14.05.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
এখন তোমরা সঙ্গমযুগে রয়েছো, তোমাদেরকে এই পুরাতন দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে
হবে, কারণ এবার এই পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ হবে”
প্রশ্নঃ -
সঙ্গমযুগের
কোন্ বিশেষত্ব সমগ্র কল্পের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা?
উত্তরঃ
সঙ্গমযুগের
বিশেষত্ব হলো - এখানে পড়াশুনা করো, আর প্রালব্ধ ভবিষ্যতে গিয়ে পাও। সমগ্র কল্পে আর
কখনো এইরকম পড়াশুনা করানো হয় না যার প্রালব্ধ পরের জন্মে পাওয়া যায়। এখন তোমরা
বাচ্চারা এই মৃত্যুপুরীতে পড়াশুনা করছো অমরপুরীর জন্য। অন্য কেউ এইরকম পরের জন্মের
জন্য পড়াশুনা করে না।
গীতঃ-
দূর দেশ নিবাসী…
ওম্ শান্তি ।
কে দূর দেশ
নিবাসী? কেউই এটা জানে না। ওনার কি নিজের দেশ নেই যে তিনি পরের দেশে এসেছেন? তিনি
কখনোই নিজের দেশে আসেন না। এই রাবণের রাজত্ব হলো পরের দেশ। শিববাবা কি তাঁর নিজের
দেশে আসেন না? আচ্ছা, এই রাবণের পরদেশ কোন্ দেশকে বলা হয়? আর নিজের দেশ-ই বা কোনটা?
শিববাবার নিজের দেশ কোনটা, আর পরদেশ কোনটা? বাবা যদি পরের দেশেই আসেন, তাহলে তাঁর
নিজের দেশ কোনটা? নিজের দেশ স্থাপন করতে তিনি আসেন কিন্তু তিনি কি তাঁর নিজের দেশে
আসেন? (কেউ কেউ উত্তর দিলো) আচ্ছা, এই বিষয়ের উপরে সকলে বিচার সাগর মন্থন করবে। এই
বিষয়টা ভালো করে বুঝবার বিষয় । মুখে ‛রাবণের দেশ, পরের দেশ’ বলে দেওয়া তো খুবই সহজ।
রাম রাজত্বে কখনোই রাবণ আসে না। কিন্তু বাবাকে রাবণের দেশে আসতে হয় কারণ এই রাবণের
রাজত্বকে চেঞ্জ করার প্রয়োজন হয়। এটা হলো সঙ্গমযুগ। তিনি সত্যযুগেও আসেন না আর
কলিযুগেও আসেন না। কেবল সঙ্গমযুগেই আসেন। তাই এটা যেমন রামের দেশ, সেইরকম রাবণেরও
দেশ। এই পাড় রামের আর ওই পাড় রাবণের। এটা হলো সঙ্গম। তোমরা বাচ্চারা এখন এই সঙ্গমে
রয়েছ। এই দিকেও নেই, ওই দিকেও নেই। নিজেকে এই সঙ্গমযুগ-বাসী বলে বুঝতে হবে। ওই
পাড়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই। বুদ্ধির দ্বারা পুরাতন দুনিয়ার সঙ্গে সকল
সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। থাকতে তো এখানেই হবে। কিন্তু বুদ্ধির দ্বারা জেনেছো যে এই
গোটা পুরাতন দুনিয়াটাই বিনষ্ট হয়ে যাবে। আত্মা বলে - এখন আমি সঙ্গমযুগ-বাসী। বাবা
এসে গেছেন। তাঁকে মাঝিও বলা হয়। এখন আমরা যাত্রা করছি। কিভাবে? যোগের দ্বারা। যোগের
জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন, আবার জ্ঞানের জন্যও যোগের প্রয়োজন। যোগের ক্ষেত্রে বোঝানো হয়
- নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করো। এটাও তো জ্ঞানই, তাই না? বাবা মত
প্রদান করতে এসেছেন। তিনি বলছেন - নিজেকে আত্মা অনুভব করো। আত্মা-ই ৮৪ বার জন্ম
গ্রহণ করে। বাচ্চাদেরকেই বাবা বিস্তারিত ভাবে বসে বোঝান। এখন এই রাবণের রাজত্বের
বিনাশ আসন্ন। এখানে রয়েছে কর্ম-বন্ধন, আর ওখানে (স্বর্গে) রয়েছে কর্ম-সম্বন্ধ।
বন্ধন মানেই দুঃখ, সম্বন্ধ মানেই সুখ। এখন এই কর্ম-বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। বুদ্ধিতে
রয়েছে যে আমরা এখন ব্রাহ্মণ সম্বন্ধে আছি, এরপরে দেবতা সম্বন্ধে যাবো। ব্রাহ্মণ
সম্বন্ধে এই একটাই জন্ম হয়। এরপর ৮ এবং ১২ জন্ম ধরে দেবতা সম্বন্ধে থাকবো। বুদ্ধিতে
এই জ্ঞান আছে বলে তোমরা এই কলিযুগের পতিত কর্ম-বন্ধনের একপ্রকার গ্লানি করো। এই
দুনিয়ার কর্ম-বন্ধনের মধ্যে এখন আর থাকতে হবে না। তোমরা বুঝেছো যে এগুলো সব আসুরিক
কর্ম-বন্ধন। আমরা গুপ্ত ভাবে একটা যাত্রা করছি। বাবা আমাদের এই যাত্রা শিখিয়েছেন।
এরপর এই কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কর্মাতীত হয়ে যাবে। এই কর্ম-বন্ধন গুলো তো এবার
অবশ্যই ছিন্ন হবে। পবিত্র হয়ে সৃষ্টিচক্রকে বুঝে চক্রবর্তী রাজা হওয়ার জন্য আমরা
বাবাকে স্মরণ করছি। পড়াশুনা তো করছি, কিন্তু এর একটা এইম অবজেক্ট বা প্রাপ্তি তো
অবশ্যই থাকবে। তোমরা জানো যে অসীম জগতের বাবা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন। ৫ হাজার বছর
আগেও তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। যাদেরকে আগের কল্পে পড়িয়েছিলেন, তাদেরকেই এখন
পড়াবেন। ধীরে ধীরে আসতে থাকবে, বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সবাই তো আর সত্যযুগে আসবে না।
বাকিরা সকলে বাড়ি ফিরে যাবে। এই পাড়ে নরক, আর ওই পাড়ে স্বর্গ। জাগতিক পড়াশুনাতে ওরা
জানে যে আমরা এখানে পড়ছি এবং এখানেই ফল পাবো। কিন্তু এখানে আমরা সঙ্গমযুগে পড়ছি আর
নুতন দুনিয়াতে গিয়ে এর ফল পাবো। এটা তো নুতন কথা। দুনিয়ায় কেউই এইরকম বলবে না যে এর
প্রাপ্তি তোমরা পরের জন্মে পাবে। এই জন্মেই আগামী জন্মের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার
ঘটনা কেবল এই সঙ্গমযুগেই ঘটে। বাবাও এই সঙ্গমযুগেই আসেন। তোমরা উত্তম পুরুষ হওয়ার
জন্য পড়াশুনা করছো। কেবল এই একবার-ই ভগবান এসে অমরপুরীর জন্য শিক্ষা দেন। এটা হলো
কলিযুগ বা মৃত্যুপুরী। আমরা পড়াশোনা করি সত্যযুগের জন্য। নরকবাসী থেকে স্বর্গবাসী
হওয়ার জন্য পড়াশুনা করছি। এটা হলো অন্যের দেশ। ওটা আমাদের দেশ। আমাদের ওই দেশে
বাবাকে আসার দরকার হয় না। ওই দেশ হলো বাচ্চাদের জন্যই, ওখানে সত্যযুগে রাবণের আগমন
হয় না। রাবণ উধাও হয়ে যায়। পুনরায় দ্বাপরযুগে আসে। তাই বাবাও উধাও হয়ে যান। সত্যযুগে
ওনাকে কেউ জানবে না। তাই স্মরণ তবে কেন করবে । যখন সুখের প্রালব্ধ শেষ হয়ে যায়, তখন
পুনরায় রাবণের রাজত্ব শুরু হয়। একে পরের দেশ বলা হয় ।
এখন তোমরা বুঝতে পারো
যে আমরা সঙ্গমযুগে রয়েছি, আমরা পথ প্রদর্শক বাবাকে পেয়েছি। বাকি সবাই তো ধাক্কা খেতে
থাকে । যারা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে, যারা আগের কল্পেও এই রাস্তায় চলেছিল, তারা আসতে
থাকবে। তোমরা পান্ডারা সকলকে রাস্তা বলে দিচ্ছো। এটা হলো আধ্যাত্মিক যাত্রার রাস্তা।
সোজা চলে যাবে সুখধামে। তোমরা পান্ডারা হলে পাণ্ডব সম্প্রদায়। কিন্তু পাণ্ডবদের
রাজত্ব বলা যাবে না। রাজত্ব পাণ্ডবদেরও নয়, আর কৌরবদেরও নয়। কেউই মুকুটধারী নয়।
ভক্তিতে তো সবাইকেই মুকুট দিয়ে দিয়েছে। যদি দেওয়াও হয়, কৌরবদেরকে তো লাইটের মুকুট
দেওয়া যাবে না। পাণ্ডবদেরকেও লাইটের মুকুট দেওয়া যাবে না। কারণ তারা হলো পুরুষার্থী।
চলতে চলতে যদি পড়ে যায় তবে কিভাবে মুকুট দেওয়া সম্ভব? তাই এইসব অলঙ্কার বিষ্ণুকে
দেওয়া হয়েছে কারণ তিনি হলেন পবিত্র। সত্যযুগে সবাই পবিত্র এবং সম্পূর্ণ নির্বিকার
হবে, পবিত্রতার লাইটের মুকুট থাকবে। এখন তো কেউই পবিত্র নয়। সন্ন্যাসীরা বলে যে ওরা
পবিত্র। কিন্তু দুনিয়াটাই তো অপবিত্র। এই বিকারগ্রস্থ দুনিয়াতেই তো জন্ম নেয়। এটা
হলো রাবণের পতিত দুনিয়া। সত্যযুগ হলো পবিত্র রাজ্য বা নুতন দুনিয়া। বাচ্চারা,
তোমাদেরকে এখন বাগানের মালিক বাবা এসে কাঁটা থেকে ফুল বানাচ্ছেন। তিনি একাধারে
পতিত-পাবন, মাঝি এবং বাগানের মালিক। বাগানের মালিক এসেছেন কাঁটার জঙ্গলে। তোমাদের
চিফ কমান্ডার তো একজনই। শঙ্করকে কি যাদবদের কমান্ডার বলা যাবে? সে তো আসলে বিনাশ করে
না। সময় হলে এমনিই লড়াই লেগে যায়। মানুষ বলে শঙ্করের প্রেরণার দ্বারা মুষল ইত্যাদি
তৈরি হয়। বসে বসে যতসব গল্প-কথা বানিয়েছে। পুরাতন দুনিয়ার বিনাশ তো অবশ্যই হবে। বাড়ি
পুরাতন হয়ে গেলে এমনিই পড়ে যায়। মানুষ মারা যায়। এই পুরাতন দুনিয়াও বিনষ্ট হবে। সকলে
চাপা পড়ে মারা যাবে। অনেকের ডুবে মৃত্যু হবে। কেউ আবার শক পেয়ে মারা যাবে। বম্বস্
ইত্যাদির বিষাক্ত বায়ুও অনেককে মেরে ফেলবে। বাচ্চাদের বুদ্ধিতে রয়েছে যে এখন অবশ্যই
বিনাশ হবে। আমরা ওই পাড়ে যাচ্ছি। কলিযুগের সমাপ্তির পর অবশ্যই সত্যযুগের স্থাপন হবে।
তারপর অর্ধেক কল্প আর কোনো লড়াই হবে না।
এখন বাবা এসেছেন
পুরুষার্থ করানোর জন্য। এটাই শেষ সুযোগ। দেরি করলে এরপর হয়তো হঠাৎই একদিন মারা যাবে।
মৃত্যু সামনে উপস্থিত । মানুষ তো বসে থাকতে থাকতে হঠাৎই মারা যায় । মারা যাওয়ার আগে
তো স্মরণের যাত্রা করে নাও। বাচ্চারা, এখন তোমাদেরকে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই বাবা
বলছেন - নিজ নিকেতনকে (পরমধাম ঘর) স্মরণ করো। এর দ্বারাই অন্তিম কালে যেমন মতি
তেমনই গতি (মুক্তি) হয়ে যাবে, ঘরে চলে যাবে। কিন্তু কেবল ঘরকে স্মরণ করলে পাপ নাশ
হবে না। বাবাকে স্মরণ করলেই পাপ নাশ হবে এবং তোমরা ঘরে চলে যাবে। তাই বাবাকে স্মরণ
করো। নিজের চার্ট লিখলে বুঝতে পারবে যে আমি সারাদিনে কি কি করেছি? ৫-৬ বছর বয়স থেকে
কি কি করেছি… সেইসব তো অবশ্যই মনে থাকে। এমন নয় যে সারাদিন ধরে লিখতে হবে। মনে রাখতে
হবে। বাগানে বসে বাবাকে স্মরণ করেছি, দোকানে যখন খদ্দের ছিল না তখন স্মরণ করছি।
এইসব মনে রাখতে হবে। লিখে রাখতে চাইলে তো সঙ্গে ডায়রী রাখতে হবে। আসল কথা হলো আমরা
কিভাবে তমোপ্রধান থেকে সতোপ্রধান হবো, পবিত্র দুনিয়ার মালিক হবো। বাবা এসে এই নলেজ
দিচ্ছেন। বাবা-ই হলেন জ্ঞানের সাগর। তোমরা সকলেই বলো - বাবা, আমি তো তোমারই, সর্বদা
তোমারই ছিলাম। ভুল করে দেহ-অভিমানী হয়ে গেছিলাম। এখন তুমি বলে দিয়েছো, তাই পুনরায়
দেহী- অভিমানী হচ্ছি। সত্যযুগে তো আমরা দেহী-অভিমানী ছিলাম, খুশি হয়ে একটা শরীর
ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করতাম। বাচ্চারা, তোমাদেরকে এই সমস্ত জ্ঞান ধারণ করতে হবে
এবং অন্যকে বোঝানোর যোগ্যও হতে হবে। তাহলেই অনেকের কল্যাণ হবে। বাবা জানেন যে
পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে সবাই সেবার যোগ্য হচ্ছে। আচ্ছা, যদি কাউকে কল্পবৃক্ষের
জ্ঞান বোঝাতে না পারো, তবে এটা তো সবাইকে বলো যে তুমি নিজেকে আত্মা অনুভব করে বাবাকে
স্মরণ করো। এটা তো খুবই সহজ। বাবা নিজেই বলছেন, আমাকে স্মরণ করলেই বিকর্মের বিনাশ
হবে। তোমরা ব্রাহ্মণরা ছাড়া আর অন্য কোনো মানুষ এইরকম বলতে পারবে না। অন্য কেউ
আত্মাকেও জানে না, পরমাত্মাকেও জানে না। সরাসরি কাউকে বলে দিলে তীর লাগবে না।
ভগবানের প্ৰকৃত রূপকে জানতে হবে। এরা সবাই হলো নাটকের অ্যাক্টর্স। প্রত্যেক আত্মা-ই
তার শরীরের সাথে অ্যাক্ট করে। এক শরীর ত্যাগ করার পর আবার অন্য শরীর ধারণ করে পার্ট
প্লে করে। ওই অ্যাক্টররা পোশাক বদল করে ভিন্ন ভিন্ন পার্ট প্লে করে। তোমরাও সেইরকম
শরীর পরিবর্তন করো। তারা কখনো কখনো মেল বা ফিমেলের ড্রেস পরে কিছু সময়ের জন্য।
কিন্তু এক্ষেত্রে মেল এর পোশাক পরলে তখন সারা জীবন সে মেলই থাকবে। ওটা হলো সীমাবদ্ধ
দুনিয়ার ড্রামা, এটা সীমাহীন জগতের । বাবার সর্বপ্রথম এবং মুখ্য উপদেশ হলো - আমাকে
স্মরণ করো। ‛যোগ’ কথাটাও ব্যবহার করো না। কারণ মানুষ অনেক রকমের যোগ শেখে। ওগুলো সব
ভক্তিমার্গের। বাবা এখন বলছেন, আমাকে এবং ঘরকে স্মরণ করলেই তুমি ঘরে চলে যাবে। এনার
মধ্যে এসে শিববাবা শিক্ষা দেন। বাবাকে স্মরণ করতে করতে তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। তখন
আত্মা উড়তে পারবে। যতবেশি স্মরণ করে থাকবে, সার্ভিস করে থাকবে, ততো ভালো পদ পাবে।
স্মরণেই অনেক বেশি বিঘ্ন আসে। পবিত্র না হলে, ধর্মরাজ-পুরীতে শাস্তি খেতে হবে। তখন
অসম্মানিতও হবে এবং পদভ্রষ্টও হবে। অন্তিমে সব সাক্ষাৎকার হবে। কিন্তু তখন আর কিছুই
করতে পারবে না। তোমাদের সাক্ষাৎকার করাবে যে - তোমাদেরকে অনেক বুঝিয়েছিলাম, কিন্তু
তোমরা তাও স্মরণ করোনি। তাই পাপের বোঝা রয়ে গেছে। এখন শাস্তি খাও। তখন আর পড়াশুনার
টাইম লাগবে না। আফসোস করবে - হায়! আমি কত বড় ভুল করেছি, অযথা সময় নষ্ট করেছি। কিন্তু
শাস্তি তো তখন খেতেই হবে। কিছুই করার থাকবে না। যদি ফেল করে যাও তবে সেটাই রয়ে যাবে।
তারপর আর পড়াশুনা করার প্রশ্নই আসে না। ওই পড়াশুনাতে তো ফেল করার পর পুনরায় পড়াশুনা
করে। কিন্তু এখানে তো পড়াশুনা-ই সমাপ্ত হয়ে যায়। অন্তিম সময়ে যাতে প্রায়শ্চিত্ত করতে
না হয়, তার জন্য বাবা রায় দিচ্ছেন - বাচ্চারা, ভালো করে পড়াশুনা করো। পরনিন্দা,
পরচর্চা করে নিজের সময় অপচয় করো না। নাহলে অনেক প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মায়া অনেক
উল্টোপাল্টা কাজ করিয়ে নেয়। হয়তো কোনোদিনও চুরি করোনি, সেটাও মায়া করিয়ে নেবে। পরে
মনে হবে যে মায়া তো আমাকে বোকা বানিয়ে দিয়েছে। আগে অন্তরে সঙ্কল্প আসবে যে অমুক
জিনিসটা নেবো? ঠিক ভুলের বিচার করার বুদ্ধি তো তোমরা পেয়েছো। এই জিনিসটা নেওয়া
অনুচিত হবে। না নেওয়াটাই ঠিক হবে। তাহলে এখন কি করতে হবে? পবিত্র থাকা তো অতি উত্তম।
সঙ্গদোষে এসে অবহেলা করা উচিত নয়। আমরা তো ভাই-বোন। তাহলে নাম-রূপে ফেঁসে যাও কেন?
দেহ-অভিমানের বশীভূত হওয়া উচিত নয়। কিন্তু মায়াও অতি বলবান, কুকর্ম করার সঙ্কল্প
নিয়ে আসে। বাবা বলছেন, তোমাদের এখন কুকর্ম করা উচিত নয়। এইভাবে লড়াই হয়। তারপর হয়তো
এক সময়ে পড়ে যায়। তারপর আর তাদের সুবুদ্ধি হয় না। আমাদেরকে এখন ভালো কর্ম করতে হবে।
অন্ধের লাঠি হতে হবে। এটা হলো সবথেকে ভালো কাজ। শরীর নির্বাহের জন্য তো সময় রয়েছে।
রাত্রে ঘুমাতেও হবে। আত্মা ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুমিয়ে যায়। শরীরও বিশ্রাম করে। তাই
শরীর নির্বাহ এবং বিশ্রাম করার জন্য তো সময় দিতে হয়। বাকি সময়ে আমার সেবাতে লেগে
যাও। স্মরণের চার্ট রাখো। লিখতে আরম্ভ করে, কিন্তু চলতে চলতে ফেল হয়ে যায়। বাবাকে
স্মরণ না করলে, সেবা না করলে খারাপ কাজ হতেই থাকবে। আচ্ছা !
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
পরনিন্দা-পরচর্চা করে নিজের সময় ওয়েস্ট ক'রো না। যাতে মায়া কোনো উল্টোপাল্টা কাজ
না করিয়ে নেয় তার খেয়াল রাখতে হবে। সঙ্গদোষে এসে কখনো লুজ হবে না। দেহ-অভিমানে এসে
কারোর নাম-রূপে ফেঁসে যাবে না।
২ ) পরমধাম ঘরকে
স্মরণ করার সাথে সাথে বাবাকেও স্মরণ করতে হবে। স্মরণের চার্টের ডায়রী বানাতে হবে।
নোট করতে হবে - সারাদিনে আমি কি কি করেছি? কতটা সময় বাবাকে স্মরণ থেকেছি।
বরদান:-
নম্রতা
রূপী কবচের দ্বারা ব্যর্থের রাবণকে দহনকারী সত্যিকারের স্নেহী, সহযোগী ভব
কেউ যতই তোমাদের
সংগঠনের ত্রুটি বিচ্যুতি খোঁজার চেষ্টা করুক কিন্তু সংস্কার-স্বভাবের এতটুকুও টক্কর
যেন দেখা না দেয় । কেউ যদি গালিও দেয়, ইনসাল্ট করে ,তোমরা সেন্ট (সন্ত/পবিত্র
ব্যক্তি) হয়ে যাও। যদি কেউ রং (ভুল) করে তুমি রাইট (সঠিক) থাকো। যদি কেউ টক্কর নেয়
তথাপি তুমি তার প্রতি স্নেহের জল প্রদান করো। এটা কি, এটা কেন ‐ এই সঙ্কল্প করে
আগুনে তেল ঢালবে না। নম্রতার কবচ পরে থাকো। যেখানে নম্রতা থাকবে সেখানে স্নেহ আর
সহযোগ অবশ্যই থাকবে।
স্লোগান:-
আমিত্বের অনেক সীমিত ভাবনাকে এক "আমার বাবা"তে সমাহিত করে দাও।
অব্যক্ত ইশারা :-
আত্মিক রয়্যালটি আর পিউরিটির পার্সোনালিটি ধারণ করো
রূহানী রয়্যালটির
ফাউন্ডেশন হলো সম্পূর্ণ পবিত্রতা। সুতরাং নিজেকে জিজ্ঞাসা করো রূহানী রয়্যালটির চমক
আর নেশা কি তোমার চেহারা এবং আচরণ সকলে অনুভব করে? নলেজের দর্পণে নিজেকে দেখো যে
আমার মুখমণ্ডলে এবং আচরণে রূহানী রয়্যালটি দেখা যায়, নাকি সাধারণ চালচলন এবং
চেহারাই দেখা দেয়?