপর পবিত্র হয়ে সংস্কারের মিলন করে। তো হোলীর অর্থই হলো - প্রথমে পোড়ানো, তারপর পালন করা। বাইরের লোকেরা তো কোলাকুলি করে কিন্তু এখানে হলো সংস্কার মিলন, এটাই হলো মঙ্গল মিলন। তো এইরকম মিলন করেছো নাকি কেবল ডান্স করেছো? গোলাপজল দিয়েছো? সেটাও খুব ভালো, আরও দাও। বাপদাদা খুশী হন, গোলাপজল দেওয়ার হলে দাও, ডান্স করতে চাইলে করো কিন্তু সদা ডান্স করো। কেবল ৫-১০ মিনিটের ডান্স নয়। একে-অপরের মধ্যে গুণের ভায়ব্রেশন ছড়িয়ে দেওয়া - এটাই হলো গোলাপজল দেওয়া। আর পোড়ানোকে তো তোমরা জানোই, কি পোড়াতে হবে! এখনও পর্যন্ত পোড়াতে থাকো। প্রত্যেক বছরই হাত তোলে, ব্যস্ দৃঢ় সংকল্প হয়ে গেলো। বাপদাদা খুশী হন, সাহস তো রাখে। তো সাহসের জন্য বাপদাদা অভিনন্দনও দেন। সাহস রাখা হল প্রথম কদম। কিন্তু বাপদাদার শুভ আশা কী? সময়ের ডেট দেখবে না। ২০০০ এ হবে, ২০০১ এ হবে, ২০০৫ এ হবে, এসব চিন্তা করবে না। চলো, এভারেডি নাও হও, এটাও বাপদাদা ছেড়ে দিচ্ছেন, কিন্তু চিন্তা করো অনেক সময়ের সংস্কারও তো চাই তাই না! তোমরাই শুনিয়ে থাকো যে অনেক সময়ের পুরুষার্থ, অনেক সময়ের রাজ্য-অধিকারী বানিয়ে দেয়। যদি অন্তিম সময়ে দৃঢ় সংকল্প করবে, তো সেটা অনেক সময়ের হল নাকি অল্প সময়ের? কোন্ সময়টিকে গণনা করবে? অল্প সময়ের হবে তাই না! তো অবিনাশী বাবার থেকে উত্তরাধিকার রূপে কি নিয়েছো? অল্প সময়ের? এটা ভালো লাগে? লাগে না, তাই না! তো অনেক সময়ের অভ্যাস চাই, কতটা সময় বাকি আছে সেই চিন্তা করবে না, যত যত অনেক সময়ের অভ্যাস থাকবে, তত অন্তিমকালেও ধোঁকা খাবে না। অনেক সময়ের অভ্যাস না থাকলে বর্তমানে অনেক সময়ের সুখ, অনেক সময়ের শ্রেষ্ঠ স্থিতির অনুভবের দ্বারাও বঞ্চিত হয়ে যায়। এইজন্য কি করতে হবে? অনেক সময় ধরে করতে হবে? যদি কারো বুদ্ধিতে ডেট-এর অপেক্ষা থাকে তো অপেক্ষা করবে না, পুরুষার্থ করো। অনেক সময়ের পুরুষার্থ করো। ডেট-কে তোমাদেরকেই এগিয়ে আনতে হবে। সময় তো এখনও এভারেডি আছে, কালও হতে পারে কিন্তু সময় তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা সম্পন্ন হও তো সময়ের পর্দা অবশ্যই সরে যাবে। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। রাজ্য-অধিকারী তো তৈরী হয়েই আছো তাই না? সিংহাসন খালি যেন না থাকে, তাই না! তোমরা কি একা একাই বিশ্বরাজন সিংহাসনে বসবে! এটা শোভনীয় হবে কী? রয়্যাল ফ্যামিলী চাই, প্রজা চাই, সব চাই। কেবল বিশ্বরাজন সিংহাসনে বসে যাবে, দেখতে থাকবে - কোথায় গেল আমার রয়্যাল ফ্যামিলী। এইজন্য বাপদাদার একটাই শুভ আশা হল যে সকল বাচ্চা, সে নতুন হোক বা পুরানো, যারা নিজেদেরকে ব্রহ্মাকুমারী বা ব্রহ্মাকুমার বলে পরিচয় দেয়, সে মধুবন নিবাসী হোক বা বিদেশ নিবাসী বা ভারত নিবাসী - প্রত্যেক বাচ্চা অনেক সময়ের অভ্যাস করে অনেক সময়ের অধিকারী হবে। কখনও কখনও নয়। পছন্দ হয়েছে? এক হাতের তালি বাজাও। পিছনে যারা বসেছে তারা খুবই হুশিয়ার আছে, অ্যাটেনশন দিয়ে শুনছে। বাপদাদা পিছনের বাচ্চাদেরকে নিজের সামনে দেখছেন। সামনের বাচ্চারা তো সামনেই আছে। (মেডিটেশন হল্-এ বসে মুরলী শুনছে) নীচে যারা বসেছে তারা মাথার মুকুট হয়ে বসে আছে। তারাও তালি বাজাচ্ছে। নীচে বসা বাচ্চাদের ত্যাগের ভাগ্য তো প্রাপ্ত হবেই। তোমাদের সম্মুখে বসার ভাগ্য হয়েছে আর তাদের ত্যাগের ভাগ্য জমা হচ্ছে। আচ্ছা বাপদাদার একটা আশা শুনেছো! পছন্দ হয়েছে তাই না! এবার সামনের বছর কী দেখবে? এইরকমভাবেই আবার হাত ওঠাবে! হাত যদিও তোলো, দুই হাত তোলো কিন্তু তার সাথে মনের হাতও তোলো। দৃঢ় সংকল্পের হাত সবসময়ের জন্য তোলো।

বাপদাদা এক-একজন বাচ্চার ললাটে সম্পূর্ণ পবিত্রতার ঝলমলে মণি দেখতে চাইছেন। নয়নে পবিত্রতার ঝলক, পবিত্রতায় উজ্জ্বল দুই নয়নের মণি, আত্মিকতায় ঝলমল করা নয়ন দেখতে চাইছেন। বাণীতে মধুরতা, বিশেষ অমূল্য বাণী শুনতে চান। কর্মে সন্তুষ্টতা, নির্মাণতা সদা দেখতে চান। ভাবনাতে - সদা শুভ ভাবনা আর ভাবে সদা আত্মিক ভাব, ভাই-ভাইএর ভাব। সদা তোমাদের ললাট থেকে লাইটের, ফরিস্তাভাবের মুকুট দেখা যাবে। দেখা যাবে অর্থাৎ অনুভব হবে। এইরকম সুজ্জিত মূর্তি দেখতে চাইছেন। আর এইরকম মূর্তিই শ্রেষ্ঠ পূজ্য হবে। তারা তো তোমাদের জড় চিত্র বানাবে কিন্তু বাবা চৈতন্য চিত্র দেখতে চাইছেন।

আচ্ছা - চারদিকের সদা বাপদাদার সাথে থাকা, নিকটে থাকা সদা সাথী, সদা অনেক সময়ের পুরুষার্থ দ্বারা অনেক সময়ের সঙ্গমযুগী অধিকার আর ভবিষ্যতের রাজ্য-অধিকার প্রাপ্তকারী অতি সেন্সীবল্ আত্মাদেরকে, সদা নিজেকে শক্তি আর গুণের দ্বারা সজ্জিত রাখা, বাবার আশার দীপক আত্মাদেরকে, সদা নিজেকে হোলিয়েস্ট আর হাইয়েস্ট স্থিতিতে স্থিত রাখা বাবার সমান অতি স্নেহী আত্মাদেরকে বাপদাদার স্মরণের স্নেহ সুমন আর নমস্কার। বিদেশ বা দেশে দূরে বসে থেকেও সম্মুখে অনুভবকারী সকল বাচ্চাদেরকে বাপদাদার অনেক-অনেক-অনেক স্মরণের স্নেহ-সুমন ।

বরদান:-
সময়কে শিক্ষক বানানোর পরিবর্তে বাবাকে শিক্ষক বানানো মাস্টার রচয়িতা ভব

কোনো কোনো বাচ্চার মধ্যে সেবার উৎসাহ আছে কিন্তু বৈরাগ্য বৃত্তির অ্যাটেনশন নেই, এতে আলস্য রয়েছে । চলছে... হচ্ছে... হয়ে যাবে... সময় এলে ঠিক হয়ে যাবে... এইরকম চিন্তা করা অর্থাৎ সময়কে নিজের শিক্ষক বানানো। বাচ্চারা বাবাকেও আশ্বস্ত করে যে - চিন্তা করো'না, সময় এলে ঠিক হয়ে যাবে, করে নেবো। উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবো। কিন্তু তোমরা হলে মাস্টার রচয়িতা, সময় হল তোমাদের রচনা। রচনা মাস্টার রচয়িতার শিক্ষক হবে এটা শোভা দেয় না।

স্লোগান:-
বাবার পালনার রিটার্ন হলো - স্ব কে এবং সবাইকে পরিবর্তন করতে সহযোগী হওয়া।