17.01.2023
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমরা এই পাঠশালাতে এসেছো নিজেদের উচ্চ ভাগ্য নির্মাণ করতে, তোমাদের নিরাকার বাবার
কাছে পড়াশোনা করে রাজাদেরও রাজা হতে হবে"
প্রশ্নঃ -
অনেক বাচ্চারা
সৌভাগ্যশালী হয়, কিন্তু হয়ে পড়ে দুর্ভাগ্যশালী, কীভাবে?
উত্তরঃ
সেই বাচ্চারাই
ভাগ্যশালী হয়, যাদের কোনো কর্মবন্ধন থাকেনা অর্থাৎ তারা কর্ম বন্ধনমুক্ত হয়।
কিন্তু তবুও যদি পড়ায় অ্যাটেনশন না দেয় বুদ্ধি এদিকে ওদিকে ঘুরতে থাকে, অদ্বিতীয়
পিতা যার থেকে এত উত্তরাধিকার পাওয়া যায়, তাঁকে স্মরণ করে না তখন সৌভাগ্যশালী
হয়েও দুর্ভাগ্যশালী হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ -
শ্রীমতের মধ্যে
কোন্ কোন্ রস ভরপুর হয়ে রয়েছে?
উত্তরঃ -
শ্রীমতই হলো সেটা যার মধ্যে মাতা পিতা টিচার গুরুর মত একত্রিত হয়ে রয়েছে। শ্রীমৎ
যেন স্যাকারিন, যার মধ্যে সব রস ভরপুর হয়ে রয়েছে।
গীতঃ-
সৌভাগ্যকে
জাগিয়ে এসেছি....
ওম্ শান্তি ।
শিব ভগবানবাচ,
মানুষ যখন গীতা শোনায় তখন শ্রীকৃষ্ণের নাম নিয়ে শুনিয়ে থাকে। এখানে যা শোনানো হয়ে
থাকে, বলা হয় শিব ভগবানুবাচ। নিজেও বলতে পারেন শিব ভগবানুবাচ, কেননা শিব বাবা স্বয়ং-ই
বলে থাকেন। দুজনে একত্রিত হয়েও বলতে পারেন। বাচ্চারা তো দুজনেরই। পুত্র আর কন্যারা
দুই-ই বসে আছে। তাই বলে থাকেন -- হে বাচ্চারা, বুঝতে পারো কে পড়ান? বলবে বাপদাদা
পড়ান। বাবা বড়কে, দাদা ছোটকে অর্থাৎ ভাইকে বলা হয়ে থাকে। তাই বাপদাদা একত্রিত বলা
হয়ে থাকে। এখন বাচ্চারাও জানে যে আমরা হলাম স্টুডেন্টস্। স্কুলের স্টুডেন্টরা বসেই
রয়েছে ভাগ্য তৈরির জন্য যে আমরা পড়াশোনা করে অমুক পরীক্ষায় পাশ করবো। ওই জাগতিক
পরীক্ষা তো অনেক হয়ে থাকে। বাচ্চারা, এখানে তোমাদের হৃদয়ে রয়েছে যে আমাদের অসীম
জগতের বাবা পরমপিতা পরমাত্মা পড়িয়ে থাকেন। তোমরা বাবা এঁনাকে (ব্রহ্মাকে) বলো না।
নিরাকার বাবা বোঝান, তোমরা জানো যে আমরা রাজযোগ শিখে রাজার-রাজা হয়ে যাই। রাজাও হই
আবার রাজার-রাজাও হয়ে যাই। যারা হলেন রাজার-রাজা (মহারাজা) তাদের রাজারা পূজা করে।
এই রেওয়াজ ভারত ভূখণ্ডেই রয়েছে। অপবিত্র রাজারা পবিত্র রাজাদের পূজা করে। বাবা
বুঝিয়েছেন যে মহারাজা অগাধ ঐশ্বর্যশালীদের বলা হয়ে থাকে। রাজারা (এনাদের থেকে)
ছোট হয়। আজকাল কোনো কোনো রাজাদের মহারাজাদের থেকেও অধিক পরিমাণে প্রপার্টি থাকে।
কোনো কোনো ধনবানেদের রাজাদের থেকেও অধিক প্রপার্টি থাকে। ওখানে এমন আন-ল'ফুল (বেনিয়মের)
কিছু হয় না। ওখানে সবকিছু নিয়মমাফিক হবে। বড় মহারাজাদের কাছে অনেক প্রপার্টি
থাকবে। বাচ্চারা, তোমরা তাহলে জানো যে অসীম জগতের বাবা বসে থেকে আমাদের পড়িয়ে
থাকেন। পরমাত্মা ব্যতীত রাজার-রাজা, স্বর্গের মালিক কেউই বানাতে পারে না। স্বর্গের
রচয়িতা হলেনই নিরাকার বাবা। ওঁনার নামও গায়ন করা হয় যে হেভেনলী গডফাদার। বাবা
পরিষ্কারভাবে বোঝান যে বাচ্চারা আমি তোমাদের পুনরায় স্বরাজ্য প্রদান করে রাজার
রাজায় পরিণত করি। এখন তোমরা জানো যে আমরা সৌভাগ্য তৈরী করে (জাগরিত করে) এসেছি,
অসীম জগতের বাবার থেকে রাজার রাজায় পরিণত হতে। কত খুশির কথা। অনেক বড় পরীক্ষা।
বাবা বলেন শ্রীমৎ অনুসারে চলো, এতে মাতা-পিতা, টিচার, সদ্গুরু ইত্যাদি সকলের মৎ
একত্রিত রয়েছে। সকলের স্যাকারিন (মিষ্টতা) এর মধ্যে রয়েছে। সকলের রস একের মধ্যে
ভরা আছে। সকলের প্রিয়তম একজনই। পতিত থেকে পবিত্রে পরিণতকারী, উনি বাবা-ই হয়ে
গেলেন। গুরু নানক ওঁনারই মহিমা করেছেন, সেইজন্য ওঁনাকে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।
প্রথমে তিনি নিজের কাছে নিয়ে যাবেন তারপর পবিত্র দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেবেন। কেউ এলে
তাকে বোঝাতে হবে -- এ হলো গডলী কলেজ। এ হলো ভগবানুবাচ, স্কুলে তো কখনো ভগবানবাচ বলবে
না। ভগবান হলেনই নিরাকার জ্ঞানের সাগর মনুষ্য সৃষ্টির বীজরূপ..... বাচ্চারা,
তোমাদেরকে বসে পড়িয়ে থাকি। এ হলো গডলী নলেজ। সরস্বতী কে গডে'স অফ নলেজ (বিদ্যার
দেবী) বলা হয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই গডলী নলেজ থেকে গড-গডে'স (দেবী-দেবতা) তৈরি হবে।
ব্যারিস্টার হওয়ার নলেজ থেকে ব্যারিস্টারই হবে। এ হলো গডলী নলেজ। সরস্বতীকে গড-ই
নলেজ দিয়েছেন। সেইজন্য যেমন সরস্বতী হলেন গডে'স অফ নলেজ, তেমনই তোমরা বাচ্চারাও।
সরস্বতীর তো অনেক সন্তান, তাই না ! কিন্তু প্রত্যেককে গডেজ অফ নলেজ বলা হবে, এমনটা
হতে পারে না। এই সময় নিজেকে গডেজ বলতে পারবে না। ওখানেও তো দেবী-দেবতাই বলবে। গড
নলেজ অবশ্যই দিয়ে থাকেন। পড়াও(জ্ঞান) এমনভাবেই ধারণ করিয়ে থাকেন। ইনি পদমর্যাদাও
দিয়ে দেন অনেক বড় (উচ্চ)। এছাড়া দেবতারা তো গড-গডেজ হতে পারে না। এই মাতা-পিতাও
তো গড-গডেজেরই মতন, কিন্তু হয় তো না, তাই না! নিরাকার পিতাকেই গডফাদার বলা হবে।
এঁনাকে (সাকারকে) থোড়াই গডফাদার বলা হবে! এ হলো অত্যন্ত গোপন (রহস্যপূর্ণ) কথা।
আত্মা এবং পরমাত্মার রূপ আর তারপর সম্বন্ধ, কত রহস্য পূর্ণ (গুপ্ত) বিষয়। শরীরের
সম্পর্ক কাকা, চাচা, মামা ইত্যাদি হলো কমন (সাধারণ)। এ হলো আত্মিক সম্বন্ধ। বোঝানোর
জন্য পাকাপোক্ত যুক্তি চাই। মাতা পিতা শব্দের গায়ন করা হয় তাহলে অবশ্যই কোন অর্থ
রয়েছে, তাই না ! ওই শব্দটি অবিনাশী হয়ে যায়। ভক্তি মার্গেও চলে আসে।
বাচ্চারা, তোমরা জানো
যে আমরা স্কুলে বসে রয়েছি। পড়াচ্ছেন যিনি, তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর।
এঁনার(ব্রহ্মার) আত্মাও পড়ে থাকে। এই আত্মারও বাবা হলেন সে-ই পরমাত্মা, যিনি হলেন
সকলের বাবা, তিনি পড়িয় থাকেন। তিনি গর্ভতে তো আসবেন না তাহলে নলেজ কিভাবে পড়াবেন
(দেবেন)। তিনি আসেন ব্রহ্মার শরীরে। ওরা আবার ব্রহ্মার বদলে শ্রীকৃষ্ণের নাম দিয়ে
দিয়েছে। এও ড্রামায় রয়েছে। কিছু ভুল হোক তবেই তো বাবা এসে সেই ভুলকে কারেক্ট করে
নির্ভুল (ত্রুটিহীন) করবে। নিরাকারকে না জানার কারণেই বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। বাবা
বুঝিয়ে থাকেন যে আমি হলাম অসীম জগতের বাবা তোমাদের অসীম জগতের উত্তরাধিকার দেবো।
লক্ষ্মী-নারায়ণ স্বর্গের মালিক কীভাবে হয়েছে, তা কেউ জানে না। অবশ্যই কেউ তো কর্ম
শিখিয়েছিলেন, তাই না ! আর অবশ্যই তিনি বড়ই হবেন যে এত উচ্চ পদ প্রাপ্ত
করিয়েছিলেন। মানুষ কিছুই জানে না। বাবা কত প্রেমপূর্বক বুঝিয়ে থাকেন, কত বড়
অথরিটি (সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী) তিনি। তিনি হলেন সমগ্র দুনিয়াকে পতিত থেকে
পবিত্রে পরিণতকারী মালিক। বুঝিয়ে থাকেন যে এ হলো পূর্ব-নির্ধারিত ড্রামা। তোমাদের
চক্রে আবর্তিত হতে হয়। এই রচনাকে কেউই জানে না। আমরা কীভাবে ড্রামার অ্যাক্টার্স
হলাম, এই চক্র কীভাবে আবর্তিত হয়, দুঃখধামকে সুখধামে কে পরিণত করেন, এ'সব তোমরা
জানো। তোমাদের সুখধামের জন্য পড়িয়ে থাকি। তোমরাই ২১ জন্মের জন্য সদা সুখী হয়ে
যাও, ওখানে আর কেউ যেতে পারে না। সুখধামে অবশ্যই স্বল্পসংখ্যক মানুষ থাকবে। বোঝানোর
জন্য পয়েন্টস অত্যন্ত ভালো হওয়া চাই। বলে থাকে যে বাবা আমরা তোমার কিন্তু পুরোপুরি
হতে সময় লাগে। কারোর কর্মবন্ধন তৎক্ষণাৎ মুক্ত হয়ে যায়, কারোর সময় লাগে। অনেকেই
তো এরকম ভাগ্যশালী, যাদের কর্মবন্ধন দূর হয়ে গেছে, তবুও পড়ায় অ্যাটেনশন দেয় না
তাই তাদেরকে বলা হয় দুর্ভাগ্যশালী। সন্তান, নাতি, পুতি ইত্যাদিদের মধ্যে বুদ্ধি চলে
যায়। এখানে তো একজনকেই স্মরণ করতে হবে। অত্যন্ত বড়রকমের (অগাধ) উত্তরাধিকার পাওয়া
যায়। তোমরা জানো যে আমরা রাজার-রাজা হয়ে যাই। পতিতরা কীভাবে রাজা হয় আর পবিত্ররা
কীভাবে রাজার-রাজা হয়, সেও বাবা-ই তোমাদের বুঝিয়ে থাকেন। আমি স্বয়ং এসে
রাজার-রাজা, স্বর্গের মালিক বানিয়ে দিই -- এই রাজযোগের দ্বারা। ওই পতিত রাজারা তো
দান করার জন্য (রাজা) হয়ে যায়। ওদের আমি এসে তৈরী করি নাকি ! ওরা অত্যন্ত দানী হয়।
দান করার জন্য রাজার কুলে জন্ম নেয়। আমি তো ২১ জন্মের জন্য তোমাদের সুখ দান করে
থাকি। ওরা তো এক জন্মের হয় সেও পতিত দুঃখী থাকে। আমি এসে বাচ্চাদের পবিত্র করি।
মানুষ মনে করে কেবল গঙ্গা স্নান করলেই পবিত্র হওয়া যায়, কত ধাক্কা খেতে থাকে।
গঙ্গা, যমুনা ইত্যাদির কত মহিমা করে থাকে। এখন এরমধ্যে মহিমার তো কোন কথাই নেই। জল
সাগরের থেকে আসে। এরকম তো অনেক নদী আছে। বিদেতেও মাটি খুঁড়ে বড় বড় নদী তৈরি করে,
এ আর বড় কথা কি। জ্ঞান সাগর আর জ্ঞান গঙ্গা কারা, সে তো জানেই না। শক্তিরা কি
করেছিল, কিছুই জানে না। বাস্তবে জ্ঞান গঙ্গা আর জ্ঞান সরস্বতী হলে এই জগদম্বা।
মানুষ তো জানেই না যেন ভীল (প্রাচীন জনজাতি, সামান্য কুল পেলেই মূল্যবান মণিও ফেলে
দিত) । একদমই বুদ্ধু, অবুঝ। বাবা এসে অবুঝকে কত সমঝদার করে দেন। তোমরা বলতে পারো যে
এনাদের রাজার-রাজা কে বানিয়েছেন। গীতাতেও রয়েছে, আমি রাজার-রাজা বানিয়ে থাকি।
মানুষ তো জানতো না। স্বয়ং আমিও জানতাম না। এই যে নিজেই হয়েছিল, এখন নেই, সে-ই জানে
না তাহলে অন্যেরা আর কি'করে জানবে। সর্বব্যপীর জ্ঞানে কিছুই নেই, যোগযুক্ত হবে কার
সাথে, ডাকবে কাকে ? স্বয়ং-ই ঈশ্বর তাহলে প্রার্থনা কার করবে ! অতি বিষ্ময়কর। অনেক
ভক্তি যারা করে তাদেরই মান হয়। ভক্তমালাও রয়েছে, তাই না! জ্ঞান হলো রুদ্র মালা। এ
হলো ভক্ত মালা, ও'টা হলো নিরাকারী মালা। সব আত্মারা ওখানেই থাকে। তার মধ্যেও প্রথম
নম্বরধারী আত্মা কে ? যিনি প্রথমে যান, সরস্বতীর আত্মা অথবা ব্রহ্মার আত্মা প্রথমে
পড়া করে থাকে। এ হলো আত্মার কথা। ভক্তি মার্গে সবই তো হলো শরীর-সম্বন্ধীয় কথা --
অমুক ভক্ত এইরকম, তাদের শরীরের নাম নেবে। তোমরা মানুষকে এভাবে বলবে না। তোমরা জানো
যে ব্রহ্মার আত্মা কি হয় ? তিনি গিয়ে শরীর ধারণ করে রাজার-রাজা হয়ে যান। আত্মা
শরীরে প্রবেশ করে রাজ্য করে থাকে। এখন তো রাজা নেই। রাজ্য তো আত্মাই করে, তাই না!
আমি হলাম রাজা, আমি হলাম আত্মা, আমি হলাম এই শরীরের মালিক। অহম্ আত্মা, শরীরের নাম
হলো শ্রীনারায়ণ, ধরায় পুনরায় রাজত্ব করবেন। আত্মাই শোনে আর ধারণ করে। আত্মায়
সংস্কার থাকে। তোমরা এখন জানো যে আমরা বাবার থেকে রাজত্ব নিচ্ছি শ্রীমৎ অনুসারে চলে।
বাপদাদা দুজনে মিলে বলেন - বাচ্চারা, দুজনেরই বাচ্চা বলার অধিকার রয়েছে। আত্মাকে
বলে -- নিরাকারী সন্তান, আমাকে অর্থাৎ বাবাকে স্মরণ করো। কেউ বলতে পারে না যে হে
নিরাকারী সন্তান, হে আত্মারা আমাকে অর্থাৎ বাবাকে স্মরণ করো। বাবা-ই আত্মাদের সঙ্গে
কথা বলেন। এমন তো বলেন না যে - পরমাত্মা, আমাকে অর্থাৎ পরমাত্মাকে স্মরণ করো। বলে
থাকেন - হে আত্মারা, আমাকে অর্থাৎ বাবাকে স্মরণ করো তাহলে এই যোগ অগ্নিতে তোমাদের
বিকর্ম বিনাশ হয়ে যাবে। এছাড়া গঙ্গা স্নানে কখনো কেউ পাপাত্মা থেকে পূণ্যাত্মা হতে
পারে না। গঙ্গা স্নান করে তারপর ঘরে এসে পাপ করতে থাকে। এই বিকারের কারণেই পাপ আত্মা
হয়ে যায়। এ'কথা কেউ বোঝেনা। এখন বাবা বুঝিয়ে থাকেন যে তোমাদের উপর রাহুর কঠিন
গ্রহণ লেগে রয়েছে। প্রথমে গ্রহণ হালকা ছিল। এখন দান করলে, তবেই গ্রহণ কাটবে।
প্রাপ্তি অনেক বড়। তাহলে পুরুষার্থও তো সেভাবেই করা উচিত, তাই না ! বাবা বলেন - আমি
তোমাদেরকে রাজার-রাজা বানিয়ে দিই, সেইজন্য আমাকে আর উত্তরাধিকারকে স্মরণ করো।
নিজের ৮৪ জন্মকে স্মরণ করো, সেইজন্য বাবা নামই রেখেছেন "স্বদর্শন চক্রধারী বাচ্চা"।
সেইজন্য স্বদর্শনের জ্ঞানও চাই, তাই না !
বাবা বুঝিয়ে থাকেন -
এই পুরানো দুনিয়া সমাপ্ত হয়ে যাবে। আমি তোমাদেরকে নতুন দুনিয়ায় নিয়ে চলি।
সন্ন্যাসীরা কেবল ঘর-পরিবারকে ভোলে, তোমরা সমগ্র দুনিয়াকেই ভুলে যাও। এই বাবা-ই বলে
থাকেন যে অশরীরী হও। আমি তোমাদের নতুন দুনিয়ায় নিয়ে যাই, সেই জন্য পুরোনো দুনিয়া,
পুরোনো শরীরের থেকে মমত্ব ত্যাগ করো। নতুন দুনিয়ায় পুনরায় তোমাদের নতুন শরীর
প্রাপ্ত হবে। দেখো, শ্রীকৃষ্ণকে শ্যাম-সুন্দর বলে। সত্য যুগে তিনি সুন্দর (গৌর
বর্ণের) ছিলেন, এখন অন্তিম জন্মে কালো হয়ে গেছেন। তাহলে বলা হবে - শ্যামই সুন্দর
হয়, আবার সুন্দর থেকে শ্যাম হয়ে যায় তাই না! তাই নাম রেখে দেওয়া হয়েছে
শ্যামসুন্দর। কালো করে দেয় পাঁচ বিকাররূপী রাবণ, তারপর সুন্দর করেন পরমপিতা
পরমাত্মা। চিত্রতেও দেখানো হয়েছে যে আমি পুরানো দুনিয়াকে লাথি মেরে সুন্দর (গৌর)
হতে চলেছি। সুন্দর আত্মাই স্বর্গের মালিক হয়। কালো (বিকারী) আত্মা নরকের মালিক হয়।
আত্মাই সুন্দর আর অসুন্দর (কালো, বিকারী) হয়। এখন বাবা বলেন তোমাদের পবিত্র হতে হবে।
ওই হঠযোগীরা তো পবিত্র হওয়ার জন্য অনেকধরণের মুদ্রার অভ্যাস করে। কিন্তু যোগ
ব্যতীত পবিত্র হতে পারবে না, তা না হলে সাজাভোগ করে পবিত্র হতে হবে। তাহলে বাবাকেই
স্মরণ করি না কেন ! আর পাঁচ বিকারকেও জয় করতে হবে। বাবা বলেন এই কাম-বিকারই
আদি-মধ্য-অন্ত দুঃখ দেয়। যে বিকারকে না জয় করতে পারবে, সে বৈকুন্ঠের রাজা হতে
পারবে নাকি! সেইজন্য বাবা বলে থাকেন যে দেখো আমি তোমাদেরকে কত ভালো কর্ম শিখিয়ে
থাকি - বাবা, শিক্ষক, সদ্গুরু রূপে। যোগবলের দ্বারা বিকর্ম বিনাশ করিয়ে বিকর্মাজিৎ
রাজায় পরিণত করি। বাস্তবে সত্যযুগের দেবী-দেবতাদেরকেই বিকার্মাজিৎ বলা হয়ে থাকে।
ওখানে বিকর্ম হয় না। বিকর্মাজীৎ আর বিক্রম সম্বৎ আলাদা আলাদা। এক তো রাজা বিক্রমও
এসে চলে গেছেন আর বিকর্মাজিৎ রাজাও এসে চলে গেছেন। আমরা এখন বিকর্মকে জয় করছি।
তারপর দ্বাপর থেকে আবার নতুন করে বিকর্ম শুরু হবে। তাই নাম রেখে দেওয়া হয়েছে রাজা
বিক্রম (বিক্রমাদিত্য)। দেবতারা হলেন বিকর্মাজিৎ। এখন আমরা তেমনই (দেবতা) হতে চলেছি,
যখন বাম-মার্গে চলে আসব তখন বিকর্মের খাতা শুরু হবে। এই বিকর্মের খাতা পরিস্কার করে
পুনরায় আমরা বিকর্মাজিৎ হই। ওখানে কোনো বিকর্ম হয় না। সেইজন্য বাচ্চাদের এই নেশা
থাকা উচিত যে আমরা এখানেই উচ্চ ভাগ্য তৈরি করে নিই। এ হলো বড়র থেকেও বড় সৌভাগ্য
তৈরী করার পাঠশালা। সৎসঙ্গে সৌভাগ্য গঠনের কথা থাকেনা। সব সময় পাঠশালাতেই সৌভাগ্য
গঠিত হয়ে থাকে। তোমরা জানো যে আমরাই নর থেকে নারায়ণ অথবা রাজার-রাজা হয়ে যাব।
অপবিত্র রাজারা অবশ্যই পবিত্র রাজাদের পূজন করে। আমি তোমাদের পবিত্র করি। পতিত
দুনিয়াতে তো রাজ্য করবে না। আচ্ছা!
মিষ্টি মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মারূপী বাবা তাঁর আত্মারূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
বুদ্ধিতে স্বদর্শন-চক্রের জ্ঞানকে রেখে, রাহুর গ্রহণ থেকে মুক্ত হতে হবে। শ্রেষ্ঠ
কর্ম এবং যোগবলের দ্বারা বিকর্মের খাতা মিটিয়ে পরিস্কার করে বিকর্মাজিৎ হতে হবে।
২ ) নিজের উচ্চ
সৌভাগ্যকে গঠনের জন্য পড়াশোনার উপরে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হবে।
বরদান:-
বাহ্যমুখী (জাগতিক) রসের আকর্ষণের বন্ধন থেকে মুক্ত থাকা জীবনমুক্ত ভব
বাহ্যমুখতা অর্থাৎ
ব্যক্তির ভাব-স্বভাব এবং ব্যক্ত ভাবের ভাইব্রেশন, সংকল্প, বাণী আর
সম্বন্ধ-সম্পর্কের দ্বারা একে-অপরকে ব্যর্থের দিকে চালনা করে। সদা কোনো না কোনো
প্রকারের ব্যর্থ-চিন্তনে থাকে, আন্তরিক সুখ শান্তি এবং শক্তির থেকে দূরে থাকে.....
বাইরের দিক থেকেও এমন বাহ্যমুখতার রস ভীষণভাবে আকর্ষণ করে, সেই জন্য প্রথমেই এর উপরে
কাঁচি চালাও। এই রসই সুক্ষ্ম-বন্ধন হয়ে সফলতার লক্ষ্য থেকে দূর করে দেয়, যখন এই
বন্ধনগুলি থেকে মুক্ত হয়ে যাবে, তখনই বলা হবে জীবনমুক্ত।
স্লোগান:-
যে
ভালো-মন্দ কর্ম সম্পাদনকারীদের প্রভাবের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সাক্ষী (দ্রষ্টা) বা
দয়ালু হয়, সে-ই তপস্বী।