03-08-2025 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 28-03-2006 মধুবন


"বিশ্বের আত্মাদের দুঃখ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার জন্য মন্সা সেবা বাড়াও, সম্পন্ন আর সম্পূর্ণ হও"


আজ সর্ব ভাণ্ডারের মালিক বাপদাদা চতুর্দিকে সর্ব ভাণ্ডারে সম্পন্ন নিজের বাচ্চাদের দেখছেন। বাপদাদা প্রত্যেক বাচ্চাকে সর্ব ভাণ্ডারের মালিক বানিয়েছেন। তিনি এক এবং একমাত্র, যিনি তোমাদের সবাইকে সর্ব ভাণ্ডার একই রকম দিয়েছেন। কাউকে কম, কাউকে বেশি দেননি। কেন? বাবা অনন্ত ভাণ্ডারের মালিক। অসীম দুনিয়ার ভাণ্ডার, সেইজন্য প্রত্যেক বাচ্চা অপরিসীম ভাণ্ডারের মালিক। বাপদাদা সব বাচ্চাকে একসমান একরকম দিয়েছেন কিন্তু যারা ধারণ করবে তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সর্ব ভাণ্ডার ধারণ করে আর কেউ যথাশক্তি ধারণ করে। কেউ নম্বর ওয়ান আর কেউ নম্বর ক্রমে। যারা যতটাই ধারণ করেছে তাদের মুখে, চোখে সেই ভাণ্ডারের নেশা স্পষ্ট দেখা যায়। ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ আত্মাদের মুখের দ্বারা, নয়নের দ্বারা তাদের পরিপূর্ণ প্রতীয়মান হয়। যেমন স্থূল ভাণ্ডার প্রাপ্তকারী আত্মার আচার-আচরণ ও মুখমণ্ডলের দ্বারা তাদেরকে বোঝা যায়। তাইতো, এই অবিনাশী ভাণ্ডারের নেশা, খুশি স্পষ্ট দেখা যায়। সম্পন্নতার নেশা নিশ্চিন্ত বাদশাহ বানায়। যেখানে ঈশ্বরীয় নেশা আছে সেখানে দুশ্চিন্তা থাকতে পারে না। নিশ্চিন্ত বাদশাহ অচিন্ত্যপুরের বাদশাহ হয়ে যায়। তো তোমরা সবাই ঈশ্বরীয় ভাণ্ডারে সম্পন্ন নিশ্চিন্ত বাদশাহ তো না! অচিন্ত্যপুরের বাদশাহ তোমরা। কোনো চিন্তা আছে কী? কোনো দুঃখ দুশ্চিন্তা আছে তোমাদের? কী হবে, কীভাবে হবে এসবেরও চিন্তা নেই। যারা ত্রিকালদর্শী স্থিতিতে স্থিত তারা জানো যা হচ্ছে সেসব ভালো, যা হবে তা' আরও ভালো হবে। কেন? সর্বশক্তিমান বাবার সাথী তোমরা, তাঁর সঙ্গে তোমরা থাকো। প্রত্যেকের নেশা আছে, গর্বিত হয় যে বাপদাদা সদা আমাদের হৃদয়ে থাকেন এবং আমরা সদা বাবার হৃদয় সিংহাসনে থাকি। তো তোমাদের এরকম নেশা আছে তো না! যারা হৃদয় সিংহাসনাসীন তাদের সংকল্প কি, স্বপ্নেও দুঃখের তরঙ্গ, লেশমাত্রও আসতে পারে না! কেন? তোমরা সর্ব ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ, যে জিনিস পরিপূর্ণ থাকে তার মধ্যে নড়াচড়া হয় না।

তো বাপদাদা চতুর্দিকের বাচ্চাদের সম্পন্নতা দেখছিলেন, তিনি প্রত্যেকের জমার খাতা চেক করেছেন। অখণ্ড ভাণ্ডার তোমাদের প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু যা প্রাপ্ত হয়েছে সেই ভাণ্ডার কার্যে লাগিয়ে শেষ করেছ, নাকি প্রাপ্ত হওয়া ভাণ্ডার কার্যে লাগিয়েছ এবং আরও বাড়িয়েছো? কত পার্সেন্টে প্রত্যেকের খাতায় জমা হয়েছে? কারণ, এই ভাণ্ডার শুধু এখন এই সময়ের জন্য নয়, এই ভাণ্ডার ভবিষ্যতেও সাথে চলবে। জমা হওয়াই সাথে যাবে। তো বাপদাদা পার্সেন্টেজ দেখছিলেন। কী দেখেছেন? সব বাচ্চা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ এবং যথা শক্তি সেবা তো করছে, কিন্তু সেবার ফল জমা হওয়ার বিষয়ে ফারাক হয়ে যায়। কিছু বাচ্চার জমা খাতা দেখেছেন, অনেক সেবা করে কিন্তু সেবা করার ফল জমা হয়েছে কি হয়নি তার লক্ষণ হবে - যে আত্মারা সেবা করে তা' মন্সাতে হোক বা বাচাতে কিংবা কর্মণায়, তিনটেতেই ১০০% মার্কস থাকে। তিনেতে ১০০। সেবা তো করেছে, কিন্তু সেবা করার সময় বা সেবার পরে নিজের মনে, নিজের প্রতি তারা যদি সন্তুষ্ট হয় এবং সেইসাথে যে আত্মাদের তারা সেবা করেছে, সেবাতে যারা সাথী থেকেছে এবং যারা সেবা করতে দেখেছে অথবা শুনেছে তারাও যদি সন্তুষ্ট হয় তাহলে জানবে তাদের জমা হয়েছে। নিজের সন্তুষ্টতা, সকলের সন্তুষ্টতা যদি না থাকে তবে জমার পার্সেন্টেজ কম হয়ে যায়। যথার্থ সেবার বিধি আগেও তোমাদের বলা হয়েছে, তিন বিষয় যদি বিধিপূর্বক হয় তবে জমা হয়, বলা হয়েছিল - এক, নিমিত্তভাব, দুই, নিরহংকারের ভাবনা, তিন, নির্মল স্বভাব ও নির্মল বাণী। ভাব, ভাবনা আর স্বভাব, বোল যদি এই তিন বিষয়ের একটা বিষয়ও কম হয়, যদি একটা হয়েছে অন্য দুটো হয়নি, দুটো হয়েছে একটা হয়নি, তবে সেই দুর্বলতা জমার পার্সেন্টেজ কম করে দেয়। সুতরাং চার সাব্জেক্টে নিজেকে নিজে চেক করো - চার সাব্জেক্টে আমার খাতা জমা হয়েছে! কেন? বাপদাদা দেখেছেন যে চার বিষয়ে তিনি যা বলেছিলেন - ভাব, ভাবনা... সেই অনুযায়ী অনেক বাচ্চা সেই চার বিষয়ের অনেক সেবা সমাচার লিখেছে কিন্তু তাদের জমার খাতা কম।

সব ভাণ্ডার চেক করো - জ্ঞানের ভাণ্ডার অর্থাৎ যে সংকল্পই করেছো, যে কর্মই করেছো তা' নলেজফুল হয়ে করেছো? সাধারণ হয়নি তো? যোগ অর্থাৎ সর্ব শক্তির ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হতে হবে। সুতরাং চেক করো প্রতিটি দিনের রোজনামচায় সময় অনুসারে যে শক্তির আবশ্যকতা রয়েছে, সেই সময় সেই শক্তি অর্ডারে ছিল? মাস্টার সর্বশক্তিমানের অর্থই হলো মালিক। এমন নয় তো যে সময় চলে যাওয়ার পর শক্তি ব্যবহারের ভাবনাতেই থেকে যাবে! যদি সময়মতো অর্ডারে শক্তি ইমার্জ না হয়, যদি একটা শক্তি অর্ডারে না চালনা করতে পারো তবে নির্বিঘ্ন রাজ্যের অধিকারী কীভাবে হবে? তো শক্তির ভাণ্ডার কত জমা হয়েছে? সময় মতো যা কার্যে প্রয়োগ করা যায় সেটাই জমা হয়। তোমরা নিরন্তর চেক করে চলেছো তোমাদের জমার খাতা কী? কেননা, বাপদাদার সব বাচ্চার প্রতি অতিশয় ভালোবাসা রয়েছে, বাপদাদা এটাই চান যে সব বাচ্চার জমার খাতা পরিপূর্ণ হোক। ধারণাতেও, ধারণার লক্ষণ হলো - সব কর্ম গুণ সম্পন্ন হবে। যে সময় যে গুণের প্রয়োজন আছে সেই গুণ মুখে ও আচার-আচরণে ইমার্জ রূপে যেন দৃশ্যমান হয়। যদি কোনও গুণের খামতি থাকে, মনে করো, কর্ম করার সময় সরলতার গুণ আবশ্যক, মধুরতা আবশ্যক, হয় তা' বোলে বা কর্মে, সেখানে যদি সরলতা, মধুরতার পরিবর্তে সামান্যতম আবেগ বা ক্লান্তির কারণে মধুর না হয়, বোল মধুর নয়, মুখ মধুর নয়, সিরিয়াস হয় তবে গুণ সম্পন্ন তো বলা যাবে না, তাই না! সারকমস্ট্যান্স যেমনই হোক, কিন্তু আমার যে গুণ আছে, সেই গুণ ইমার্জ হওয়া উচিত। বাবা এখন শর্টে বলছেন।

সেবা এইরকমই - সেবাতে সেবাধারীর সবচাইতে ভালো লক্ষণ হলো সে নিজেও সদা হালকা, লাইট আর প্রসন্নতা প্রতীয়মান হয়। সেবার ফল খুশি। যদি সেবা করার সময় খুশি গায়েব হয়ে যায় তবে সেবার খাতা জমা হয় না। সেবা করেছো, সময় লাগিয়েছ, পরিশ্রম করেছ তবে অল্প পার্সেন্টেজে তা' জমা হবে, অনর্থক হবে না। কিন্তু যত পার্সেন্টেজে জমা হওয়া উচিত ততটা হয় না। সম্বন্ধ-সম্পর্কের এরকমই লক্ষণ হলো - আশীর্বাদ প্রাপ্তি। যারই সম্বন্ধ-সম্পর্কে আসবে তার মন থেকে যেন তোমার প্রতি শুভ ভাবনা শুভ কামনা বের হয় - খুব ভালো। বাইরে নয়, অন্তর থেকে, হৃদয় থেকে আশীর্বাদ বেরোবে এবং যদি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় তবে আশীর্বাদের প্রাপ্তি সেটা পুরুষার্থের খুব সহজ সাধন। ভাষণ দিও না। ঠিক আছে, মন্সা সেবাও না হয় তেমন পাওয়ারফুল নয়, নতুন নতুন কোনো প্ল্যান বানাতে জানো না, কোনো ক্ষতি নেই। পুরুষার্থের সবচাইতে সহজ সাধন তো হলো আশীর্বাদ নাও, আশীর্বাদ দাও। এরকম অনেক বাচ্চার মনের সংকল্প বাপদাদা রিড করেন। কিছু বাচ্চা সময় অনুসারে, সারকমস্ট্যান্স অনুসারে বলে থাকে যদি কেউ খারাপ কাজ করে তবে তাকে আশীর্বাদ কীভাবে দেবো? তার প্রতি ক্রোধ আসে তো না! আশীর্বাদ কীভাবে দেবো? ঠিক আছে, ক্রোধের বাচ্চাকাচ্চাও অনেক আছে। কিন্তু সে খারাপ কাজ করেছে, সে খারাপ তুমি ঠিক বুঝেছ যে সে খারাপ! এ' ভালো এই নির্ণয় তো ভালো করেছ, বুঝেছ সেটা ভালো কিন্তু এক হলো ধারণা করা, আরেক হলো তার খারাপ কাজ, খারাপ বিষয়কে নিজের হৃদয়ে সমাহিত করা। ধারণা করা আর সমাহিত করার মধ্যে ফারাক আছে। যদি তুমি সমঝদার (বিচক্ষণ) হও, তবে সমঝদার কী কোনো খারাপ জিনিস নিজের কাছে রাখবে! সেটা খারাপ কিন্তু তুমি হৃদয়ে অন্তর্লীন করে নিলে অর্থাৎ তুমি খারাপ জিনিস নিজের কাছে রেখেছ, দেখভাল করেছ। ধারণা করা আলাদা ব্যাপার, সমাহিত করা আলাদা ব্যাপার। সমঝদার হওয়া সেতো ঠিক আছে, হও, কিন্তু সমাহিত ক'রো না। এ' তো এরকমই, এটা হলো সমাহিত করা। সেভাবে বুঝে ব্যবহারে আসা, এই বোধ নেই। তো বাপদাদা চেক করেছেন, এখন সময় সমীপে আসবে না, তোমাদের আনতে হবে। অনেকে জিজ্ঞাসা করে সামান্য ইশারা দাও তো না - ১০ বছর লাগবে, ২০ বছর লাগবে, কত সময় লাগবে!

তো বাবা বাচ্চাদের প্রশ্ন করেন, বাবাকে অনেক প্রশ্ন করো তো না, তো বাবা আজ বাচ্চাদের প্রশ্ন করছেন - সময়কে সমীপে কে নিয়ে আসবে? সেটা ড্রামা কিন্তু নিমিত্ত কে? তোমাদের একটা গীতও আছে, কা'র বাধায় আটকে থাকে ঊষাকাল! আছে না এই গীত? তো ঊষাকাল কে নিয়ে আসবে? বিনাশকারী তো মরিয়া হয়ে উঠেছে বিনাশ করি, বিনাশ করি... কিন্তু নব নির্মাণকারী এতটা রেডি আছে? যদি পুরানো শেষ হয়ে যায়, নব নির্মাণ না হয় তবে কী হবে? সেইজন্য বাপদাদা এখন বাবার পরিবর্তে টিচারের রূপ ধারণ করেছে। তিনি হোম ওয়ার্ক দিয়েছেন তো না? হোম ওয়ার্ক কে দেন? টিচার। লাস্টে সদ্গুরুর পার্ট। তো নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করো সম্পন্ন আর সম্পূর্ণ স্টেজ কতটা তৈরি হয়েছে! আওয়াজের ঊর্ধ্বে অথবা আওয়াজে আসা, দুইই সমান হয়েছে? যেমন, যখন চাও আওয়াজে আসা সহজ, তেমনই আওয়াজের ঊর্ধ্বে যাওয়া যখনই চাও যেভাবে চাও সেভাবে হয়? সেকেন্ডে আওয়াজে আসা, সেকেন্ডে আওয়াজের ঊর্ধ্বে যাওয়া, এত প্র্যাক্টিস আছে? যেমন শরীর দ্বারা যখন চাও, যেখানে চাও সেখানে আসতে যেতে পারো তো না! এভাবে মন-বুদ্ধি দ্বারা যখন চাও যেখানে চাও সেখানে আসতে যেতে পারো? কেননা, অন্তে পাস মার্কস তাদেরই প্রাপ্ত হবে যারা সেকেন্ডে যা চাইবে যেভাবে চাইবে, যা অর্ডার করতে চাইবে তাতে সফল হয়ে যাবে। সায়েন্সের ওরাও সেই চেষ্টা করছে, সহজও হতে হবে এবং সময়ও কম হবে। তো এমন স্থিতি আছে তোমাদের? কত মিনিট পর্যন্ত এসেছ, সেকেন্ড পর্যন্ত এসেছ, কত পর্যন্ত পৌঁছেছো? লাইট হাউজ, মাইট হাউজ যেমন সুইচ অন করার সাথে সাথে নিজের লাইট ছড়িয়ে দেয়, তেমনই তোমরা সেকেন্ডে লাইট হাউজ হয়ে চতুর্দিকে লাইট ছড়িয়ে দিতে পারো? এই স্থূল চোখ এক স্থানে বসে দূর পর্যন্ত দেখতে পারে, পারে না! তোমাদের দৃষ্টি ছড়িয়ে দিতে পারো তো না! এইভাবে তোমরা তৃতীয় নেত্রের দ্বারা এক জায়গায় বসে চতুর্দিকে বরদাতা, বিধাতা হয়ে নজর দ্বারা তৃপ্ত করতে পারো? সব বিষয়ে নিজেকে চেক করছ? তৃতীয় নেত্র এতটা ক্লিন আর ক্লিয়ার? যদি সামান্য দুর্বলতা থাকে তিন বিষয়ে, এই সব বিষয়ে কারণ তো তোমাদের আগেই বলা হয়েছে। সীমাবদ্ধতার এই আকর্ষণ "আমি আর আমরা", যেমন আমি আমি-র কারণ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন - হোম ওয়ার্কও দিয়েছিলেন। দু'রকম আমি-কে সমাপ্ত ক'রে এক আমিকে রাখতে হবে। সবাই এই হোম ওয়ার্ক করেছ? এই হোম ওয়ার্কে যারা সফল হয়েছ তারা হাত উঠাও। সফল হয়েছ, বাপদাদা সবাইকে দেখেছেন। এভাবে সাহস বজায় রাখো, ভয় পেও না। এটা ভালো, অভিনন্দন পাবে। অনেক অল্প আছে। করেছ তো হাত উঠাও। এই টিভিতে হাত দেখাও। পিছনেও দেখাও। খুব অল্পই হাত তুলেছো। এখন কী করবে? সবারই নিজের প্রতি হাসিও আসছে।

আচ্ছা - দ্বিতীয় হোম ওয়ার্ক ছিল ক্রোধ ছাড়তে হবে, এটা সহজ তো না! তো ক্রোধ কে ছেড়েছে, ক্রোধ করনি এই ক'দিনে? (এই ব্যাপারে অনেকে হাত তুলেছে) এক্ষেত্রে কিছু বেশি আছে। যারা ক্রোধ করনি, তাদের আশপাশে যারা আছে তাদেরও জিজ্ঞাসা করা হবে। সংকল্পে, মনে ক্রোধ এসেছে? ঠিক আছে, তবুও তোমাদের অভিনন্দন, যদি মনে এসেছে মুখ থেকে করনি তবুও অভিনন্দন। খুব ভালো। তো তোমরাই দেখো, রেজাল্টের হিসেবে স্থাপনের কার্য, স্ব-কে সম্পন্ন বানানো এবং সকল আত্মাকে মুক্তির উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করানো, এটা সম্পন্ন হয়েছে? নিজেকে জীবনমুক্তি স্বরূপ বানানো আর সকল আত্মাকে মুক্তির উত্তরাধিকার প্রাপ্ত করানো - এটা হলো স্থাপন-কর্তা আত্মাদের শ্রেষ্ঠ কর্ম। তো বাপদাদা সেইজন্য জিজ্ঞাসা করছেন যে সব বন্ধন থেকে মুক্ত, জীবনমুক্ত হওয়ার স্টেজে এই সঙ্গমেই পৌঁছাতে হবে, নাকি সত্যযুগে পৌঁছাবে? সঙ্গমযুগে সম্পন্ন হতে হবে, নাকি সেখানেও রাজযোগ করে শিখতে হবে? সম্পন্ন এখানে হতে হবে তো না? সম্পূর্ণও এখানেই হতে হবে। সঙ্গমযুগের সময়ও সর্বাধিক বড় ভাণ্ডার। তো কা'র বাধায় থেমে আছে উষাকাল? বলো।

তো বাপদাদা কী চান? বাবার আশার দীপক বাচ্চারাই সেইজন্য নিজের খাতা ভালো করে চেক করো। বাবা কিছু বাচ্চাকে দেখেছেন, তাদের মধ্যে কিছু বাচ্চা তো উল্লাসরাম (মৌজিরাম)! আমোদ-প্রমোদে চলছে। যা হয়েছে সেটা ভালো। এখন তো স্ফূর্তি করে নাও! সত্যযুগে কে দেখবে, কে জানবে! তো জমার খাতায় আনন্দলাল বলো বা উল্লাসরাম বলো এরকম বাচ্চাদেরও দেখেছেন। এখন স্ফূর্তি করে নাও। অন্যদেরও বলে আরে কী করার আছে, মজা করো। খাও-দাও মজা করো। করে নাও মজা, বাবাও বলেন করে নাও। যদি অল্পতে তুষ্ট হও তো অল্পতে তুষ্ট হয়ে যাও। বিনাশী সাধনের আনন্দ-মজা অল্পকালের হয়। সদাকালের আনন্দ ছেড়ে যদি অল্পকালের সুখ- সুবিধার মজাতে থাকতে চাও তবে বাপদাদা কী বলবেন? ইশারা দেবেন আর কী করবেন? কেউ হিরের খনিতে গিয়ে দুটো হিরে নিয়ে যদি খুশি হয়ে যায় তবে তাকে কী বলবে? তো এরকম হয়ো না। অতীন্দ্রিয় সুখের আনন্দের দোলায় দোলো। অবিনাশী প্রাপ্তির দোলায় আনন্দে দোলো। ড্রামাতে দেখ, মায়ার পার্টও বিচিত্র। এই সময় এমন এমন সাধন বের হয়েছে, যা আগে ছিলই না। কিন্তু বিনা সাধনেও যারা সাধনা করেছে, সেবা করেছে সেই এক্সাম্পলও সামনে রয়েছে তো না! এই সব উপকরণ ছিল? কিন্তু সেবা কত হয়েছে? কোয়ালিটি বের হয়েছে, হয়েছে না! আদি রত্ন তো তৈরি হয়ে গেছে, তাই না! এসব সাধনের আকর্ষণ। সাধনসমূহ ইউজ করা রং - সেটা বাবা বলেন না। কিন্তু সাধনা ভুলে সাধনে মেতে ওঠা, এটাকে বাপদাদা রং বলেন। উপকরণ (সাধন) জীবনের উড়তি কলার সুযোগ-সুবিধা নয়, আধার নয়। সাধনা আধার। যদি সাধনার পরিবর্তে উপকরণকে আধার বানায় তবে রেজাল্ট কী হবে? সাধন বিনাশী, রেজাল্ট কী? সাধনা অবিনাশী, তার রেজাল্ট কী হবে?

চতুর্দিকের বাচ্চাদের পুরুষার্থ আর ভালবাসার সমাচার পত্র বাপদাদার কাছে পৌঁছেছে, বাপদাদা বাচ্চাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে, এটা করবো-এটা করবো, এই সমাচার শুনে খুশি হন। এখন শুধু যে সাহস রেখেছ, উৎসাহ-উদ্দীপনা রেখেছ, তাকে বারবার অ্যাটেনশন দিয়ে প্র্যাকটিক্যালি করতে হবে। সব বাচ্চার প্রতি এটাই বাপদাদার হৃদয়ের আশীর্বাদ এবং সংকল্প, বোল এবং কর্মে, সম্বন্ধ-সম্পর্কে সম্পন্ন হওয়া চতুর্দিকের সব শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, যারা সদা স্বদর্শন করে, স্বদর্শন চক্রধারী বাচ্চাদের, সদা দৃঢ় সংকল্প দ্বারা মায়াজিত হয়ে বাবার সামনে নিজেকে প্রত্যক্ষ করে আর বিশ্বের সামনে বাবাকে প্রত্যক্ষ করায় এমন সার্ভিসেবল, নলেজফুল, সাকসেসফুল বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর হৃদয়ের পদ্ম পদ্ম গুন শুভ ভাবনা শুভ কামনা, নমস্কার তোমাদের, নমস্কার।

বরদান:-
প্রকৃত স্বচ্ছ হৃদয়ের আধারে নম্বর ওয়ান স্থান নিয়ে দিলারাম মনোনীত ভব

দিলারাম বাবার নির্মল হৃদয়ের বাচ্চাদের পছন্দ। দুনিয়ার মাথা যদি নাও থাকে কিন্তু নির্মল স্বচ্ছ হৃদয় যদি থাকে তবে নম্বর ওয়ান নিয়ে নেবে, কেননা মাথা তো বাবা এত বড় দিয়ে দেন যার দ্বারা রচয়িতাকে জেনে রচনার আদি, মধ্য, অন্তের নলেজ জেনে নাও। সুতরাং প্রকৃত নির্মল হৃদয়ের আধার দ্বারাই নম্বর ওয়ান হও, সেবার আধারে নয়। প্রকৃত হৃদয়ের প্রভাব হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায়। যারা মগজ দিয়ে করে তারা নাম উপার্জন করে আর যারা হৃদয়বান তারা আশীর্বাদ উপার্জন করে।

স্লোগান:-
সবার প্রতি শুভ চিন্তন আর শুভ কামনা বজায় রাখাই প্রকৃত পরোপকার।

অব্যক্ত ইশারা :- সহজযোগী হতে হলে পরমাত্ম-প্রেমের অনুভবী হও যে বাচ্চারা পরমাত্ম ভালবাসায় সদা লভলীন থাকে, ডুবে থাকে তাদের প্রভা আর প্রখরতা, অনুভূতির কিরণ এত শক্তিশালী হয়, যে কোনও সমস্যা কাছে আসা তো দূর এমনকি চোখ উঠিয়েও দেখতে পারে না। তাদের কখনও কোনও রকমের পরিশ্রম হতে পারে না।