22.07.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
“মিষ্টি বাচ্চারা -
তোমাদের এই পড়াশোনার ফাউন্ডেশন হলো পিউরিটি, পিউরিটি থাকলে তবেই যোগের ধার ভরতে
পারবে, যোগের ধার থাকলে তবে বাণীতেও শক্তি আসবে”
প্রশ্নঃ -
বাচ্চারা
তোমাদের এখন কোন্ পুরুষার্থ সম্পূর্ণরূপে করতে হবে?
উত্তরঃ
মাথার উপরে যে
বিকর্মের বোঝা আছে, তাকে নামানোর জন্য সম্পূর্ণরূপে পুরুষার্থ করতে হবে। বাবার হয়ে
যাওয়ার পরেও কোনও বিকর্ম করলে তবে একেবারে এক ঝটকায় নিচে গিয়ে পড়বে। বি.কে-র যদি
কোনওভাবে নিন্দা করাও বা অসুবিধায় ফেলো, তাহলে অনেক পাপ হয়ে যাবে। তারপর কাউকে
জ্ঞান শোনালে বা নিজে শুনলেও কোনও লাভ হবে না।
ওম্ শান্তি ।
আত্মাদের পিতা
তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন যে, তোমরা পতিত থেকে পবিত্র হয়ে পবিত্র
দুনিয়ার মালিক কিভাবে হবে ! পবিত্র দুনিয়াকে স্বর্গ বা বিষ্ণুপুরী,
লক্ষ্মী-নারায়ণের রাজ্যও বলা যায়। বিষ্ণু অর্থাৎ লক্ষ্মী-নারায়ণের কম্বাইন্ড
চিত্র এইরকম বানিয়েছে - এই জন্য তোমাদের বোঝানো হচ্ছে। বিষ্ণুকে যখন পূজা করা হয়
তখন তারা বোঝে না যে, ইনি কে? মহালক্ষ্মীর পূজাও করে, কিন্তু তারা জানে না যে ইনি
কে? বাচ্চারা বাবা এখন তোমাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে বোঝাচ্ছেন। ভালোভাবে ধারণ করো।
কারো কারো বুদ্ধিতে থাকে যে, পরমাত্মা তো সবকিছু জানতে পারেন। আমরা যা কিছু ভাল বা
খারাপ কাজ করি, তিনি সে-সবই জানতে পারেন। এখন এটাকেই অন্ধশ্রদ্ধার ভাবনা বলা হয়ে
থাকে। ভগবান এই সব কথা জানেন না। বাচ্চারা তোমরাই জানো যে, ভগবান তো পতিতদেরকে
পবিত্র বাবাতে এসেছেন। পবিত্র বানিয়ে স্বর্গের মালিক তৈরী করেন, আর যে ভালোভাবে
পড়বে, সে-ই উচ্চপদ প্রাপ্ত করবে। এরকম নয় যে, বাবা সকলের মনের কথা জানতে পারেন।
যারা এটা মনে করে তাদেরকে অবোধ বলা হয়। মানুষ যে ধরনের কর্ম করে, তার ভালো বা খারাপ
কর্মের ফল ড্রামা অনুসারে তাকে পেতেই হবে। এর সাথে বাবার কোনও কানেকশন নেই। এই
সমস্ত চিন্তা কখনও করো না যে, বাবা তো সবকিছুই জানতে পারেন। অনেকেই আছে, যারা
বিকারগ্রস্ত হয়ে যায়, পাপ কাজ করতে থাকে, তারপরেও আবার এখানে অথবা সেন্টারে আসে।
মনে করে যে, বাবা তো সবই জানেন। কিন্তু বাবা বলেন যে, আমি এই সমস্ত ধান্ধা করি না।
‘জানি-জাননহার’ (যিনি মনের কথা জানতে পারেন) এই শব্দটিও সঠিক নয়। তোমরা বাবাকে
ডেকেছিলে যে, বাবা এসে আমাদেরকে পতিত থেকে পবিত্র বানাও, স্বর্গের মালিক বানাও,
কেননা জন্ম-জন্মান্তরের পাপ মাথার ওপর অনেক আছে। এই জন্মেরও আছে। এই জন্মে কৃত পাপ
কর্মের কথাও তোমরা বলতে থাকো। অনেকেই আছে যারা এতটাই পাপকর্ম করে যে, পবিত্র বানানো
খুব মুশকিল হয়ে যায়। মুখ্য কথাই হল পবিত্র হওয়া। পড়াশোনা তো খুবই সহজ, কিন্তু
বিকর্মের বোঝা কিভাবে মাথা থেকে নামাতে হবে, তার জন্য অনেক পুরুষার্থ করতে হবে।
এরকম অনেকেই আছে যারা অনেক পাপ করতে থাকে, অনেক অপকার করতে থাকে। বি.কে আশ্রমকে
সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে অনেক পাপ বৃদ্ধি পায়। সেই পাপ ইত্যাদি কাউকে
জ্ঞান শোনানোর মাধ্যমে নাশ হয় না। পাপ নাশ হয় কেবল যোগের দ্বারা। প্রথমে তো যোগের
জন্য সম্পূর্ণরূপে পুরুষার্থ করতে হবে, তবেই কাউকে জ্ঞান শোনালে সে বুঝতে পারবে।
প্রথমে পবিত্র হও, যোগ করো, তবেই বাণীও ক্ষুরধার হবে । তা না হলে কাউকে যতই বোঝাও
না কেন, কারোরই বুদ্ধিতে সেই জ্ঞানের ধারণা হবে না। জন্ম-জন্মান্তরের পাপ জমে আছে,
তাই না! এখনও যে পাপ হয়ে চলেছে, সেটা তো জন্ম-জন্মান্তরের থেকেও অনেক বেশী হয়ে যায়,
সেইজন্য বলা হয় যে - সদ্গুরুর নিন্দক কোনও পদ পায় না... ইনি হলেন সত্য বাবা, সৎ
টিচার এবং সদ্গুরু। বাবা বলেন বি.কে-দের নিন্দা করালে অনেক পাপ বৃদ্ধি হয়ে যায়।
প্রথমে তো নিজে পবিত্র হও। কাউকে বোঝানোর জন্য তো খুব শখ আছে। যোগ তো এক পয়সারও
নেই। এর দ্বারা কি লাভ হবে? বাবা বলেন মুখ্য কথাই হলো স্মরণের দ্বারা পবিত্র হওয়া।
তোমরা আমাকে ডেকেছিলে পবিত্র হওয়ার জন্য। ভক্তিমার্গে একটি অভ্যাস হয়ে যায়, ধাক্কা
খাওয়ার, ফালতু ফালতু চিৎকার করার। প্রার্থনা করে, কিন্তু ভগবানের কান কোথায় আছে,
কান ছাড়া, মুখ ছাড়া কিভাবে তিনি শুনবেন বা কথা বলবেন? তিনি তো হলেন অব্যক্ত। এই
সবকিছুই হল অন্ধশ্রদ্ধা।
তোমরা বাবাকে যত যত
স্মরণ করবে, ততই তোমাদের পাপ নাশ হবে। এইরকমও নয় যে, বাবা জানেন - এই আত্মা অনেক
স্মরণ করে, আর এ কম স্মরণ করে। এরজন্য তো নিজের চার্ট নিজেকেই দেখতে হবে। বাবা
বলছেন যে, স্মরণের দ্বারাই তোমাদের বিকর্মের বিনাশ হবে। বাবাও তোমাদেরকেই জিজ্ঞাসা
করেন যে, কতক্ষন স্মরণ করেছো? আচার-আচরণ দেখে বোঝা যায়। স্মরণ ছাড়া পাপ নাশ হবে
না। এইরকম নয় যে, কাউকে জ্ঞান শোনালে তো তোমাদের বা তার পাপ বিনাশ হয়ে যায়। না,
যখন নিজে স্মরণ করবে, তখনই পাপ নাশ হবে। মূল কথাই হলো পবিত্র হওয়া। বাবা বলেন যে
আমার হয়ে গেছ, তাই কোন পাপ কাজ করো না। না হলে তো এক ঝটকায় একদম নিচে পড়ে যাবে।
এরকম আশাও রেখো না যে আমি খুব ভাল পদ পাবো। প্রদর্শনীতে অনেককে বুঝিয়ে খুশি হয়ে
যায়, মনে করে - আমি অনেক সেবা করেছি। কিন্তু বাবা বলেন যে প্রথমে তুমি নিজে তো
পবিত্র হও। বাবাকে স্মরণ করো। স্মরণেতেই অনেকে ফেল করে যায়। জ্ঞান তো হলো খুব সহজ,
কেবল ৮৪ জন্মের চক্রকে জানতে হবে, ওই লৌকিক পড়াশোনাতে তো অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়,
পরিশ্রমও করতে হয়। কি উপার্জন করবে? পড়তে পড়তে যদি শরীর ছেড়ে দেয়, তাহলে
পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। বাচ্চারা তোমরা তো, যত যত স্মরণে থাকবে, ততই তোমাদের ধারণা
হবে। পবিত্র না হলে, পাপ মুক্ত না হলে তো অনেক শাস্তি খেতে হবে। এরকম নয় যে, আমার
স্মরণ তো বাবার কাছে পৌঁছেই যায়। বাবা কি করবেন! তোমরা স্মরণ করলে তো তোমরাই
পবিত্র হতে পারবে। বাবা তাতে কি করবেন, বাবা কি তোমাদেরকে সাবাস দেবেন! অনেক
বাচ্চাই আছে যারা বলে যে, আমি তো সর্বদা বাবাকে স্মরণ করতেই থাকি, তিনি ছাড়া আর
আছেই বা কে আমার? এটাও মিথ্যা কথা বলে দেয়। স্মরণে যাত্রাতেই তো অনেক পরিশ্রম করতে
হয়। আমি স্মরণ করছি কি করছি না, এটাও তারা বুঝতে পারে না। অজ্ঞান বশতঃ বলে দেয় যে
আমি তো স্মরণেই আছি। পরিশ্রম ছাড়া কি কেউ বিশ্বের মালিক হতে পারবে? উচ্চপদ প্রাপ্ত
করতে পারবে না। স্মরণের দ্বারা যখন শক্তিশালী হবে তখন সেবাও করতে পারবে। তারপর দেখা
যাবে যে, সেবা করে কতো প্রজা বানিয়েছো! হিসাব চাই, তাই না! আমি কতজনকে নিজের সমান
বানিয়েছি। প্রজা বানাতে হবে, তাইনা! তবেই তো রাজার পদ প্রাপ্ত করতে পারবে। রাজার
পদ প্রাপ্ত করা তো এখন কিছু কঠিন নয়। প্রথমে যোগযুক্ত হয়ে শক্তিশালী হও, তবেই কাউকে
জ্ঞান শোনালে সে বুঝতে পারবে। শাস্ত্রেও আছে যে, অন্তিম সময়ে ভীষ্ম পিতামহ,
দ্রোণাচার্য আদিকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। যখন তোমাদের এই পতিত মনোভাব সমাপ্ত হয়ে
সতোপ্রধান হতে থাকে, তখন আত্মার মধ্যে শক্তিও আসতে থাকে আর তখন কাউকে জ্ঞান শোনালে,
এক ঝটকায় তাদের মধ্যে জ্ঞানের তীর লেগে যাবে। এই সমস্ত চিন্তা কখনও করো না যে, বাবা
তো সবকিছু জানতে পারেন। বাবার সবকিছু জানার কি দরকার? যে করবে, সেই পাবে। বাবা তো
কেবল সাক্ষী হয়ে সবকিছু দেখতে থাকেন। বাবাকে চিঠি লেখে যে, আমি অমুক জায়গায় গিয়ে
সেবা করেছি, বাবা জিজ্ঞাসা করেন, আগে নিজে স্মরণের যাত্রায় তৎপর হয়েছো? প্রথম কথাই
হলো এটা যে - অন্য সকল সঙ্গ ত্যাগ করে এক বাবার সঙ্গ জোড়া। দেহী-অভিমানী হতে হবে।
ঘরে থেকেও বুঝতে হবে যে এটা হল পুরানো দুনিয়া, পুরানো দেহ। এইসব সমাপ্ত হয়ে যাবে।
আমাদের কাজ হল বাবা আর বাবার উত্তরাধিকার থেকে। বাবা এইরকম বলেন না যে, গৃহস্থ
ব্যবহারে থেকো না, কারো সাথে কথা বলো না। অনেকেই বাবাকে জিজ্ঞাসা করে যে, বিয়ে
বাড়ির অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে? বাবা বলেন যে, যদিও যাও কিন্তু সেখানে গিয়ে সেবা করো।
বুদ্ধির যোগ যেন শিব বাবার সাথেই থাকে। জন্ম-জন্মান্তরের বিকর্ম স্মরণের শক্তির
দ্বারাই ভষ্মীভূত হবে। এখানেও যদি তোমরা বিকর্ম করতে থাকো তাহলে অনেক শাস্তি ভোগ
করতে হবে। পবিত্র হতে হতে বিকারে পড়ে গেলে তো মরে যাবে। একদম চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে
যাবে। শ্রীমতে না চলে নিজের অনেক ক্ষতি করতে থাকে। প্রত্যেক কদমে শ্রীমৎ চাই। এমন
এমন পাপ কর্ম করতে থাকে যে একদম যোগ লাগতে চায় না। বাবাকে স্মরণ করতে পারেনা। এমন
অবস্থায় কাউকে গিয়ে যদি বলে যে - ভগবান এসেছেন, তাঁর থেকে অবিনাশী উত্তরাধিকার
প্রাপ্ত করো, তাহলে তারা মানবে না। বুদ্ধিতে জ্ঞানের তীর লাগবে না। বাবা বলছেন যে
ভক্তদেরকে জ্ঞান শোনাও, ব্যর্থ কিছু শুনিও না, না হলে তো আরোই নিন্দা করাবে।
কোনো কোনো বাচ্চা
বাবাকে জিজ্ঞাসা করে - বাবা আমার দান করার অভ্যাস আছে, এখন তো জ্ঞানে এসে গেছি,
তাহলে এখন কি করবো? বাবা রায় দেন - বাচ্চা, গরিবকে দান করার জন্য তো অনেকেই আছে,
কোনো গরিব না খেতে পেয়ে মরে না। ফকিরদের কাছে অনেক পয়সা পড়ে থাকে, সেইজন্য এই
সবের থেকে নিজের বুদ্ধিকে সরিয়ে নাও। দান আদি করার ক্ষেত্রেও অনেক সতর্ক থাকতে হবে।
অনেকেই এমন-এমন কাজ করে যে, সে কথা জিজ্ঞাসা ক'রো না। বাচ্চারা বুঝতে পারে না যে,
আমার মাথার উপর বোঝা অনেক ভারী হয়ে গেছে। জ্ঞানমার্গ কোনও হাসি মজার মার্গ নয়।
বাবার সাথে তো আবার ধর্মরাজও থাকেন। ধর্মরাজের কাছে বড় বড় লাঠির বাড়ি খেতে হবে।
বলে না যে, অন্তিম সময়ে যখন ধর্মরাজের খাতা খুলবে তখন বুঝতে পারবে ।
জন্ম-জন্মান্তরের সাজা খেতে বেশি সময় লাগে না। বাবা তো কাশী-কলবট এর উদাহরণও
বুঝিয়েছেন। সে তো হলো ভক্তিমার্গ, এটা হলো জ্ঞানমার্গ। মানুষকেও বলি দেওয়া হয়,
এও ড্রামাতে নির্ধারিত রয়েছে । এই সমস্ত কথাগুলিকে বুঝতে হবে, এমন বলা যায় না যে,
এই ড্রামা বানানোই বা হয়েছে কেন? জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আসতে হয় কেন? জন্ম-মৃত্যুর
চক্রতে তো সকলকে আসতেই হয়। এটাই তো হলো অনাদি ড্রামা, তাই না! চক্রে না এলে তো এই
দুনিয়াই থাকবে না। মোক্ষ তো কারোরই হয় না। এমনকি মুখ্য মুখ্য যারা তারাও মোক্ষ
প্রাপ্তি করে না। ৫ হাজার বছরের পর পুনরায় এইভাবেই জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আসতেই হয়।
এটা তো ড্রামা, তাই না! কেবল কাউকে বোঝালে বা জ্ঞান শোনালেই পদ প্রাপ্ত হবে না,
প্রথমে তো পতিত থেকে পবিত্র হতে হবে। এইরকম নয় যে, বাবা সব কিছুই জানতে পারেন। বাবা
জেনে কি করবেন, প্রথমে তো তোমরা আত্মারাই জানতে পারো যে, শ্রীমতে আমরা কি করছি,
কতক্ষণ আমরা বাবাকে স্মরণ করছি? বাবা এসব জেনে কি করবেন? এতে লাভ-ই বা কি? তোমরা যা
কিছু করবে সেটাই তোমরা পাবে। বাবা তোমাদের অ্যাক্ট আর সেবার দ্বারা জানতে পারেন যে,
এই বাচ্চা ভালো সেবা করছে। অমুক আত্মা বাবার হয়েও অনেক বিকর্ম করছে, তখন তার
মুরলীতে ধার থাকে না। এই জ্ঞান হলো তলোয়ার, তাতে যোগ বল এর ধার লাগাতে হবে।
যোগবলের দ্বারাই তোমরা বিশ্বের উপরে বিজয় প্রাপ্ত করছো, আর জ্ঞানের দ্বারা নতুন
দুনিয়াতে উচ্চপদ প্রাপ্ত করবে। প্রথমে তো পবিত্র হতে হবে। পবিত্র না হলে উচ্চপদ
প্রাপ্ত হবে না। এখানে এসেইছো নর থেকে নারায়ণ হওয়ার জন্য। কোনও পতিত আত্মা কি নর
থেকে নারায়ণ হতে পারবে? পবিত্র হওয়ার জন্য যুক্তি চাই। যে অনন্য বাচ্চারা
সেন্টারকে দেখাশোনা করে, তাদেরকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়, এতটা পরিশ্রম না করলে তাে
সেই শক্তিও আসবে না আর জ্ঞানের তীরও লাগবে না, স্মরণের যাত্রা কোথায়! কেবলমাত্র
প্রদর্শনীতে অনেককে বোঝালেই হবে না, প্রথমে স্মরণের দ্বারা পবিত্র হতে হবে, তারপর
জ্ঞান। পবিত্র হলে তবেই জ্ঞানের ধারণা হবে। কোনও পতিত আত্মা ধারণা করতে পারে না।
মুখ্য সাবজেক্ট হলো স্মরণ। লৌকিক পড়াশোনাতেও তো সাবজেক্ট থাকে, তাইনা! তোমাদের কাছে
হয়তো অনেকেই বি.কে হয় কিন্তু ব্রহ্মাকুমার ব্রহ্মাকুমারী, ভাই বোন হওয়া কোনও সহজ
ব্যাপার নয়। কেবলমাত্র পরিচয় দিলেই ব্রহ্মাকুমারী হওয়া যায়না। দেবতা হওয়ার জন্য
প্রথমে পবিত্র অবশ্যই হতে হয়। তারপর হল এই পড়াশোনা। যদি কেউ শুধু পড়াশোনাই করে
আর পবিত্র না হয়, তাহলে তো উচ্চপদ প্রাপ্ত হবে না। আত্মার মধ্যে পবিত্রতা চাই।
পবিত্র হলে তবেই পবিত্র দুনিয়ায় উচ্চপদ প্রাপ্ত করতে পারবে। পবিত্রতার উপরেই বাবা
বিশেষ জোর দেন। পবিত্রতা ছাড়া কাউকে জ্ঞান দেওয়া যাবে না। বাবা তো তোমাদের মনের
কথা কিছুই জানতে পারেন না। এইসময় তিনি নিজেই এখানে বসে আছেন, তাই না! তোমাদেরকে সব
কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ভক্তি মার্গে ভক্তদের ভাবনার ফল স্বরূপ কিছু প্রাপ্তি হয়ে
যায়। সেটাও ড্রামাতে পূর্বনির্দিষ্ট আছে, শরীর ছাড়া বাবা কথা কি করে বলবেন? শুনবেন
কিভাবে? আত্মার এখন শরীর প্রাপ্ত হয়েছে তাই সে শুনতে বা কথা বলতে পারে। বাবা বলেন
যে আমার তো কোনও অর্গ্যান্সই নেই, তাই আমি কিভাবে শুনবো, কিভাবে জানতে পারব? তারা
মনে করে যে, বাবা তো সব জানতে পারেন যে, কেন আমি বিকারে চলে গেছি। আর যদি না জানতে
পারি, তাহলে তারা ভগবানকেই মানবে না। এইরকমও অনেকে আছে। বাবা বলছেন যে আমি এসেছি
তোমাদেরকে পবিত্র হওয়ার রাস্তা বলতে। সাক্ষী হয়ে সবকিছু দেখছি। বাচ্চাদের আচার
আচরণের মাধ্যমে বোঝা যায় যে - এই বাচ্চা সুপুত্র না কুপুত্র? সেবা করে তার সমাচারও
দিতে হবে, তাই না! এটাও জানে যে - যে করে, সেই পায়। শ্রীমতে চললে শ্রেষ্ঠ হতে পারবে।
আর না চলতে পারলে তো নিজেই নোংরা হয়ে নিচে পরে যাবে। যদি মনে কোনও প্রশ্ন থেকে থাকে,
তাহলে আমাকে পরিষ্কারভাবে জিজ্ঞাসা করতে পারো। এখানে অন্ধশ্রদ্ধার কোনও কথাই নেই।
বাবা কেবল বলেন যে, স্মরণের শক্তি নাহলে তো পবিত্র কিভাবে হবে? এই জন্মেও এত পাপ করে
যে সেসব কথা আর জিজ্ঞাসা করো না। এটা হলোই পাপাত্মাদের দুনিয়া, সত্যযুগ হলো পুণ্য
আত্মাদের দুনিয়া। এটা হল সঙ্গম। কেউ কেউ তো এমন বুদ্ধু থাকে যে, কিছুই ধারণা করতে
পারে না। বাবাকে স্মরণ করতেই পারেনা। তারপর তারা টু লেট হয়ে যাবে। যখন সমগ্র
সৃষ্টিতে আগুন লেগে যাবে তখন যোগেও থাকতে পারবে না। সেই সময় তো চারিদিকে সবাই
হাহাকার করবে। চারিদিকে তখন দুঃখের পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে। সব সময় এই চিন্তাই যেন
চলতে থাকে যে, আমি কিভাবে বাবার থেকে রাজ্য ভাগ্য প্রাপ্ত করব। দেহ অভিমান ছেড়ে
সেবাতে লেগে যেতে হবে। কল্যাণকারী হতে হবে। ধন সম্পদ ব্যর্থ ভাবে নষ্ট করোনা। যে
যোগ্যই নয়, এইরকম পতিত আত্মাদেরকে কখনো দান করো না, না হলে যে দান করছে তার ওপরেও
পাপের বোঝা চেপে যাবে। এমনও নয় যে ঢাক বাজিয়ে বলতে হবে যে ভগবান এসে গেছেন। এইরকম
নিজেদেরকে ভগবান বলে পরিচয় দেওয়ার জন্য অনেক আত্মাই ভারতে আছে। কেউ মানবে না। এটা
কেবল তোমরাই জানো, কারণ তোমরাই বাবার কিরণ প্রাপ্ত করেছ। আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
পড়াশোনার সাথে সাথে পবিত্রও অবশ্যই হতে হবে। এইরকম যোগ্য বা সুপুত্র হয়ে বাবাকে
সেবার সমাচার দিতে হবে। শ্রীমতে চলে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বানাতে হবে।
২ ) স্থুল ধনও যেন
ব্যর্থ ভাবে নষ্ট না হয়। পতিতদেরকে দান ক'রো না। জ্ঞান ধনও পাত্র বুঝে দান করতে হবে।
বরদান:-
পুরানো
সংস্কারের অগ্নি সংস্কার করে প্রকৃত অর্থে জীবন্মৃত ভব
মৃত্যুর পরে যেমন
শরীরের সৎকার করা হয়, তখন রূপ সমাপ্ত হয়ে যায়, তেমনই বাচ্চারা, তোমরা যখন
জীবন্মৃত হয়ে যাও, তখন যদিও বা শরীর সেই থাকে, কিন্তু পুরানো সংস্কার, স্মৃতি বা
স্বভাবের সৎকার করে দাও । সৎকার করা মানুষ যদি সামনে আসে তাকে ভূত বলা হয় । তেমনই
এখানেও যদি সৎকার হওয়া সংস্কার আবার জাগ্রত হয়ে যায়, তাহলে এও হলো মায়ার ভূত ।
এই ভূতকে তাড়াও, এর বর্ণনাও করো না ।
স্লোগান:-
কর্মভোগের বর্ণনা করার পরিবর্তে কর্মযোগের স্থিতির বর্ণনা করতে থাকো ।
অব্যক্ত ইশারা :-
সঙ্কল্পের শক্তি জমা করে শ্রেষ্ঠ সেবার নিমিত্ত হও
রাজা যেমন স্বয়ং কোনো
কার্য করে না, অন্যকে দিয়ে করায়, যে করে, এমন রাজ্য কারবারী পৃথক হয় । রাজ্য
কারবারী যদি ঠিক না হয়, তাহলে সেই রাজ্য টলমল করে । তেমনই আত্মাও করাওনহার, করনহার
এই বিশেষ ত্রিমূর্তি শক্তি ( মন - বুদ্ধি এবং সংস্কার ) । প্রথমে এদের উপর যেন রুলিং
পাওয়ার থাকে, তাহলে এই সাকার কর্মেন্দ্রিয় সততই সঠিক পথে চলবে ।