19-10-2023 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
03-04-19 মধুবন
'‘সেবার সাথে সাথে অসীম বৈরাগ্য বৃত্তির দ্বারা
পুরানো এবং ব্যর্থ সংস্কার গুলির থেকে মুক্ত হও"
আজ, অসীম জগতের বাবা অসীম জগতের আপন সহযোগী সাথীদের দেখছেন। চতুর্দিকের সদা সহযোগী
বাচ্চারা, সদা বাবার হৃদয়ে হৃদয়-সিংহাসনাসীন তোমরা সব বাচ্চার কত সিংহাসন রয়েছে!
কিন্তু নিরাকার বাবার অকাল তখতও নেই! তাইতো, বাপদাদা তখতাসীন বাচ্চাদের দেখে সদা
প্ৰফুল্ল থাকেন - বাঃ আমার তখতাসীন বাচ্চারা! বাচ্চারা বাবাকে দেখে খুশি হয়, তোমরা
সবাই বাপদাদাকে দেখে খুশি হও কিন্তু বাপদাদা কত বাচ্চাকে দেখে খুশি হন, কারণ
প্রত্যেক বাচ্চা বিশেষ আত্মা। যদি লাস্ট নম্বরও হয় কিন্তু তবুও লাস্ট হয়েও কোটির
মধ্যে কয়েক, কয়েকের মধ্যে কেউ-এর বিশেষ লিস্টে আছে। সেইজন্য প্রত্যেক বাচ্চাকে দেখে
বাবার অধিক খুশি হয়, নাকি তোমাদের হয়? (উভয়ের) বাবার কত বাচ্চা আছে! যত বাচ্চা ততো
খুশি আর তোমাদের শুধু ডবল খুশি, ব্যস্। পরিবারেরও খুশি থাকে তোমাদের, বাবার খুশি
কিন্তু সদাকালীন আর তোমাদের খুশি সদাকাল থাকে নাকি কখনো উপর-নিচে হয়?
বাপদাদা বোঝেন যে, ব্রাহ্মণ জীবনের শ্বাস হলো খুশি। খুশি নেই তো ব্রাহ্মণ জীবন নয়
আর অবিনাশী খুশি, কখনো-কখনোর নয়, পার্সেন্টেজের নয়। খুশি তো খুশিই। আজ ৫০% খুশি,
কাল ১০০% , তাহলে তো জীবনের শ্বাস উপর-নিচে হয়, হয় তো না! বাপদাদা আগেও বলেছিলেন
যে, শরীর চলে যাক কিন্তু খুশি যেন না যায়। তো এই পাঠ সদা পাকা নাকি অল্প অল্প কাঁচা
আছে? সদা আন্ডারলাইন থাকে? যারা কখনো -কখনোর তারা কী হবে? যারা সদা খুশিতে থাকে তারা
পাস উইথ অনার এবং কখনো কখনোর খুশিতে যারা থাকে তাদেরকে ধর্মরাজপুরী পাস করে (মধ্য
দিয়ে) যেতে হবে। যারা পাস উইথ অনার তারা এক সেকেন্ডে বাবার সঙ্গে যাবে, থামবে না।
তো তোমরা সবাই কে? সঙ্গে চলার নাকি থেমে থাকার? (সঙ্গে চলার) এ'রকম পার্ট রয়েছে?
কেননা, ডায়মন্ড জুবিলী বর্ষে বাপদাদার প্রত্যেক বাচ্চার প্রতি কী শুভ আশা আছে, সেটা
তোমরা জানো তো না?
বাপদাদা সব বাচ্চার চার্ট দেখেছেন। তা'তে কী দেখেছেন, দেখেছেন যে বর্তমান সময়
অনুসারে একটা বিষয়ে বিশেষভাবে আরও অ্যাটেনশন প্রয়োজন। সেবাতে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনার
সাথে এগোচ্ছ আর ডায়মন্ড জুবিলিতে সেবার জন্য যে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, তা'তে তোমরা
পাস হয়েছ। প্রত্যেকে তাদের যথাশক্তি সেবা করছে আর করতে থাকবে। কিন্তু এখন বিশেষ কী
প্রয়োজন? সময় নিকটে, তো সময়ের নৈকট্য অনুসারে এখন কোন ধরনের তরঙ্গ হওয়া দরকার? (বৈরাগ্যের)
কোন্ ধরনের বৈরাগ্য? সীমাবদ্ধ নাকি অসীম? যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা সেবার জন্য থাকে,
সময়ের আবশ্যকতা অনুসারে স্ব-স্থিতিতে ততটা অসীম বৈরাগ্য কত পর্যন্ত রয়েছে? কেননা,
তোমাদের সেবার সফলতা হলো যত দ্রুত সম্ভব যেন প্রজা তৈরি হয়ে যায়। সেইজন্য সেবা করো,
তাই না? তাইতো, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সব নিমিত্ত আত্মার মধ্যে অসীম বৈরাগ্য-বৃত্তি
না থাকবে, তৎক্ষণ অন্য আত্মাদের মধ্যেও বৈরাগ্য বৃত্তি আসতে পারে না এবং যতক্ষণ
পর্যন্ত বৈরাগ্য বৃত্তি না হবে ততক্ষণ যেটা চাও যে, বাবার পরিচয় সবাই জানবে, সেটা
সকলে জানতে পারে না। অসীম বৈরাগ্য সদাকালের বৈরাগ্য। যদি সময় অনুসারে বা
সারকামস্ট্যান্স অনুসারে বৈরাগ্য আসে তখন সময় নম্বর ওয়ান হয়ে গেল আর তুমি হয়ে গেলে
দ্বিতীয় নম্বর। হয় পরিস্থিতি নয়তো সময় বৈরাগ্য প্রাপ্ত করায়। পরিস্থিতি শেষ, সময়
পার হয়ে গেছে তো বৈরাগ্য সরে যায় অর্থাৎ সমাপ্ত। তাহলে এটাকে কী বলবে - অসীম
বৈরাগ্য নাকি সীমাবদ্ধ বৈরাগ্য? তো এখন অসীম বৈরাগ্য প্রয়োজন। যদি বৈরাগ্য খন্ডিত
হয়ে যায় তবে তার মুখ্য কারণ - দেহবোধ। যতক্ষণ দেহবোধের বৈরাগ্য না হয় ততক্ষণ কোনও
বিষয়ে বৈরাগ্য সদাকালের হয় না, অল্পকালের হয়। সম্বন্ধের প্রতি বৈরাগ্য, সেটা বড়
ব্যাপার নয়, সে' তো দুনিয়াতেও অনেকেরই হৃদয় থেকে বৈরাগ্য এসে যায়, কিন্তু এখানে
দেহবোধের যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে, সেই ভিন্ন ভিন্ন রূপকে তোমরা জানো তো না?
দেহবোধের কত রূপ আছে, তার বিস্তার তো জানো কিন্তু এই দেহবোধের অনেক রূপ জেনে অসীম
বৈরাগ্যে থাকতে হবে। দেহবোধ, দেহী-অভিমানে যেন বদল হয়ে যায়। দেহবোধ যেরকম একটা
ন্যাচারাল হয়ে গেছে, সেরকমই দেহী-অভিমান ন্যাচারাল হতে দাও, কেননা, সব ব্যাপারে
প্রথম শব্দই আসে দেহ। যদি সম্বন্ধ হয় তবুও তা' দেহেরই সম্বন্ধ, পদার্থ যদি হয় তাহলে
তা' দেহের পদার্থ। সুতরাং মূল আধার দেহবোধ। যে কোনও রূপে দেহবোধ যতক্ষণ আছে ততক্ষণ
বৈরাগ্য বৃত্তি হতে পারে না। তাছাড়া, বাপদাদা দেখেছেন যে বর্তমান সময়ে যে দেহবোধের
বিঘ্ন রয়েছে তার কারণ হলো - দেহের যা কিছু পুরানো সংস্কার রয়েছে, তা'তে বৈরাগ্য নেই।
প্রথমে দেহের পুরানো সব সংস্কারের প্রতি বৈরাগ্য প্রয়োজন। সংস্কার স্থিতি থেকে নিচে
নিয়ে আসে। সংস্কারের কারণে সেবাতে এবং সম্বন্ধ- সম্পর্কে বিঘ্ন উৎপন্ন হয়। তো
রেজাল্টে বাবা দেখেছেন যে দেহের পুরানো সংস্কারের প্রতি যতক্ষণ না বৈরাগ্য আসে,
ততক্ষণ অসীম বৈরাগ্য সদা থাকে না। সংস্কার বিভিন্ন রূপে তার নিজের দিকে আকর্ষণ করে
নেয়। সুতরাং কোথাও কোনো দিকে যদি আকর্ষণ থাকে, সেখানে বৈরাগ্য হতে পারে না। সুতরাং
চেক করো, আমি নিজের পুরানো ও ব্যর্থ সংস্কার থেকে মুক্ত হয়েছি? তোমরা কত চেষ্টা করবে
সেটা কোনো ব্যাপার নয়, তোমরা চেষ্টা করেও থাকো বৈরাগ্য বৃত্তিতে থাকতে, কিন্তু
সংস্কার কারও কারও কাছে কিংবা মেজরিটির কাছে কোনো না কোনো রূপে এমন প্রবল যে তা'
নিজের দিকে টানতে থাকে। অতএব, প্রথমে পুরানো সংস্কার থেকে বৈরাগ্য প্রয়োজন। না
চাইলেও সংস্কার ইমার্জ হয়ে যায়, কেন? চাও না, কিন্তু সমূহ সংস্কার সূক্ষ্ম ভাবে
ভস্ম করনি। কোথাও না কোথাও অংশ মাত্র রয়ে গেছে, লুকিয়ে আছে, সেটাই সময়মতো না চাইলেও
ইমার্জ হয়ে যায়। তখন তোমরা বলো - চাইনি তো কিন্তু কী করবো, হয়ে গেছে, হয়ে যায়....
এটা কে বলে - দেহবোধ নাকি দেহী-অভিমান?
তো বাপদাদা দেখেছেন যে, সমস্ত সংস্কারের প্রতি বৈরাগ্য বৃত্তিতে দুর্বলতা রয়েছে।
তোমরা শেষ করেছ কিন্তু লেশমাত্র নেই সেভাবে শেষ করনি। এছাড়া, যেখানে অংশ আছে সেখানে
তো বংশ থাকবেই। আজ অংশ আছে, সময় অনুসারে বংশের রূপ নিয়ে নেয়। পরবশ করে দেয়। বলতে
হ'লে তখন সবাই কী বলে থাকো যে বাবা যেমন নলেজফুল তেমন আমরাও নলেজফুল, কিন্তু যখন
সংস্কার তোমাদের আঘাত করে তখন নলেজফুল থাকো নাকি নলেজপুল (জ্ঞানকে কেবল টেনে নেওয়া,
ধারণ করা নয়)? কী হয়? নলেজফুলের বদলে নলেজপুল হয়ে যাও। সেই সময় যে কোনও কাউকে যদি
জিজ্ঞাসা করো তো বলবে - হ্যাঁ, বুঝি তো আমিও, হওয়া উচিত নয়, করা উচিত নয় কিন্তু হয়ে
যায়। তাহলে, নলেজফুল হয়েছ নাকি নলেজপুল হ'লে? (নলেজপুল অর্থাৎ নলেজকে নেওয়া,
আত্তীকরণ বা ধারণকারী নয় ) যে নলেজফুল হয় তাকে কোনও সংস্কার, সম্বন্ধ, পদার্থ আঘাত
করতে পারে না।
তো ডায়মন্ড জুবিলী উদযাপন করছোও, ডায়মন্ড জুবিলীর অর্থ হলো - ডায়মন্ড হওয়া অর্থাৎ
অসীম বৈরাগী হওয়া। সেবার জন্য যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে ততটা বৈরাগ্যবৃত্তির
অ্যাটেনশন থাকে না। এতে তোমাদের গড়িমসি রয়েছে। এরকমই চলে ... এমনই হয়... হয়ে যাবে...
সময় যখন হবে তখন ঠিক হয়ে যাবে... তো সময় তোমাদের শিক্ষক নাকি বাবা শিক্ষক? কে? যদি
সময়তে পরিবর্তন করবে তবে তো সময় তোমাদের শিক্ষক হয়ে গেল! তোমাদের রচনা তোমাদের
শিক্ষক হবে - এটা ঠিক? সুতরাং এমন পরিস্থিতি যখন আসে তখন কী বলো তোমরা? সময়মতো ঠিক
করে নেবো, হয়ে যাবে। বাবাকেও আশ্বস্ত করে - চিন্তা ক'রো না, হয়ে যাবে। সময়মতো একদম
সামনে এগিয়ে যাবো। সুতরাং সময়কে শিক্ষক বানানো - এটা কি তোমরা সব মাস্টার রচয়িতার
ক্ষেত্রে শোভন? ভালো লাগে? না। সময় হলো রচনা, তোমরা মাস্টার রচয়িতা। সুতরাং রচনা
মাস্টার রচয়িতার শিক্ষক হবে, সেটা মাস্টার রচয়িতার গৌরব নয়। অতএব, এখন বাপদাদা যে
সময় দিয়েছেন, তার মধ্যে বৈরাগ্য বৃত্তিকে ইমার্জ করো, কেননা সেবার টানাপড়েনের মধ্যে
বৈরাগ্যবৃত্তি শেষ হয়ে যায়। সাধারণতঃ, সেবাতে খুশিও পাওয়া যায়, শক্তিও পাওয়া যায় আর
প্রত্যক্ষ ফলও পাওয়া যায়, কিন্তু অসীম বৈরাগ্য শেষও হয় সেবাতেই। সেইজন্য এখন নিজের
ভিতরে এই বৈরাগ্য বৃত্তিকে জাগাও। পূর্ব কল্পেও তো তোমরাই হয়েছিলে নাকি অন্য কেউ
ছিল? তোমরাই ছিলে তো না। এখন শুধু যা মার্জ হয়ে আছে তা' ইমার্জ করো। যেভাবে সেবার
প্ল্যানকে প্র্যাকটিক্যালি ইমার্জ করো, তখন সফলতা লাভ হয় তো না! সেভাবে এখন অসীম
বৈরাগ্য বৃত্তিকে ইমার্জ করো। যত সাধনই প্রাপ্ত হোক, তাছাড়া তো সাধন তোমাদের দিনদিন
বেশিই প্রাপ্ত হওয়ার আছে কিন্তু অসীম বৈরাগ্য বৃত্তির সাধনা যেন মার্জ না হয়,
ইমার্জ হতে দাও। সাধন আর সাধনার ব্যালেন্স হতে দাও, কারণ ভবিষ্যতে তোমাদের উন্নতির
সাথে সাথে প্রকৃতি তোমাদের দাসী হবে। তোমাদের আতিথেয়তা প্রাপ্ত হবে, নিজস্ব গৌরব
প্রাপ্ত হবে। কিন্তু সবকিছু থাকা সত্ত্বেও, তোমাদের বৈরাগ্য বৃত্তি হ্রাস পেতে দিও
না। তাহলে, অসীম বৈরাগ্য বৃত্তির বায়ুমন্ডল নিজের মধ্যে অনুভব করো নাকি সেবাতে বিজি
হয়ে গেছো? ঠিক যেমন দুনিয়ার লোকের কাছে সেবার প্রভাব যেমন প্রতীয়মান হয় না! তেমনই
অসীম বৈরাগ্য বৃত্তির প্রভাব যেন প্রতীয়মান হয়। শুরুতে তোমাদের সকলের স্থিতি কী ছিল?
পাকিস্তানে যখন ছিলে, সেবা ছিল না, সাধন ছিল কিন্তু অসীম বৈরাগ্য বৃত্তির বায়ুমন্ডল
দ্বারা তোমরা সেবা বাড়িয়েছ। সুতরাং যারা তাদের ডায়মন্ড জুবিলী উদযাপন করছ তাদের
মধ্যে আদি সংস্কার রয়েছে, এখন মার্জ হয়ে গেছে। এবারে আবারও সেই বৃত্তিকে ইমার্জ করো।
আদি রত্নসকলের অসীম বৈরাগ্য বৃত্তি স্থাপন করেছে, এখন নতুন দুনিয়া স্থাপনের জন্য
আবারও সেই বৃত্তি, সেই বায়ুমন্ডল ইমার্জ হতে দাও। তাহলে, শুনেছো তোমরা কী প্রয়োজন?
সাধনই (সুযোগ সুবিধার উপকরণ, facilities) নেই তোমার কাছে আর যদি বলো যে আমার তো এই
সবের প্রতি বৈরাগ্য রয়েছে, তাহলে কে মানবে? সাধন রয়েছে অথচ বৈরাগ্য তার থেকে।
পূর্বের সাধন আর এখনকার সাধনের মধ্যে কত অন্তর রয়েছে। সাধনা লুকিয়ে গেছে আর সাধন
প্রত্যক্ষ হয়ে গেছে। ঠিক আছে, খুব ভালো ভাবে তাকে ইউজ করো। কেননা সাধন তো হলো
তোমাদের জন্যই, কিন্তু সাধনাকে মার্জ করে ফেলো না। সম্পূর্ণ ব্যালেন্স থাকা চাই।
দুনিয়ার মানুষকে যেমন তোমরা বলে থাকো যে কমল পুষ্পের মতো হও, তো সাধন থাকা
সত্ত্বেও কমল পুষ্পের সমান হও। সাধন খারাপ নয়। সাধন তো তোমাদের কর্মের, যোগের ফল।
কিন্তু এ হলো তোমাদের বৃত্তির বিষয়। এইরকম তো নয় যে সাধনের এত এত বিস্তারের কারণে
সাধন গুলির বশবর্তী হয়ে ফেঁসে গেলে? কমল পুষ্পের সমান ডিট্যাচ এবং বাবার প্রিয়।
ইউজ অবশ্যই করো কিন্তু তার প্রভাবে আসবে না, ডিট্যাচ। সাধন, অসীম জগতের
বৈরাগ্যবৃত্তিকে যেন মার্জ করে না দেয়। এখন বিশ্ব অতি-র দিকে যাচ্ছে, তো এখন
আবশ্যক হলো সত্যিকারের বৈরাগ্য বৃত্তির আর সেই বায়ুমণ্ডল বানাবে তোমরা, প্রথমে
নিজের মধ্যে তারপর বিশ্বে।
তো ডায়মন্ড জুবিলী যারা পালন করছো তারা কী করবে? তরঙ্গ ছড়িয়ে দেবে তাই তো? তোমরা
তো অনুভাবী। শুরু থেকেই তোমাদের অনুভব রয়েছে না! সব কিছুই ছিল, দেশী ঘী যত চাও খাও,
তবুও তোমাদের ছিল অসীম জগতের বৈরাগ্য বৃত্তি । জগতের মানুষ তো দেশী ঘী খায় আর তোমরা
তো পান করতে। ঘী এর নদী দেখেছো তোমরা। তো ডায়মন্ড জুবিলী যারা পালন করছে তাদের
বিশেষ যে কাজ করতে হবে তা হলো - নিজেদের মধ্যে একত্রিত যখন হয়েছো তাহলে আন্তরিক
বার্তালাপ করবে। যেই রকম সেবার জন্য মিটিং করে থাকো। বাপদাদা যা বলেন, বাপদাদা যেটা
চান যে সেকেন্ডে অশরীরী হয়ে যাও - তার ফাউন্ডেশন হলো এই অসীম জগতের বৈরাগ্য বৃত্তি
। নাহলে তো যত চেষ্টাই করো না কেন সেকেন্ডে হতে পারবে না। যুদ্ধ করতেই সময় চলে যাবে।
আর যেখানে বৈরাগ্য রয়েছে, তো এই বৈরাগ্য হলো উপযুক্ত ধরণী, তাতে যা কিছুই দাও তার
ফল সাথে সাথেই বেরিয়ে আসবে। তাহলে কী করতে হবে? সকলের যেন ফীল হয় যে, ব্যস্ আমাকেও
এখন বৈরাগ্য বৃত্তিতে যেতে হবে। আচ্ছা। বুঝেছো কী করতে হবে? সহজ নাকি কঠিন মনে হচ্ছে?
একটু একটু আকর্ষণ তো হবে নাকি হবে না? সাধন আকৃষ্ট করবে না তো?
এখন অভ্যাস চাই - যখনই চাইবে, যেখানেই চাইবে, যেই রকম চাইবে - সেখানে স্থিতিকে
সেকেন্ডে যাতে সেট করতে পারো। সেবাতে আসতে হলে সেবাতে এসো। সেবার থেকে ডিট্যাচড হয়ে
যেতে চাইলে ডিট্যাচ হয়ে যাও। স্টপ তো স্টপ হয়ে যাও। এই রকম নয় যে লাগালে স্টপ আর
হয়ে গেলো কোশ্চেন মার্ক। ফুলস্টপ। স্টপও নয়, ফুলস্টপ। যেটা চাও প্র্যাকটিক্যালে
যাতে করতে পারো। চাইছো করতে কিন্তু হওয়াটা কঠিন, তবে তাকে কী বলবে? উইল পাওয়ার আছে
নাকি পাওয়ার আছে? সংকল্প করলে - ব্যর্থ সমাপ্ত, তো সেকেন্ডে যেন সমাপ্ত হয়ে যায়।
বাপদাদা বলেছেন না যে, কোনো কোনো বাচ্চা বলে থাকে - আমি যোগে বসি, কিন্তু যোগের
পরিবর্তে যুদ্ধে থাকি। যোগী হয় না তারা, যোদ্ধা হয়ে যায় আর যুদ্ধ করবার সংস্কার
যদি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে তবে কী তৈরী হবে? সূর্যবংশী না চন্দ্রবংশী? ভাবলে আর হয়ে
গেলো। ভাবা আর হওয়া, সেকেন্ডের কাজ। একে বলা হয় - উইল পাওয়ার। উইল পাওয়ার আছে যে
খুব ভালো প্ল্যান বানাবো। কিন্তু প্ল্যান তৈরী হচ্ছে ১০ টা আর প্র্যাকটিক্যালে হচ্ছে
৫ টা, এই রকম হয় না তো? ভাবে তো খুব ভালো যে - এই রকম করবো, এই রকম হবে, এই রকম হবে,
কিন্তু প্র্যাকটিক্যালে তফাৎ হয়ে যায় । তো এখন এই রকম উইল পাওয়ার যেন হয় যে,
সংকল্প করলাম আর প্র্যাকটিক্যালে হয়েই রয়েছে এই রকম অনুভব হবে। না হলে দেখা গেছে
যে, অমৃতবেলায় যখন বাবার সাথে আন্তরিক বার্তালাপ করে তখন তো খুব ভালো ভালো কথা বলে,
এই করবো, সেই করবো... আর রাত হতে হতে কী রেজাল্ট দেখা যায়? বাবাকে তো খুব খুশী
করার মতো কথা বলে থাকে, বড়ই মিষ্টি মিষ্টি সে'সব কথা, এত ভালো ভালো কথা বলে যে
বাবাও খুশী হয়ে যান, বাঃ আমার বাচ্চা! বলে - বাবা, আপনি যা বলেছেন, সেটা হবেই হবে।
হয়েই রয়েছে। খুব ভালো ভালো কথা বলতে থাকে। কেউ কেউ তো বাবাকে এতখানিও আশ্বস্ত করতে
থাকে, আমরা করবো না তো কারা করবে? বাবা প্রতি কল্পে আমরাই তো ছিলাম। বলেই তারা খুশী
হয়ে যায়। (হল্ এর পিছনে যারা বসে আছে তাদের প্রতি) পিছনে যারা বসেছো তারা খুব ভালো
ভাবে শুনতে পাচ্ছো তো?
সামনে যারা বসে আছে তাদের থেকে কি পিছনে বসেছে যারা তারা আগে করবে? পিছনে বসলেও
তোমরা সবাই সমীপে বাবার হৃদয়ে রয়েছো। অন্যদেরকে চান্স দেওয়া, এই সেবা করেছো তোমরা
না? তো সেবাধারী সর্বদা বাবার হৃদয়ে থাকে। কখনোই এই রকম ভাববে না যে, আমরাও যদি
দাদী হতে পারতাম তবে একটু.... কিন্তু তোমরা কেবল সামনে নয় হৃদয়ে রয়েছো। আর এই
হৃদয়ও সাধারণ হৃদয় নয়, সিংহাসন। তো হৃদ্ সিংহাসনে আসীন তো তোমরা না? যেখানেই বসো
না কেন, ওই কোণেও বসে থাকো না কেন, নীচেও যদি বসো, কেবিনেই বসো... কিন্তু বাবার
হৃদয়ে রয়েছো। আচ্ছা ।
চতুর্দিকের সিংহাসনে আসীন শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান আত্মারা, সর্বদা অসীম জগতের বৈরাগ্য
বৃত্তির দ্বারা বায়ুমণ্ডল প্রস্তুতকারী বিশেষ আত্মারা, সর্বদা নিজের শ্রেষ্ঠ
বিশেষত্বকে কার্যে নিয়োজিত করা বিশেষ আত্মারা, সদা একমাত্র বাবার সাথ এবং শ্রীমতের
হাতের অনুভবকারী সমীপ আত্মাদেরকে বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর নমস্কার ।
বরদান:-
একব্রতার রহস্যকে জেনে বরদাতাকে রাজী (সন্তুষ্ট) করা
সর্ব সিদ্ধি স্বরূপ ভব
বরদাতা বাবার কাছে অফুরন্ত বরদান রয়েছে, যে যত নিতে
চায়, উন্মুক্ত ভান্ডার রয়েছে। এই রকম উন্মুক্ত ভান্ডার থেকে কোনও বাচারা সম্পন্ন
হয়ে ওঠে আবার কেউ কেউ যথা শক্তি সম্পন্ন হয়। সবথেকে বেশী ঝুলি ভরপুর করে দেওয়ার
ব্যাপারে ভোলানাথ বরদাতা রূপই রয়েছে । কেবল ওঁনাকে রাজী করবার বিধি যদি জেনে নাও
তবে সর্ব সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে যাবে। বরদাতার একটি শব্দ বড়ই প্রিয় - একাব্রতা।
সংকল্প, স্বপ্নেও দ্বিতীয়-ব্রতা যেন না হয়। বৃত্তিতে যেন থাকে আমার তো এক,
দ্বিতীয় কেউ নেই। এই রহস্যকে যে জেনেছে, তার ঝুলি বরদানের দ্বারা ভরপুর থাকে।
স্লোগান:-
মন্সা আর বাচা দুটি
সেবাই সাথে সাথে করো তবে ডবল ফল প্রাপ্ত হতে থাকবে।
সূচনাঃ - আজ অন্তর্রাষ্ট্রীয় যোগ দিবস তৃতীয় রবিবার, সন্ধ্যা ৬.৩০ থেকে ৭.৩০
মিনিট পর্যন্ত সকল ভাই বোনেরা যোগ অভ্যাসে অনুভব করুন যে, আমি পরম পবিত্র আত্মা
লাইটের শরীরে ভ্রুকুটির মধ্যে ঝলমল করছি। জ্ঞান সূর্য শিব বাবার পবিত্র কিরণ আমি
আত্মার মধ্যে সমাহিত হচ্ছে, যার দ্বারা আমার জন্ম-জন্মান্তরের বিকর্ম ভস্ম হয়ে
যাচ্ছে, তার সাথে সাথে প্রকৃতির পাঁচ তত্ত্বও পবিত্র হয়ে উঠছে।