21-12-2025 প্রাতঃ
মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ
05-03-2008 মধুবন
"সঙ্গমের ব্যাঙ্কে সাইলেন্সের শক্তি এবং শ্রেষ্ঠ
কর্ম জমা করো, শিব মন্ত্রের দ্বারা আমিত্বভাবের পরিবর্তন করো"
আজ বাপদাদা চতুর্দিকে বাচ্চাদের স্নেহ দেখছেন। তোমরাও সবাই স্নেহের বিমানে এখানে
পৌঁছে গেছ। স্নেহের এই বিমান অনেক সহজে স্নেহীর কাছে পৌঁছে দেয়। বাপদাদা দেখছেন যে
আজ সবাই বিশেষভাবে লভলীন আত্মারা পরমাত্ম ভালোবাসার দোলায় দুলছে। বাপদাদাও
চতুর্দিকের বাচ্চাদের স্নেহে সমাহিত হয়ে আছেন। এই পরমাত্ম স্নেহ সহজে বাবা সমান
বানিয়ে দেয়। ব্যক্ত ভাবের ঊর্ধ্বে অব্যক্ত স্থিতিতে অব্যক্ত স্বরূপে স্থিত করে।
বাপদাদাও সব বাচ্চাকে সমান স্থিতিতে দেখে প্রফুল্লিত হচ্ছেন।
আজকের দিনে বাবা এবং নিজের জন্মদিন শিবরাত্রি, শিবজয়ন্তী উদযাপন করতে বাচ্চারা সবাই
এখানে এসেছে। বাপদাদাও নিজের নিজের বতন থেকে তোমরা সব বাচ্চার জন্মদিন উদযাপন করতে
পৌঁছে গেছেন। সারা কল্পে বাবার আর তোমাদের জন্মদিন স্বতন্ত্র এবং অতি অনুপম। সারা
কল্পে কারও বার্থডে পরম আত্মা উদযাপন করেন না। আত্মা, আত্মার জন্মদিন পালন করে
কিন্তু তোমরা সব আত্মার এই অলৌকিক জন্ম পরম আত্মা উদযাপন করেন। সাথে এই জন্মের
বিশেষত্ব আরও অলৌকিক, যা সারা কল্পে হতে পারে না। এইরকম কখনো শুনবে না যে বাবা আর
বাচ্চাদের একই দিনে বার্থডে হয়। তো এই জন্মদিনের এটাই মহত্ত্ব যে বাবা আর বাচ্চাদের
একই দিনে জন্মদিন, তোমরা সবাই বাবার সাথে উদযাপন করছ। এই জন্মদিনকে শিবজয়ন্তীও বলা
হয় এবং শিবরাত্রিও বলে। তো জন্মের সাথে কর্তব্যেরও স্মরণিক। অন্ধকার ঘুচে যাওয়ার আর
প্রকাশ ছড়িয়ে পড়ার স্মরণিক। তো এমন অলৌকিক জন্মদিন বাপদাদার সাথে উদযাপনকারী তোমরা
ভাগ্যবান আত্মা। বাবা বাচ্চাদের এই দিব্য জন্মের পদ্ম পদ্মগুন শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন
করছেন, শুভ ভাবনা শুভ কামনা জানাচ্ছেন এবং হৃদয়ের স্মরণ-স্নেহ দিচ্ছেন। অভিনন্দন,
পদ্মগুন অভিনন্দন, অভিনন্দন।
ভক্তরাও এই উৎসবকে মহান ভাবনা এবং ভালোবাসার সাথে উদযাপন করে। তোমরা এই দিব্য জন্মে
যে শ্রেষ্ঠ অলৌকিক কর্ম করেছো, এখনও করছো। সেটা তারা স্মারক রূপে হতে পারে
অল্পকালের জন্য অল্প সময়ের জন্য উদযাপন করে, কিন্তু ভক্তদেরও চমৎকারিত্ব আছে। যারা
স্মরণিক উদযাপন করে, যারা স্মারকচিহ্ন বানায়, দেখো তাদেরও কত চমৎকারিত্ব! তোমাদের
কপি করার ব্যাপারে তারা যে দক্ষ সেটা তো বেরিয়েছে, কেননা তারা তোমাদেরই ভক্ত তো না!
তো তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের ফল, যারা তোমাদের স্মারকচিহ্ন বানায় তাদের বরদান রূপে
প্রাপ্ত হয়েছে। তোমরা এক জন্মের জন্য একবার ব্রত নিয়ে থাকো সম্পূর্ণ পবিত্রতার। তারা
তো কপি করেছে একদিনের জন্য, পবিত্রতার ব্রতও রাখে। তোমাদের পুরো জন্ম পবিত্র অন্নের
ব্রত আর তারা একদিন ব্রত রাখে। তো বাপদাদা আজ অমৃতবেলায় দেখছিলেন যে তোমাদের সকলের
ভক্তরাও কম নয়। তাদেরও বিশেষত্ব ভালোই রয়েছে। তো তোমরা সবাই পুরো জন্মের জন্য পাকা
ব্রত নিয়েছ? হতে পারে তা' ভোজনপান করার অথবা মনের সঙ্কল্পের পবিত্রতার, কিংবা বচনের,
কর্মের; সম্বন্ধ-সম্পর্কে ব্যবহারে এসে পুরো জন্মের জন্য কর্মের পাকা ব্রত নিয়েছো?
নিয়েছো, নাকি অল্প অল্প নিয়েছো? পবিত্রতা ব্রাহ্মণ জীবনের আধার। পূজ্য হওয়ার আধার।
শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির আধার। তো ভাগ্যবান আত্মারা যারা এখানে পৌঁছে গেছো তারা চেক করো
যে এই জন্মে পবিত্র হওয়ার উৎসব চার প্রকারে, শুধু ব্রহ্মচর্যের পবিত্রতা নয়, বরং
মন-বচন-কর্ম সম্বন্ধ-সম্পর্কেও পবিত্রতা। এই পাকা ব্রত নিয়েছো? নিয়েছ তোমরা? যারা
নিশ্চিতরূপে নিয়েছ, অল্প অল্পও অনিশ্চিত নয়, তারা হাত তোলো। পাক্কা,পাক্কা? কতটা
পাক্কা? কেউ যদি তোমাদের নাড়িয়ে দেয় নড়ে যাবে? যাবে নড়ে? নড়বে না? কখনো কখনো মায়া
এসে যায় তো না! নাকি না? মায়াকে বিদায় দিয়ে দিয়েছো? নাকি কখনো কখনো সম্মতি দিয়ে দাও,
সে এসে যায়! চেক করো - তো নিশ্চিত ব্রত নিয়েছো? সদাসর্বদার জন্য ব্রত নিয়েছ? নাকি
কখনো কখনোর? কখনো অল্প, কখনো অনেক, কখনো পাকা, কখনো কাঁচা - এইরকম নও তো না! কেননা,
বাপদাদা মানেন যে বাপদাদার প্রতি ভালোবাসার ব্যাপারে তোমরা সবাই ১০০ পার্সেন্ট
থেকেও বেশি। যদি বাপদাদা জিজ্ঞাসা করেন যে বাবার প্রতি কতটা ভালোবাসা আছে? সবাই
অনেক উৎসাহ- উদ্দীপনার সাথে হাত তোলে। ভালোবাসার ব্যাপারে অল্প সংখ্যকেরই
পার্সেন্টেজ কম হয়, মেজরিটির পার্সেন্টেজ বেশি আছে। তো ভালোবাসার ক্ষেত্রে যেমন পাশ
হও, তেমন পবিত্রতার ব্রততে চার রূপে মন্সা-বাচা-কর্মণা, সম্বন্ধ-সম্পর্ক এই চার
রূপেই সম্পূর্ণ পবিত্রতার ব্রত পালনে পার্সেন্টেজ এসে যায়। এখন বাপদাদা কী চান?
বাপদাদা এটাই চান, যে প্রতিজ্ঞা তোমরা করেছ সমান হওয়ার, তো প্রত্যেক বাচ্চার
চেহারাতে বাবার মূর্তরূপ যেন প্রতীয়মান হয়। প্রতিটা বোলে বাবা সমান বোল হবে,
বাপদাদার বোল বরদান রূপ হয়ে যায়। তো তোমরা সবাই এটা চেক করো, আমাদের চেহারায় বাবার
মূর্তরূপ প্রতীয়মান হয় কিনা! বাবার মূর্তরূপ কী? সম্পন্ন, সব বিষয়ে সম্পন্ন। এরকম
প্রত্যেক বাচ্চার নয়ন, প্রত্যেক বাচ্চার মুখ বাবা সমান হয়েছে? সদা হাস্যময় মুখ থাকে?
নাকি কখনো চিন্তিত, কখনো ব্যর্থ সঙ্কল্পের ছায়া থাকে, কখনো উদাস, কখনো খুব পরিশ্রমী,
এরকম মুখ থাকে না তো? সদা গোলাপ, কখনো গোলাপের মতো প্রস্ফুটিত মুখমণ্ডল, কখনো অন্য
কিছু যেন না হয়ে যায়। কেননা, জন্মানোর সাথে সাথেই বাপদাদা এটাও বলে দিয়েছেন যে মায়া
তোমাদের এই শ্রেষ্ঠ জীবনের সাথে মুখোমুখি প্রতিরোধ করবে। কিন্তু মায়ার কাজ হলো আসা,
তোমরা সদা পবিত্রতার ব্রত ধারণকারী আত্মাদের কাজ হলো দূর থেকেই মায়াকে বিতাড়ন করা।
বাপদাদা দেখেছেন, কিছু বাচ্চা মায়াকে দূর থেকে বিতাড়িত করে না, মায়া এসে যায়, আসতে
দাও তোমরা অর্থাৎ মায়ার প্রভাবে এসে যাও। যদি দূর থেকে বিতাড়িত না করো তবে মায়ারও
অভ্যাস হয়ে যায়, কেননা, সে জেনে যায় যে এখানে আমাকে বসতে দেবে, বসতে দেওয়ার লক্ষণ
হলো মায়ার আসা, তোমরা অনুমান করতে পারো যে এটা মায়া, কিন্তু তবুও কী ভাবো তখন?
থোড়াই এখন সম্পূর্ণ হয়েছি, কেউ সম্পূর্ণ হয়নি। এখন তো হচ্ছি, হয়ে যাবো, বো বো (ভবিষ্যৎ
সূচক) যদি করতে থাকো তবে মায়ার বসার অভ্যাস হয়ে যায়। আজ তো জন্মদিন উদযাপন করছ।
বাবাও আশিস, অভিনন্দন জানাচ্ছেন, কিন্তু বাবা প্রত্যেক বাচ্চাকে এমনকি লাস্ট নম্বর
বাচ্চাকেও কী রূপে দেখতে চান? লাস্ট নম্বরও বাবার প্রিয় তো না! তো বাবা লাস্ট
নম্বরের বাচ্চাকেও সদা গোলাপ রূপে দেখতে চান, প্রস্ফুটিত। ঝিমিয়ে পড়া নয়। ঝিমিয়ে
পড়ার কারণ হলো সামান্য আসাবধানতা। হয়ে যাবে, দেখে নেবো, করেই নেবো, পৌঁছেই যাবো...
তো এই বো বো এর ভবিষ্যৎ সূচক ভাষা নিচে ফেলে দেয়। তো চেক করো - কত সময় কেটে গেছে,
এখন সময়ের নৈকট্য আরও আচম্বিতে হওয়ার ইশারা তো বাপদাদা দিয়েই দিয়েছেন। দিচ্ছেন নয়,
দিয়ে দিয়েছেন। এরকম সময়ের জন্য এভাররেডি, অ্যালার্ট থাকা আবশ্যক। অ্যালার্ট থাকার
জন্য চেক করো - আমার মন আর বুদ্ধি সদা ক্লিন আর ক্লিয়ার আছে? ক্লিনও চাই, ক্লিয়ারও
চাই। তার জন্য সময়মতো বিজয় প্রাপ্ত করতে মনে, বুদ্ধিতে ক্যাচিং পাওয়ার আর টাচিং
পাওয়ার দুইই খুব আবশ্যক। এমন সারকমস্ট্যান্স আসার আছে যে হয়তো দূরে কোথাও বসে আছ,
তোমার মন আর বুদ্ধি যদি ক্লিয়ার থাকে তখন বাবার ইশারা, ডিরেকশন, শ্রীমৎ যা প্রাপ্ত
হওয়ার থাকে সেসব ক্যাচ করতে পারবে। তোমার টাচ হবে এটা করতে হবে, আর এটা করতে হবে
না। সেইজন্য বাপদাদা আগেও বলেছেন, বর্তমান সময়ে সাইলেন্সের শক্তি যতটা সম্ভব নিজের
কাছে জমা করো। যাতে যখনই চাও, যেভাবে চাও সেভাবে মন আর বুদ্ধিকে কন্ট্রোল করতে পারো।
ব্যর্থ সঙ্কল্প স্বপ্নেও যেন টাচ না করে, এইরকম মাইন্ড কন্ট্রোল চাই। তাইতো কথিত আছে
যে মন জিততে পারে সেই জগতজিত। স্থূল কর্মেন্দ্রিয় হাত যেমন যখন চাও যতক্ষণ চাও
ততক্ষণ অর্ডারে চালনা করতে পারো, ঠিক তেমনই মন আর বুদ্ধির কন্ট্রোলিং পাওয়ার আত্মাতে
সবসময় ইমার্জ থাকতে হবে। এমন নয় যে যোগের সময় অনুভব হয় কিন্তু কর্মের সময়,
ব্যবহারের সময়, সম্বন্ধের সময় অনুভব কম হবে! পেপার আসবে আচম্বিতে। কেননা, ফাইনাল
রেজাল্টের আগেও মাঝে মধ্যেই তোমাদের পেপার দিয়ে যেতে হবে।
তো এই বার্থডে-তে কী বিশেষত্ব করবে? সাইলেন্সের শক্তি যত জমা করতে পারো। এক সেকেন্ডে
সুইট সাইলেন্সের অনুভূতিতে ডুবে যাও, কেননা, সায়েন্স আর সাইলেন্স অতির মধ্যে দিয়ে
যাচ্ছে। তো সায়েন্সের ঊর্ধ্বে সাইলেন্সের শক্তির বিজয় পরিবর্তন করবে। সাইলেন্সের
শক্তি দ্বারা দূরে বসেও কোনো আত্মাকে সহযোগও দিতে পারো। সকাশ দিতে পারো। বিভ্রান্ত
মনকে শান্ত করতে পারো। ব্রহ্মা বাবাকে দেখেছ, যখনই কোনো অনন্য বাচ্চা সামান্য
অস্থিরতা বা শারীরিক হিসেবনিকেশের মধ্যে থেকেছে তখন ভোর ভোর উঠে সেই বাচ্চাকে
সাইলেন্সের শক্তির সকাশ দিয়েছেন আর সে অনুভব করতো। তো অন্তে এই সাইলেন্সের সেবার
সহযোগ দিতে হবে। সার্কমস্ট্যান্স অনুসারে এটা খুব খেয়ালে রেখো, সাইলেন্সের শক্তি
কিংবা নিজের শ্রেষ্ঠ কর্মের শক্তি সঞ্চয় করার ব্যাঙ্ক কেবল এখনই খোলে। অন্য কোনো
জন্মে জমা করার ব্যাঙ্ক নেই। এখন যদি জমা না করেছ তারপর তো ব্যাঙ্কই থাকবে না তো
কিসে জমা করবে! সেইজন্য জমার শক্তি যত একত্রিত করতে চাও ততটা করতে পারো। বাস্তবে,
লোকেও বলে, যা করতে হবে তা' এখনই করে নাও। যা ভাবার বিষয় আছে তা' ভেবে নাও। এখন
যেটাই ভাববে সেই ভাবনা ভাবনাই থাকবে, আর কিছু সময় পরে যখন সময়ের সীমা কাছাকাছি আসবে,
তখন ভাবনা অনুশোচনায় বদলে যাবে। এটা করতাম, এটা করা উচিত ছিল... তো ভাবনা থাকবে না,
অনুতাপে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সেইজন্য বাপদাদা আগে থেকেই ইশারা দিচ্ছেন। সাইলেন্সের
শক্তি, যা কিছুই হোক না কেন, এক সেকেন্ডে সাইলেন্সে হারিয়ে যাও। এটা নয়, তোমরা
পুরুষার্থ করছ! এখন সঞ্চয়ের পুরুষার্থ করতে পারো।
তো বাচ্চাদের প্রতি বাপদাদার স্নেহ রয়েছে, বাপদাদা প্রত্যেক বাচ্চাকে সাথে নিয়ে যেতে
চান। যে প্রতিজ্ঞা আছে সাথে থাকবে, সাথে যাবে... সেই প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য যারা
সমান হয় তারা সাথে যাবে। তোমাদের বলা হয়েছিল তো না-! হাতে হাত রেখে চলা ডবল
ফরেনারদের ভালো লাগে, অতএব, শ্রীমতের হাতে যেন হাত থাকে, যা বাবার শ্রীমত সেটাই
তোমাদের মত - তাকেই বলে হাতে হাত। তো ঠিক আছে - আজ বার্থ ডে উৎসব উদযাপন করতে এসেছ
তো না! বাপদাদাও খুশি যে আমার বাচ্চারা, বাবার গর্ব যে আমার বাচ্চারা সদা উৎসাহে
থেকে উৎসব উদযাপন করে। প্রতিদিন উৎসব উদযাপন করো নাকি বিশেষ দিনে? সঙ্গম যুগেই উৎসব
হয়। যুগই উৎসবের। আর কোনো যুগ সঙ্গম যুগের মতো নয়। তো সবার উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে তো
না যে আমাকে সমান হতেই হবে! হবে? হতেই হবে, নাকি দেখবো, হবো, করবো, বো বো তো নেই?
যারা মনে করছ হতেই হবে তারা হাত তোলো। হতেই হবে, ত্যাগ করতে হবে, তপস্যা করতে হবে।
যে কোনও কিছু ত্যাগ করতে তোমরা প্রস্তুত? সর্বাপেক্ষা বড় ত্যাগ কী? ত্যাগ করার
ব্যাপারে সবচাইতে বড় একটা শব্দ বিঘ্ন উৎপন্ন করে। ত্যাগ তপস্যা বৈরাগ্য, অসীম
বৈরাগ্য, এই একটা শব্দ থেকেই বিঘ্ন উদ্ভূত হয়। তোমরা তো জানো। সেই এক শব্দ কী? ''আমি'',
বডি কন্সাসনেসের আমি। সেইজন্য বাপদাদা বলেছেন, যেমন, এখন তোমরা যখনই আমার বলো তখন
প্রথমে কী স্মরণে আসে? আমার বাবা। আসে, আমার বাবা স্মরণে আসে তো না! যদি বা 'আমার'
শব্দ দ্বারা অন্য কিছু করো, তবুও আমার বলায় এটা অভ্যাস হয়ে গেছে প্রথমে বাবা।
এভাবেই যখন আমি বলো, "আমার বাবা" বলো এটা যেমন তোমরা ভুলে যাও না, কখনো কাউকে যদি
আমার বলো তো বাবা শব্দ আসেই, তেমনই যখন আমি বলো তখন আগে আত্মা যেন স্মরণে আসে। আমি
কে, আত্মা। আমি আত্মা এটা করছি। আমি আর আমার, সীমাবদ্ধতার আমি থেকে বদলে যেন অসীমের
হয়ে যায়। এটা হতে পারে? পারে হতে? কাঁধ তো নাড়াও। অভ্যাস তৈরি করো - আমি, বলামাত্র
যেন আত্মা আসে। আর যখন আমিত্ব ভাব আসে তখন একটা শব্দ যেন স্মরণে আসে - করাবনহার কে?
বাবা করাবনহার করাচ্ছেন। করাবনহার শব্দ উচ্চারণ করার সময় সদা স্মরণে থাকলে আমিত্ব
ভাব আসবে না। আমার বিচার, আমার ডিউটি, ডিউটিরও অনেক নেশা থাকে। আমার ডিউটি ...
কিন্তু যিনি দেন সেই দাতা কে! এই সমূহ ডিউটি প্রভুর দান। প্রভুর দানকে আমি মনে করা,
ভাবো এটা ভালো?
প্রতিটা স্থান থেকে বাপদাদা রেজাল্ট চান। এই এক মাস এমন ন্যাচারাল নেচার বানাও,
কেননা ন্যাচারাল নেচার তাড়াতাড়ি বদলায় না। তো ন্যাচারাল নেচার বানাও, তোমাদের বলা
হয়েছিল তো না - যেন সদা তোমাদের মুখমণ্ডল দ্বারা বাবার গুণ প্রতীয়মান হয়। আচরণ
দ্বারা বাবার শ্রীমত প্রকাশিত হয়। সদা সহাস্য মুখমণ্ডল হবে। হাবভাব হবে সদা
সন্তুষ্ট থাকার আর সন্তুষ্ট করার। সব কর্মে, কর্ম আর যোগের যেন ব্যালেন্স থাকে।
অনেক বাচ্চা বাপদাদাকে খুব ভালো ভালো বিষয় বলে থাকে। বাবা বলবেন, তোমরা কী বলো?
তোমরা বলো বাবা আপনি বুঝে নিন না যে এটা আমার নেচার, আর কিছু না। আমার নেচারই এটা।
এখন বাপদাদা কী বলবেন! আমার নেচার, আমার বোল এইরকম, অনেকে এরকম বলে, থোড়াই ক্রোধ
করেছি, আমার বোল সামান্য বড়, সামান্য জোরে বলেছি, থোড়াই ক্রোধ করেছি, শুধু জোরে
বলেছি। দেখ কত মিষ্টি মিষ্টি কথা! বাপদাদা বলেন, যেটা তুমি আমার নেচার বলছ সেটা
আমার বলাই রং। আমার নেচার এটা রাবনের নেচার, নাকি তোমার নেচার! তোমাদের নেচার
অনাদিকাল আদিকাল পূজ্য কাল - এটাই তোমাদের অরিজিনাল নেচার। রাবনের জিনিসকে আমার
আমার বলো তো না, সেইজন্য যায় না। অন্যের জিনিসকে নিজের বানিয়ে রেখেছ তো না, কেউ যদি
পরের জিনিস নিজের কাছে সামলে রাখে, লুকিয়ে রাখে, তবে কী সেটা ভালো ব'লে মানা যায়?
তো রাবনের নেচার হলো পরের নেচার, সেটাকে আমার কেন বলো? খুব বড়াই করে বলে থাকো আমার
দোষ নয়, আমার নেচার। বাপদাদাকেও আস্বস্ত করার চেষ্টা করে। এখন এই সমাপ্তি সমারোহ
করবে! করবে তোমরা? করবে? দেখ, অন্তর থেকে বলো, মন থেকে করো, যেখানে মন হবে সেখানে
সবকিছু হয়ে যাবে। মন থেকে মানো যে এটা আমার নেচার নয়। এটা অন্যের জিনিস। এটা রাখা
উচিত নয়। তোমরা তো জীবন্মৃত হয়ে গেছো তো না! তোমাদের হলো ব্রাহ্মণ নেচার, নাকি
পুরানো নেচার? তো বুঝেছ বাপদাদা কী চান? যদি বা মনোরঞ্জনের আয়োজন করো, ড্যান্স করো,
খেলো কিন্তু ...তা'তে কিন্তু আছে। সবকিছু করেও সমান হতেই হবে। সমান হওয়া ব্যতীত সাথে
যাবে কীভাবে! কাস্টম অনুযায়ী ধর্মরাজপুরীতে অপেক্ষা করতে হবে, সাথে যেতে পারবে না।
দাদিরা বলো তাহলে কি এক মাস দেখব! বলো দেখব, দেখব? এক মাস অ্যাটেনশন রাখো। এক মাস
যদি অ্যাটেনশন রাখো তবে ন্যাচারাল হয়ে যাবে। মাসের একটা দিনও ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
দাদিরা ভালই দায়িত্ব পালন করে। সবাই একত্রিত হয়ে পরস্পরের প্রতি শুভ ভাবনা শুভ
কামনার হাত ছড়িয়ে দাও। যেমন, কেউ যখন পড়ে যায় তখন হাত দিয়ে ভালোবাসার সাথে তাকে তোলা
হয়। তো একে অপরকে শুভ ভাবনা আর শুভ কামনার হাত বাড়িয়ে সহযোগ দিয়ে অগ্রচালিত করো।
ঠিক আছে? তোমরা শুধুই চেক ক'রো, সেটা কম। কিছু করার পর তোমরা চেক করে থাকো - হয়ে
গেছে! আগে ভাবো, পরে করো। আগে, ক'রে পরে ভেবো না। করতেই হবে।
আচ্ছা। এখন বাপদাদা কোন ড্রিল করাতে চান? একে সেকেন্ডে শান্তির শক্তি স্বরূপ হয়ে
যাও। একাগ্র বুদ্ধি, একাগ্র মন। সারাদিনের মাঝে মাঝে এক সেকেন্ড বের করে অভ্যাস করো।
সাইলেন্সের সঙ্কল্প করার সাথে সাথে স্বরূপ হওয়া। এর জন্য সময়ের আবশ্যকতা নেই। এক
সেকেন্ডের অভ্যাস করো, সাইলেন্স। আচ্ছা।
জন্ম উৎসব উদযাপনকারী চতুর্দিকের ভাগ্যবান আত্মাদের, যারা সদা উৎসাহে থেকে সঙ্গম
যুগের উৎসব উদযাপন করে, এমন সমূহ উৎসাহ-উদ্দীপনার পাখায় ওড়া বাচ্চাদের, যারা সদা মন
আর বুদ্ধিকে একাগ্রতার অনুভাবী বানায় এমন মহাবীর বাচ্চাদের, সদা সমান হওয়ার উদ্যমকে
সাকার রূপে নিয়ে আসে, ফলো ফাদার করে এমন বাচ্চাদের, সদা পরস্পরের স্নেহী, সহযোগী,
সাহস দিয়ে বাবার থেকে সহায়তার বরদান প্রাপ্ত করায় এমন বরদানী বাচ্চাদের, মহাদানী
বাচ্চাদের বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর পদ্ম পদ্ম পদ্ম পদ্মগুন অভিনন্দন,
অভিনন্দন, অভিনন্দন।
বরদান:-
সদা একান্তে এবং স্মরণে ব্যস্ত থেকে অসীম জগতের
বাণপ্রস্থী ভব
বর্তমান সময় অনুসারে তোমরা সবাই বাণপ্রস্থ অবস্থার সমীপে আছো। বাণপ্রস্থী কখনো
পুতুল খেলা করে না। তারা সদা একান্তে আর স্মরণে থাকো। তোমরা সবাই অসীম জগতের
বাণপ্রস্থী, সদা একের অন্তে অর্থাৎ নিরন্তর একান্তে থাকো, সেইসঙ্গে একের স্মরণ করতে
করতে স্মৃতি স্বরূপ হও। সব বাচ্চার প্রতি বাপদাদার এই শুভ আশা যে এখন বাবা আর
বাচ্চারা সমান হোক। সদা স্মরণে যেন সমাহিত থাকে। সমান হওয়াই অন্তর্লিন করা - এটাই
বাণপ্রস্থ স্থিতির লক্ষণ।
স্লোগান:-
তোমরা সাহসের এক কদম বাড়াও, তাহলে বাবা সহযোগিতার
হাজার কদম বাড়িয়ে দেবেন।
অব্যক্ত ইশারা :- এখন সম্পন্ন বা কর্মাতিত হওয়ার ধুন
লাগাও যেমন, বাবার জন্য সবার মুখ দিয়ে একই আওয়াজ বের হয় "আমার বাবা", তেমনই তোমরা
সব শ্রেষ্ঠ আত্মার প্রতি যেন এই ভাবনা থাকে, বোধ থাকে। প্রত্যেকের থেকে যেন আপন-
বোধের উপলব্ধি হয়। প্রত্যেকের যেন বোধগম্য হয় এ' আমার শুভচিন্তক, সহযোগী, সেবার সাথী।
একেই বলা হয়ে থাকে - বাবা সমান, কর্মাতিত স্টেজের সিংহাসনাসীন। সূচনা়ঃ- আজ মাসের
তৃতীয় রবিবার, সব রাজযোগী তপস্বী ভাইবোন সন্ধ্যে ৬:৩০ থেকে ৭:৩০ পর্যন্ত বিশেষ যোগ
অভ্যাসের সময় নিজের লাইট মাইট স্বরূপে স্থিত হোন, ভ্রুকুটির মধ্যে বাপদাদাকে আহ্বান
করতে করতে কম্বাইন্ড স্বরূপের অনুভব করুন এবং চতুর্দিকে লাইট মাইটের কিরণ ছড়িয়ে
দেওয়ার সেবা করুন।