22.12.2025
প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন
"মিষ্টি বাচ্চারা -
বাবা যা, বাবা যেমন, তাঁকে যথাযথভাবে চিনে তাঁকে স্মরণ করো। এর জন্য নিজের বুদ্ধিকে
প্রশস্ত করো"
প্রশ্নঃ -
বাবাকে দীননাথ
বলা হয় কেন?
উত্তরঃ
কেননা এই সময়
যখন সমগ্র দুনিয়া গরীব অর্থাৎ দুঃখী হয়ে পড়েছে তখনই বাবা এসেছেন সবাইকে দুঃখ থেকে
মুক্তি দিতে । এ'ছাড়া কাউকে দয়া করে বস্ত্র দান, অর্থ দান এ' সব কোনো চমৎকারিত্বের
বিষয় নয় । এ'সব দিয়ে কেউ বিত্তবান হতে পারে না। এমনও নয় যে, আমি এইসব দুঃখী
মানুষদেরকে অর্থ সাহায্য করলে আমাকে গরিবের বন্ধু বলা হবে। আমি গরিব অর্থাৎ পতিতদের,
যাদের মধ্যে জ্ঞান নেই, তাদের জ্ঞান প্রদান করে পবিত্র করে তুলি।
গীতঃ-
জগৎ সংসারকে
ভুলে যাওয়ার এটাই তো মরসুম...
ওম্ শান্তি ।
মিষ্টি -
মিষ্টি বাচ্চারা গান শুনেছে । বাচ্চারা জানে এই গান দুনিয়ার মানুষ গেয়েছে , কারণ এর
কথা গুলি বড়ো সুন্দর। এই পুরানো দুনিয়াকে ভুলতে হবে। তোমরা প্রথমে এ'সব বুঝতে না।
কলিযুগের মানুষের জানা নেই যে নতুন দুনিয়াতে যেতে হবে, সুতরাং পুরানো দুনিয়াকে ভুলতে
হবে। যদিও এটা বুঝেছে যে পুরানো দুনিয়াকে ছেড়ে যেতে হবে কিন্তু ওরা ভাবে যে এখনও
দীর্ঘ সময় বাকি আছে। নতুন থেকে পুরানো হবে, এটা তো বুঝেছে কিন্তু দীর্ঘ সময় (লক্ষ
বছর) বলার কারণে ভুলে গেছে। তোমাদের এখন স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাবা বলছেন, নতুন
দুনিয়া স্থাপন হতে চলেছে, সেইজন্য পুরানো দুনিয়াকে ভুলতে হবে। ভুলে গেলে কি হবে?
আমরা এই শরীর ত্যাগ করে নতুন দুনিয়াতে যাব । কিন্তু অজ্ঞতার জন্য এইসব বিষয়ের অর্থ
বোঝার জন্য কেউ মনোযোগী হয় না। যেভাবে বাবা বুঝিয়ে বলেন, এমন কেউ নেই যে বুঝিয়ে বলবে।
তোমরা এখন বুঝতে পেরেছো। বাচ্চারা এটাও জানে - বাবা (ব্রহ্মা ) অতি সাধারণ। অনেক
বিশেষ বাচ্চারাও এটা বুঝতে পারে না, ভুলে যায় যে, এনার মধ্যেই শিববাবা আসেন । কোনো
ডায়রেকশন দিলে তারা বুঝতে পারে না এটা শিববাবারই ডায়রেকশন । শিববাবাকে সারাদিন ভুলে
থাকে । সম্পূর্ণরূপে বুঝতে না পারার কারণে মায়া স্মরণ করতে দেয় না। স্থায়ী ভাবে
স্মরণ টিকে থাকে না। পুরুষার্থ করতে-করতে শেষে গিয়ে স্মরণের অবস্থা অবশ্যই স্থায়ী
হবে। এই সময় এমন কেউ নেই যে কর্মাতীত অবস্থা প্রাপ্ত করবে। বাবা যেমন ঠিক তেমন ভাবে
তাঁকে জানতে প্রশস্ত বুদ্ধির প্রয়োজন।
কিছু মানুষ জিজ্ঞাসা
করে বাপদাদা গরম পোশাক পড়েন? তোমরা উত্তরে বলে থাক দুজনেই পড়েন (কম্বাইন্ড রূপে) ।
শিববাবাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমি কি গরম পোশাক পড়ি? আমার তো ঠান্ডা লাগে না।
তবে হ্যাঁ, যার মধ্যে প্রবেশ করি তার ঠান্ডা লাগে। আমার তো না ক্ষিদে পায়, না তৃষ্ণা,
কিছুই পায়না। আমি তো নির্লেপ । সার্ভিস করতে-করতেও এইসব বিষয় থেকে ডিট্যাচ থাকি। আমি
খাদ্যও গ্রহণ করিনা, তৃষ্ণাও মেটাই না। যেমন এক সাধু বলত না, না আমি খাই , না পান
করি... তারপর কৃত্রিম বেশও ধারণ করে নিয়েছে । অনেকেই তো নিজের নামও দেবতাদের নামে
রেখে দেয়। অন্য কোনও ধর্মে দেবী-দেবতা তৈরি হয়না। এখানে কত মন্দির নির্মাণ হয়েছে।
সর্বত্র শুধু এক শিববাবাকেই সবাই মানে। বুদ্ধিও বলে ফাদার তো হন একজনই। ফাদারের কাছ
থেকেই অবিনাশী উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। বাচ্চারা তোমাদের বুদ্ধিতেও আছে কল্পের এই
পুরুষোত্তম সঙ্গম যুগেই বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। যখন আমরা সুখধামে
যাই অন্যান্য সবাই তখন শান্তিধামে থাকে। তোমাদের মধ্যেই নম্বরানুসারে পুরুষার্থ
অনুযায়ী সবাই যায় এটা বুঝেছ। যারা জ্ঞান সম্পর্কে মনন করে তারা অতি সহজেই এই
সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হবে। বাবার দ্বারা- তোমরা রূপ-বসন্ত হয়ে উঠছ। তোমরা রূপ এবং
বসন্ত দুটোই (যোগ এবং জ্ঞানের মূর্ত প্রতীক) । দুনিয়াতে আর কেউ একথা বলতে পারবে না
যে আমরা রূপ-বসন্ত। তোমরা এখন ঈশ্বরীয় পড়াশোনা করছ , শেষ পর্যন্ত নম্বরানুসারে
পুরুষার্থ অনুযায়ী পড়বে। শিববাবা আমরা আত্মা্দের পিতা না ! তোমরা অন্তর্মন থেকে এটা
অনুভব করো, তাইনা। ভক্তি মার্গে কখনোই অন্তর্মন থেকে এই অনুভব হয়না। এখানে তোমরা
সঙ্গমে বসে আছো। বুঝেছ বাবা আবারও এই সময়েই (সঙ্গম যুগে) আসবেন । অন্য সময় বাবার
আসার প্রয়োজনই পড়ে না। সত্যযুগ থেকে ত্রেতা আসার প্রয়োজন নেই। দ্বাপর থেকে কলিযুগেও
আসার প্রয়োজন নেই। তিনি আসেন কল্পের সঙ্গম যুগে। বাবা হলেন দীননাথ অর্থাৎ সম্পূর্ণ
দুনিয়া যা গরিব ও দুঃখী হয়ে যায় তাদের পিতা। ওনার অন্তরে কি হয়? তিনি ভাবেন যে আমি
গরিবের ত্রাণকর্তা, প্রত্যেকের দুঃখ, দারিদ্র্য নিবারণ হওয়া উচিত। জ্ঞান ছাড়া এই
দুঃখ দারিদ্র্য দূর করা যায় না। বস্ত্র ইত্যাদি দান করে কাউকে বিত্তশালী বানানো যায়
না, তাইনা। অনেক সময়ই গরিবদের দেখে কাপড়-চোপড় দেওয়ার মন হয়। কারণ মনে করা হয় আমি -
গরিবের বন্ধু। শিববাবা বলেন উনি তো শুধুমাত্র এক ধরনের গরিবদের জন্য নন। তিনি গরিব
মনে করেন যারা পতিত হয়ে পড়ে আছে, উনি তাদের পাবন করে তোলেন। কারণ তিনি হলেন দীননাথ
(গরিব-নিবাজ) । ওনার কর্তব্যই হলো পতিত থেকে পাবন করে তোলা। তাই তিনি বলছেন আমি
কিভাবে অর্থ দিতে পারি? অর্থ দেওয়ার মতো দুনিয়াতে অনেকেই আছে, তারা প্রচুর ফান্ড
সংগ্রহ করে অনাথদের দান করে থাকে। তারা ভাবে অনাথ অর্থাৎ যাদের কোনো নাথ বা পিতা
নেই। অনাথ অর্থাৎ গরিব। তোমরাও গরিব ছিলে, কারণ তোমাদের পিতা ছিলনা , জ্ঞান ছিল না।
যে রূপ-বসন্ত (যোগী ও জ্ঞানী ) হতে পারে না সে অনাথ তুল্য হয়। যার এ'দুটোই আছে (জ্ঞান
ও যোগ) তাকে সনাথ বলা হয়। সনাথ বিত্তবানকে আর অনাথ গরিবকে বলা হয়। তোমাদের
বুদ্ধিতেও আছে দুনিয়ায় সবাই গরিব, সুতরাং সবাইকে কিছু (জ্ঞান রত্ন) দেওয়া উচিত। বাবা
যেহেতু গরিবের নাথ তাই উনি বলেন এমনই কিছু দেওয়া উচিত যাতে সবসময়ের জন্য বিত্তবান
হয়ে উঠতে পারে। কাপড়-চোপড় দেওয়া তো অতি সাধারণ ব্যাপার, (যে কেউ-ই দিতে পারে) । আমি
কেন ওর মধ্যে যাব । আমি তো তাদের অনাথ থেকে সনাথ করে তুলব। কেউ যতই লক্ষপতি হোক না
কেন সে তো অল্প সময়ের জন্য। এটা হলো অনাথদের দুনিয়া, হলোই বা ধনী কিন্তু অল্প সময়ের
জন্য। ওখানে (সত্য যুগে) সদা কালের জন্য সনাথ । ওখানে কেউ এমন কর্ম করে না যে তার
জন্য অনুশোচনা হবে। এখানে অসংখ্য গরিব, যে ধনী সে তো মন করে আমি স্বর্গে আছি। কিন্তু
স্বর্গে যে নেই তোমরা সেটা জানো। এই সময় কোনও মানুষ সনাথ নয়, সবাই অনাথ। এইসব
টাকা-পয়সা ইত্যাদি তো সব মাটিতে মিশে যাবে। মানুষ তো মনে করে তাদের এতো ধন-সম্পত্তি
রয়েছে যে তাদের নাতি-নাতনিরা ব্যবহার করতে পারবে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অব্যাহত
থাকবে। তবে এমনটা হবে না। তোমরা জান এসবই বিনাশ হয়ে যাবে। সেইজন্যই তোমাদের এই
সম্পূর্ণ দুনিয়ার প্রতি বৈরাগ্য আসে।
তোমরা জানো নতুন
দুনিয়াকে স্বর্গ, পুরানো দুনিয়াকে নরক বলা হয়। বাবা আমাদের নতুন দুনিয়ার জন্য
বিত্তবান করে তুলছেন। এই পুরানো দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। বাবা কত বিত্তবান করে তোলেন।
এই লক্ষ্মী-নারায়ণ বিত্তবান কীভাবে হয়েছে? কোনও বড় ব্যবসায়ী বা বিত্তবানের কাছ
থেকে কি উত্তরাধিকার পেয়েছে না কি লড়াই করে পেয়েছে? যেমন অন্যরা রাজ সিংহাসন
প্রাপ্ত করে, তেমন করেই এরা কি রাজ সিংহাসন পেয়েছিল? নাকি কর্ম অনুসারে এই ঐশ্বর্য
প্রাপ্ত হয়েছে? পরমাত্মা পিতা যেভাবে কর্ম সম্পর্কে বুঝিয়েছেন তা অনন্য।
কর্ম-অকর্ম-বিকর্ম শব্দের অর্থ তো তোমাদের পরিষ্কার হয়েছে, তাইনা। শাস্ত্রে যদিও
কিছু শব্দ আছে সঠিক, কিন্তু এক বস্তা আটাতে এক চিমটে নুনের মতো (আটা মাখার সময়
যে'টুকু নুন দেওয়া হয়)। বর্তমান দুনিয়াতে যেখানে কোটি কোটি মানুষ, সেখানে সত্যযুগে
মাত্র ৯ লক্ষ। শতকরা ভগ্নাংশে যা এক চতুর্থাংশও নয়। এরই দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা হয়েছে
আটাতে নুনের ভাগ। দুনিয়ার বেশির ভাগ অংশই বিনাশ হয়ে যাবে, অল্প সংখ্যকই সঙ্গম যুগের
শেষে অবশিষ্ট থাকবে। তার আগেই যারা শরীর ত্যাগ করে চলে যাবে, তারা পরের দিকে যাওয়া
আত্মাদের ঘরে নিয়ে যাবে। যেমন মুগলী নামে যে মেয়েটি ছিল, সে সুন্দর ঘর পরিবার
পেয়েছিল । কৃত কর্মের ফলাফলের উপরেই সুখ-শান্তি নির্ভর করে। সেই অনুযায়ী সুখ থাকে।
অল্প কিছু দুঃখের মুখও দেখে থাকে। কারণ, সম্পূর্ণ কর্মাতীত অবস্থায় তো কেউ পৌঁছাতেই
পারে না। তবুও জন্ম তো বড় আর সুখী ঘরেই নেবে। এমনটাও ভেবো না যে, এখানে কোনও সুখী
ঘর নেই। অনেক ভালো পরিবার এখনও দেখা যায়। কিছু পরিবার তো এতো ভালো হয় যে কিছু বলার
অপেক্ষাই রাখে না । বাবা (ব্রহ্মা) এমন কিছু পরিবার দেখেছেন । বড় পরিবার একত্রে থাকা
সত্ত্বেও এতো শান্ত পরিবেশে সবাই মিলেমিশে থাকে। সবাই একত্রে ভক্তি-অর্চনা করে, গীতা
পাঠ ইত্যাদি করে । ব্রহ্মা বাবা জানতে চেয়েছিলেন, একত্রে এতজন থাকে তবুও কি তাদের
মধ্যে কোনও ঝগড়া-ঝাটি নেই? উত্তরে জানিয়েছিল আমাদের কাছে তো স্বর্গ এসে ধরা দিয়েছে
যে আমরা সবাই একসাথে থাকি। কোনো লড়াই ঝগড়াতে নেই, সকলে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকে। তারা
এখানেই স্বর্গ সুখ অনুভব করে। বুদ্ধিতে যখন স্বর্গের ধারণা আছে - স্বর্গ তো অবশ্যই
কখনও ছিল, যা এখন অতীত হয়ে গেছে। আবার তার সূচনা হতে চলেছে। কিন্তু স্বর্গে যাওয়ার
জন্য যে স্বভাব-সংস্কার প্রয়োজন তা সচরাচর দেখা যায় না। যদিও স্বর্গে দাস-দাসীরও
প্রয়োজন। (সেই সব পদ নির্ণয় হবে গুণের তারতম্য অনুসারে) । রাজধানী স্থাপনার কাজ শুরু
হয়েছে। যারা ব্রাহ্মণ হবে, তারাই দৈবী ঘরানায় যাবে কিন্তু নম্বরানুসারে পুরুষার্থ
অনুযায়ী। যেমন কারো স্বভাব খুব মিষ্টি হয়, সবার সাথে মিষ্টি ব্যবহার করে। কারো প্রতি
রাগ ভাব থাকে না। ক্রোধই মূল দুঃখের কারণ। মনসা -বাচা-কর্মণা ( ভাবনা, বাক্য, কর্ম)
যার দ্বারাই হোক দুঃখ দিয়ে থাকে, তাদের দুঃখী আত্মা বলে। যেমন বলা হয় - পাপ আত্মা
অথবা পুণ্য আত্মা, তখন কিন্তু শরীরের প্রসঙ্গ আসে না। বাস্তবে গুণ বা অবগুণ সে তো
আত্মাই ধারণ করে। সেইজন্যই সব পাপ আত্মাও একই রকমের হয়না। সব পুণ্য আত্মাও একইরকম
হয়না । নম্বরানুসারে পুরুষার্থ অনুযায়ী হয়। যেমন কোনো স্টুডেন্ট নিজেরাই অনুমান করতে
পারে নিজেদের চরিত্র ও অবস্থা সম্পর্কে যে আমরা কেমন আচরণ করি? সবার সাথেই কি মধুর
আচরণ করি? কেউ কিছু বললে উল্টো-পাল্টা উত্তর দিই না তো? বাবাও বাচ্চাদের শিক্ষা দেন
- সবার সাথেই মধুর ব্যবহার করার জন্য। কেউ যদি সেই ধরনের কিছু বলে, তবুও তাকে
উল্টো-পাল্টা জবাব না দিতে। অনেকেই বাবাকে বলে - বাচ্চাদের ব্যবহারে রাগ হয়। বাবা
বলেন যতদূর সম্ভব ভালোবাসা রেখে কাজ করবে। নির্মোহী (মোহহীন) হতে হবে।
বাচ্চারা তোমরা তো
বুঝেছো - আমাদের এই লক্ষ্মী-নারায়ণের মতো হতে হবে। এইম অবজেক্ট সামনে । কত উচ্চ এই
এইম অবজেক্ট । শিক্ষা প্রদানকারী বাবাও উচ্চ থেকেও উচ্চতম। কতভাবে শ্রী কৃষ্ণের
মহিমা করা হয় - সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬ কলা সম্পন্ন ....এখন তোমরা বাচ্চারা জানো আমরা
এই রকম হতে চলেছি। তোমরা এখানে এসেছ দেবী-দেবতা হওয়ার জন্য। এটাই হলো প্রকৃত
সত্য-নারায়ণ কথা, যা নর থেকে নারায়ণ তৈরি করে। অমরপুরীতে যাওয়ার জন্য অমরকথা। কোনও
সন্ন্যাসীই এইসব বিষয়ে জানেনা। কোনও মানুষকেই জ্ঞানের সাগর বা পতিত-পাবন বলা যায়
না। যখন সম্পূর্ণ দুনিয়াই পতিত হয়ে গেছে তখন আমরা কাকে পতিত-পাবন বলতে পারি? এখানে
কেউ-ই পুণ্য আত্মা হতে পারে না। বাবা বোঝান - এই দুনিয়া পতিত। শ্রী কৃষ্ণ প্রথম
নম্বরে কিন্তু তাকেও ভগবান বলা যায় না। ভগবান হলেন জন্ম-মৃত্যু রহিত যাঁকে উদ্দেশ্য
করে বলা হয় শিব পরমাত্মায়ঃ নমঃ। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শঙ্করকে দেবতা বলে কিন্তু শিবকে
পরমাত্মা বলে থাকে। সুতরাং শিব সবার উপরে। উনি হলেন সবার পিতা, উত্তরাধিকারও তাঁর
কাছ থেকেই পাওয়া যায়, সর্বব্যাপী বলে দিলে উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয় না। বাবা স্বর্গ
স্থাপনা করেন। সুতরাং অবশ্যই স্বর্গের উত্তরাধিকার দেবেন । লক্ষ্মী-নারায়ণ হলো
প্রথম নম্বরে। ঈশ্বরীয় জ্ঞানের দ্বারা এই পদ প্রাপ্ত করেছে। ভারতের প্রাচীন যোগ কেন
প্রসিদ্ধ হবে না! যার দ্বারা মানুষ বিশ্বের মালিক হতে পারে, একে বলে সহজ যোগ, সহজ
জ্ঞান। অতি সহজ যোগ, এক জন্মের পুরুষার্থ দ্বারাই কত বিশাল প্রাপ্তি হয়ে যায়। ভক্তি
মার্গে তো জন্ম-জন্মান্তর ধরে ঠোক্কর খেয়ে আসছে, প্রাপ্তি কিন্তু কিছুই হয়না। এখানে
এক জন্মেই প্রাপ্তি হয়। তাই একে সহজ যোগ বলা হয়। সেকেন্ডেই জীবন মুক্তি । আজকাল কত
রকম আবিষ্কার হয়ে চলেছে। সায়েন্সেরও কত ওয়ান্ডার, সাইলেন্সেরও দেখো কত ওয়ান্ডার !
কত কিছুই না দেখতে পাওয়া যায়। সে তুলনায় এখানে কিছু নেই। তোমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে
বসে আছ । চাকরি বাকরিও করছ । কাজকর্ম করছো...হাত কাজ করে যাচ্ছে (হৃদয় বাবাকে
স্মরণ করছে)...কিন্তু মন পড়ে থাকে প্রীতমের প্রতি। বলা প্রিয় আর প্রিয়তম। একে
অপরের চেহারার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাতে বিকারের সম্বন্ধ না থাকলেও ‐ যেখানেই বসে
থাকুক না কেন, সহজেই মনে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে তো এমনই হবে খাবার খাচ্ছো, মনে হবে যেন
তোমার সামনে উনি দাঁড়িয়ে আছেন । এই অনুভূতির মজা এমনই যে, পরে এমনই অবস্থা হবে যে
সবসময়, সর্বক্ষেত্রেই শুধুমাত্র বাবার স্মরণেই মশগুল হয়ে পড়বে । আচ্ছা!
মিষ্টি-মিষ্টি
হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত।
আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।
ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ )
রূপ-বসন্ত হয়ে সবসময় সুখদায়ী বোল বলতে হবে। কারো দুঃখদায়ী হবে না । জ্ঞানের
চিন্তনের মধ্যেই থাকতে হবে। মুখ থেকে যেন জ্ঞান রত্নই নির্গত হয় ।
২ ) নির্মোহী হতে হবে।
প্রত্যেকের সাথে ভালোবাসা রেখে কর্ম ব্যবহারে আসতে হবে। ক্রোধ করা চলবে না। অনাথদের
সনাথে পরিণত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বরদান:-
নিজের
ফরিস্তা রূপের দ্বারা গতি-সদগতির প্রসাদ বিতরণকারী মাস্টার গতি-সদগতিদাতা ভব
বর্তমান সময়ে বিশ্বের
অনেক আত্মারা পরিস্থিতির বশীভূত হয়ে চিৎকার করছে। কেউ জিনিসপত্রের অতিরিক্ত
মূল্যবৃদ্ধির জন্য, কেউ ক্ষুধার কারণে, কেউ শরীরের রোগের কারণে, কেউ মনের অশান্তির
কারণে... সকলের দৃষ্টি টাওয়ার অফ পিসের দিকে যাচ্ছে। সবাই দেখছে হাহাকারের পর
জয়-জয়কার কবে হবে। তো এখন নিজের সাকারী ফরিস্তা রূপ দ্বারা বিশ্বের দুঃখ দূর করো,
মাস্টার গতি-সদগতিদাতা হয়ে ভক্তদের গতি আর সদ্গতির প্রসাদ বিতরণ করো।
স্লোগান:-
মনকে
এতটাই শক্তিশালী বানিয়ে নাও যে কোনও পরিস্থিতিই যেন মনকে দোলাচলে না নিয়ে আসতে পারে।
অব্যক্ত ঈশারা :- এখন
সম্পন্ন বা কর্মাতীত হওয়ার ধুন লাগাও
এখন সেবার কর্মেরও
বন্ধনে এসো না। আমার স্থান, আমার সেবা, আমার স্টুডেন্ট, আমার সহযোগী আত্মারা, এটাও
হল সেবার কর্মের বন্ধন, এই কর্মবন্ধন থেকে কর্মাতীত হও। তো কর্মাতীত হতে হবে আর
“ইনি-ই সেই, ইনিই সবকিছু” এই অনুভব করিয়ে আত্মাদেরকে পরমাত্মার নিকটে নিয়ে আসতে হবে।