23.12.2025 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


“মিষ্টি বাচ্চারা - যে সংকল্প ঈশ্বরীয় সেবার্থে চলে, তাকে শুদ্ধ সঙ্কল্প বা নিঃসঙ্কল্পই বলা হবে, ব্যর্থ নয়”

প্রশ্নঃ -
বিকর্মের হাত থেকে রক্ষা পেতে, কোন্ কর্তব্য-কর্ম পালন করেও নিরাসক্ত থাকবে?

উত্তরঃ  
আত্মীয় পরিজনদের সেবা করতে হলে করো, তবে অলৌকিক ঈশ্বরীয় দৃষ্টি রেখে করো। তাদের সাথে এতটুকুও যেন মোহের তার জুড়ে না থাকে। যদি কোনো বিকারী সম্বন্ধের সঙ্কল্পমাত্রও উৎপন্ন হয়, তাহলেও বিকর্ম হয়ে যায়। তাই নিরাসক্ত হয়ে কর্তব্য কর্ম পালন করো। যত বেশি সম্ভব দেহী অভিমানী থাকার পুরুষার্থ করো।

ওম্ শান্তি ।
বাচ্চারা, আজকে তোমাদেরকে সঙ্কল্প, বিকল্প, নিঃসঙ্কল্প বা কর্ম, অকর্ম, বিকর্মের ওপরে বোঝানো হয় । তোমরা যতক্ষণ এখানে আছো, ততক্ষণ অবশ্যই সঙ্কল্প চলবে। সঙ্কল্প ধারণ না করে কোনো মানুষ এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। এখানেও সঙ্কল্প চলছে, সত্যযুগেও সঙ্কল্প চলবে এবং জ্ঞানহীন অবস্থাতেও সঙ্কল্প চলে। কিন্তু জ্ঞানমার্গে আসার পরে সঙ্কল্পগুলোকে সঙ্কল্প বলা যাবে না, কারণ তোমরা পরমাত্ম-সেবার নিমিত্ত হয়েছো এবং যজ্ঞের প্রয়োজনে যেসব সঙ্কল্প চলে সেগুলো সঙ্কল্প নয়, নিঃসঙ্কল্প। তবে যেসব ব্যর্থ সঙ্কল্প চলে, অর্থাৎ কলিযুগের সংসার এবং কলিযুগের আত্মীয় পরিদের বিষয়ে যেসব সঙ্কল্প চলে সেগুলোকে বিকল্প বলা হয়। সে'গুলির জন্যই বিকর্ম তৈরী হয় এবং বিকর্মের কারণেই দুঃখ আসে। তবে যজ্ঞের প্রতি কিংবা ঈশ্বরীয় সেবার প্রতি যেসব সঙ্কল্প চলে, সেগুলি হলো নিঃসঙ্কল্প। সেবার বিষয়ে যদি শুদ্ধ সঙ্কল্প চলে, সেটা চলতে পারে । দেখো, বাবা তো এখানে তোমাদেরকে লালন পালন করার জন্য বসে আছেন। তাঁর সেবা করার জন্য মাম্মা-বাবার অবশ্যই সঙ্কল্প চলে। কিন্তু এই সঙ্কল্পগুলোকে সঙ্কল্প বলা যাবে না, এর দ্বারা কোনো বিকর্ম হয় না। কিন্তু যদি কোনো বিকারী সম্বন্ধের প্রতি কোনো সঙ্কল্প চলে, তাহলে অবশ্যই বিকর্ম তৈরি হয়। বাচ্চারা, তোমাদেরকে বাবা বলছেন - আত্মীয় পরিজনদের সেবা করতে হলে করো কিন্তু অলৌকিক ঈশ্বরীয় দৃষ্টি রেখে করো। এতটুকুও যেন মোহের তার তাতে জুড়ে না থাকে। নিরাসক্ত হয়ে নিজের কর্তব্য কর্ম পালন করতে হবে । যদি কেউ এখানে থেকেও কর্ম সম্বন্ধতে থাকার কারণে সেগুলোকে ছিন্ন করতে না পারে, তাদেরও পরমাত্মাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। হাত ধরে থাকলে কিছু না কিছু পদ অবশ্যই পেয়ে যাবে। প্রত্যেকেই নিজেকে জানো যে আমার মধ্যে কোন্ বিকার আছে। যদি কারোর মধ্যে একটি বিকারও থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে দেহ-অভিমানী বলা হবে। যার মধ্যে কোনো বিকার নেই, তাকেই দেহী-অভিমানী বলা যাবে। যদি কারোর মধ্যে একটিও বিকার থাকে, তাহলে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে এবং যে বিকারকে ত্যাগ করবে সে শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে। যেমন দেখো, কোনো কোনো বাচ্চার মধ্যে না কাম আছে, না ক্রোধ আছে, না লোভ আছে, না মোহ আছে…, তারা খুব ভালো সেবা করতে পারে। তারা সর্বদা জ্ঞান-বিজ্ঞানে ভরপুর থাকে। তোমরা সবাই ওদের পক্ষে ভোট দেবে। এটা যেমন আমি জানি, তোমরা বাচ্চারাও জানো - যে ভালো, তাকে সবাই ভালো বলে, যার মধ্যে কোনো কমতি থাকে, তাকে সবাই ভোট দেয় না। এটা নিশ্চিত যে, যার মধ্যে কোনো বিকার আছে, সে সার্ভিস করতে পারবে না। যে বিকার প্রুফ, সে সার্ভিস করে অন্যকেও নিজের সমান বানাতে পারবে। তাই বিকার এবং বিকল্পের ওপর সম্পূর্ণ বিজয়ী হতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি সঙ্কল্প চললে তাকে নিঃসংঙ্কল্প বলা যায়। বাস্তবে কোনো সঙ্কল্প না চলাকে, সুখ দুঃখের থেকে নির্লিপ্ত হয়ে যাওয়াকে নিঃসঙ্কল্প অবস্থা বলা হয়। কিন্তু সেটা তো অন্তিমে যখন তোমরা সমস্ত হিসাব চুকিয়ে সুখ দুঃখের থেকে নির্লিপ্ত অবস্থায় ফিরে যাও, তখন কোনো সঙ্কল্প চলে না। তখন কর্ম অকর্মের ঊর্ধ্বে কর্মহীন অবস্থায় থাকো। এখানে তোমাদের অবশ্যই সঙ্কল্প চলবে, কারণ তোমরা সমগ্র দুনিয়াকে শুদ্ধ করার নিমিত্ত হয়েছ। তাই এরজন্য তোমাদের মধ্যে অবশ্যই শুদ্ধ সঙ্কল্প চলবে। সত্যযুগেও শুদ্ধ সঙ্কল্প চলার জন্য সঙ্কল্পকে সঙ্কল্প বলা হয় না, কর্ম করলেও কর্মের বন্ধন তৈরি হয় না। বুঝেছ। কর্ম, অকর্ম এবং বিকর্মের এই পরিমাণ তো পরমাত্মার পক্ষেই বোঝানো সম্ভব। তিনিই বিকর্ম থেকে মুক্ত করেন, যিনি এখন সঙ্গমযুগে তোমাদেরকে পড়াচ্ছেন। তাই বাচ্চারা, নিজের প্রতি খুব সাবধান হও। নিজের হিসাবপত্রের প্রতি নজর দাও। তোমরা এখানে হিসাবপত্র মেটানোর জন্য এসেছ। এমন যেন না হয় যে এখানে এসেও হিসাব তৈরি করতে থাকলে। তাহলে শাস্তি পেতে হবে। গর্ভজেলের শাস্তি কিন্তু মোটেই কম শাস্তি নয়। তাই অনেক পুরুষার্থ করতে হবে। এটা খুব উঁচু লক্ষ্য, তাই খুব সাবধানে চলতে হবে। বিকৃত সঙ্কল্পগুলোকে পরাজিত করতে হবে। এখনও পর্যন্ত তোমরা কতদূর বিকল্পের ওপর জয়ী হয়েছ এবং কতটা নিঃসঙ্কল্প অর্থাৎ সুখ দুঃখের থেকে নির্লিপ্ত অবস্থায় থাকো, সেটা তোমরা নিজেরাই জানো। যে নিজেকে বুঝতে পারে না, সে মাম্মা বাবাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। তোমরা ওনাদের উত্তরাধিকারী, তাই ওনারা বলতে পারবেন। সঙ্কল্পশূন্য অবস্থায় থাকলে তোমরা কেবল নিজেরই নয়, যেকোনো বিকারগ্রস্থ মানুষের বিকর্মকে দমিয়ে রাখতে পারবে। যেকোনো কামুক পুরুষ তোমাদের সামনে আসুক না কেন, তার মধ্যে কোনো বিকারের সঙ্কল্প চলবে না। যেভাবে কেউ যখন দেবতাদের কাছে যায়, তখন ওদের সামনে শান্ত হয়ে যায়, সেইরকম তোমরাও গুপ্ত রূপে দেবতা। তোমাদের সামনে কারোর কোনো বিকারের সঙ্কল্প চলতেই পারে না। কিন্তু এমন কিছু কামুক পুরুষ আছে, যাদের হয়তো কিছু সঙ্কল্প চলবে, কিন্তু তোমরা যদি যোগযুক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো, তবে তারা তোমাদেরকে আক্রমণ করতে পারবে না। দেখো বাচ্চারা, তোমরা তো এখানে পরমাত্মার কাছে বিকারের আহুতি দেওয়ার জন্য এসেছো। কিন্তু কেউ কেউ যথাযথ ভাবে আহুতি দেয়নি, পরমপিতার সঙ্গে যোগযুক্ত হয়নি। সারাদিন তার বুদ্ধির যোগ বিভিন্ন দিকে ঘুরে বেড়ায় অর্থাৎ সে দেহী-অভিমানী হয়নি। দেহ-অভিমানী হওয়ার জন্য সে যেকোনো ব্যক্তির স্বভাবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায় এবং যার ফলে পরমাত্মার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হয় না অর্থাৎ পরমাত্মার জন্য সার্ভিস করার অধিকারী হয় না। সুতরাং, যারা পরমাত্মার কাছ থেকে সেবা নিয়ে তারপরে অন্যদের সেবা করছে অর্থাৎ পতিতদেরকে পবিত্র করছে, তারাই আমার সত্যিকারের পাকাপোক্ত বাচ্চা। ওরা অনেক ভালো পদ পাবে। এখন স্বয়ং পরমাত্মা এসে তোমাদের বাবা হয়েছেন। সাধারণ রূপধারী ওই বাবাকে চিনতে না পেরে কোনো রকমের সঙ্কল্প তৈরি হওয়ার অর্থ নিজের বিনাশ করা। এবার সেই সময়ও আসবে যখন ১০৮ জন জ্ঞানের গঙ্গা তাদের সম্পূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাবে। আর যারা পড়াশুনা করছে না, তারা নিজেরই সর্বনাশ করছে। এটা নিশ্চিতরূপে জানবে যে এই ঈশ্বরীয় যজ্ঞে কেউ যদি লুকিয়ে কোনো কাজ করে, তাহলে জানিজাননহার বাবা তাকে অবশ্যই দেখতে পান এবং তারপর তাকে সাবধান করার জন্য তিনি তাঁর সাকার স্বরূপ বাবাকে টাচ্ করান। তাই কোনো কিছুই লুকানো উচিত নয়। হয়তো কিছু ভুল হয়ে যায়, কিন্তু সেটা বলে দিলেই ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা পেয়ে যাবে। তাই বাচ্চারা, তোমরা সাবধানে থাকবে। বাচ্চাদেরকে প্রথমে নিজেকে বুঝতে হবে যে আমি কে, হোয়াট অ্যাম্ আই। শরীরটাকে তো “আমি” বলা হয় না, আত্মাকেই আমি বলা হয়। আমি আত্মা কোথা থেকে এসেছি? আমি কার সন্তান? আত্মা যখন বুঝতে পারে যে আমি আত্মা আসলে পরমপিতা পরমাত্মার সন্তান, তখনই নিজের বাবাকে স্মরণ করার ফলে আনন্দ হবে। বাচ্চারা তখনই আনন্দ পায় যখন তারা বাবার অক্যুপেশন জানতে পারে। যতক্ষণ ছোট থাকে, বাবার অক্যুপেশন জানে না, ততক্ষণ অতটা খুশি আসে না। যখন তারা বড় হতে থাকে, বাবার অক্যুপেশন জানতে পারে, তখন তাদের খুশি এবং নেশা বাড়তে থাকে। তাই আগে তাঁর অক্যুপেশন জানতে হবে যে আমার বাবা ক? তিনি কোথায় থাকেন ? যদি বলো যে আত্মা তাঁর মধ্যে লীন হয়ে যাবে, তাহলে তো আত্মার বিনাশ হয়ে গেল। তখন কার আনন্দ হবে? তোমাদের কাছে যেসব কৌতূহলী ব্যক্তিরা আসেন, তাদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে তোমরা এখানে কোন্ বিষয়ে পড়াশোনা করছো? এই শিক্ষার দ্বারা কেমন পদ পাওয়া যাবে? যারা ওই কলেজে পড়াশোনা করে, তারা তো বলে যে আমি ডাক্তার হচ্ছি, আমি ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছি…। তাদের কথা সকলেই বিশ্বাস করে যে এরা সত্যিসত্যিই এইরকম পড়াশোনা করছে। এখানেও স্টুডেন্টরা বলছে যে এটা হলো দুঃখের দুনিয়া যাকে নরক, হেল অথবা ডেভিল ওয়ার্ল্ড বলা হয়। এর বিপরীতে রয়েছে হেভেন অথবা ডিটি ওয়ার্ল্ড, যাকে স্বর্গ বলা হয়। এটা তো সবাই জানে এবং বুঝতেও পারে যে এই দুনিয়াটা ওইরকম স্বর্গ নয়। এটা তো নরক অথবা দুঃখের দুনিয়া, পাপ আত্মাদের দুনিয়া। সেইজন্যই তাঁকে আহ্বান করে - আমাদেরকে পুণ্যের দুনিয়ায় নিয়ে যাও। এখানে যেসব বাচ্চারা পড়াশোনা করছে, তারা জানে যে আমাদেরকে বাবা ওই পুণ্যের দুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই যেসব নতুন স্টুডেন্টরা আসে, তাদের বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত এবং বাচ্চাদের কাছে পড়াশুনা করা উচিত। ওরা তাদের টিচারের অথবা বাবার অক্যুপেশন বলতে পারবে। বাবা তো এখানে বসে বসে নিজের প্রশংসা করবেন না। টিচার কি নিজেই নিজের গুণগান করবে? সেটা তো স্টুডেন্টরাই বলবে যে ইনি এইরকম টিচার। তাই বলা হয় স্টুডেন্ট শোজ মাস্টার। বাচ্চারা, তোমরা তো এতো কোর্স পড়াশোনা করেছো। তোমাদের কাজ হলো নতুনদেরকে বোঝানো। কিন্তু দুনিয়ায় টিচার যাদের বি.এ., এম.এ. পড়ায়, তারা কখনো নতুন স্টুডেন্টদেরকে এ, বি, সি শেখায় না। তবে কোনো স্টুডেন্ট খুব বুদ্ধিমান হয় এবং তারা অন্যকেও পড়ায়। এক্ষেত্রে গুরু মা-র সুখ্যাতি আছে। ইনি হলেন ডিটি ধর্মের প্রথম মা, যাকে জগদম্বাও (বিশ্বমাতা) বলা হয়। মাতাদের অনেক গুণগান আছে। বঙ্গে কালী, দূর্গা, সরস্বতী এবং লক্ষ্মী - এই চারজন দেবীর প্রচুর পূজা হয়। কিন্তু এই চারজন দেবীর অক্যুপেশন তো জানতে হবে। যেমন লক্ষ্মী হলেন সম্পদের দেবী। তিনি এখানেই রাজত্ব করতেন। তবে কালী, দূর্গা ইত্যাদি নাম তো এনাকেই দেওয়া হয়েছে। যদি চারজন মাতা থাকেন, তাহলে তো চারজন পতিও থাকতে হবে। লক্ষ্মীর পতি হিসেবে তো নারায়ণ সুপ্রসিদ্ধ। কিন্তু কালীর পতি কে? (শঙ্কর) কিন্তু শঙ্করকে তো পার্বতীর পতি বলা হয়। পার্বতী আর কালী তো এক নয়। অনেকেই আছে যারা কালীর পূজা করে, মায়ের আরাধনা করে, কিন্তু পিতার ব্যাপারে কিছু জানে না। কালীর হয় একজন পতি থাকবে, নয়তো একজন পিতা থাকবে। কিন্তু কেউই এইসব বিষয় জানে না। তোমাদেরকে বোঝাতে হবে যে দুনিয়া আসলে একটাই। এটাই একটা সময়ে দুঃখের দুনিয়া বা দোজক হয়ে যায় এবং এটাই তারপরে সত্যযুগে বেহেস্ত অথবা স্বর্গ হয়ে যায়। লক্ষ্মী-নারায়ণ এই দুনিয়াতেই সত্যযুগে রাজত্ব করত। এছাড়া কোথাও সূক্ষ্মভাবে কোনো বৈকুণ্ঠ নেই যেখানে সূক্ষ্ম শরীরে লক্ষ্মী-নারায়ণ আছে। তাদের ছবি যখন এখানেই আছে, সুতরাং তারা নিশ্চয়ই এখানেই রাজত্ব করত। সকল খেলা এই সাকার জগতেই হয়। এই সাকার জগতেরই হিস্ট্রি জিওগ্রাফি রয়েছে। সূক্ষ্ম বতনের কোনো হিস্ট্রি জিওগ্রাফি হয় না। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে কোনো কৌতূহলী ব্যক্তিকে সবার আগে বাবার পরিচয় শেখাতে হবে, তারপরে বাদশাহীর সম্মন্ধে বোঝাতে হবে। বাবা মানে ভগবান, তিনি সুপ্রীম সোল। এটা যতক্ষণ না বুঝতে পারছে, ততক্ষণ পরমপিতার জন্য ততটা ভালোবাসা এবং খুশি আসবে না। কারণ আগে বাবাকে জানলেই তাঁর অক্যুপেশনও জানতে পারবে এবং তখনই খুশি আসবে। এই প্রাথমিক বিষয়টা বুঝতে পারলেই খুশি হবে। গড তো এভার হ্যাপি, আনন্দ স্বরূপ। আমরা তাঁর সন্তান, তাই আমাদের মধ্যেও কেন ঐরকম খুশি আসবে না? ঐরকম অপার খুশি কেন আসে না? আমি ভগবানের সন্তান, সদাসুখী মাস্টার ভগবান। কিন্তু ঐরকম খুশি না থাকলে বোঝা যায় যে নিজেকে বাচ্চা বলে বুঝতে পারেনি। ভগবান এভার হ্যাপি হলেও আমি হ্যাপি নেই, কারণ নিজের বাবাকেই চিনি না। খুব সহজ ব্যাপার। অনেকে আছে যাদের কাছে এই জ্ঞান ধারণ করার থেকেও শান্তি ভালো লাগে, কারণ অনেকেই এই জ্ঞান বুঝতে পারবে না। এতো সময়ও নেই। কেবল বাবাকে জেনে নিয়ে সাইলেন্সে থাকলেও কল্যাণ। যেমন সন্ন্যাসীরা পাহাড়ের গুহায় বসে পরমাত্মাকে স্মরণে করে। সেইরকম পরমপিতা পরমাত্মাকে, ওই সুপ্রীম লাইটকে স্মরণ করলেও কল্যাণ হবে। তাঁকে স্মরণ করে সন্ন্যাসীরাও নির্বিকার হতে পারে। কিন্তু ঘরে বসে স্মরণ করতে পারে না। ঘরে থাকলে সন্তানদের প্রতি মোহ তৈরি হয়, তাই সন্ন্যাস নিয়ে নেয়। পবিত্র হয়ে গেলে অবশ্যই সুখের অনুভব হয়। সন্ন্যাসীরা সর্বোত্তম। এই আদিদেবও তো সন্ন্যাসী হয়েছেন। সামনেই এনার মন্দির রয়েছে যেখানে ইনি তপস্যারত আছেন। গীতাতেও বলা আছে - সকল দৈহিক ধর্ম থেকে সন্ন্যাস নাও। ওরা সন্ন্যাস নেওয়ার পরে মহাত্মা হয়ে যায়। গৃহস্থকে মহাত্মা বলার রীতি নেই। স্বয়ং পরমাত্মা এসে তোমাদেরকে সন্ন্যাস করিয়েছেন। সুখ পাওয়ার জন্যই সন্ন্যাস নেয়। মহাত্মারা কখনো দুঃখী হয় না। রাজারাও যখন সন্ন্যাস নেয় তখন মুকুট ইত্যাদি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। যেমন গোপীচাঁদ সন্ন্যাস নিয়েছিল। নিশ্চয়ই ওতে সুখ পাওয়া যায়। আচ্ছা !

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) লুকিয়ে লুকিয়ে কোনো খারাপ কাজ করা উচিত নয়। বাপদাদার কাছে কোনো কথা লুকানো উচিত নয়। খুব সাবধানে থাকতে হবে।

২ ) স্টুডেন্ট শো'জ মাস্টার। যাকিছু পড়েছ, সেটা অন্যকেও পড়াতে হবে। এভারহ্যাপী ভগবানের সন্তান - এটা স্মরণে রেখে অপরিসীম খুশিতে থাকতে হবে।

বরদান:-
বিকাররূপী সাপগুলিকে শয্যা বানিয়ে বিষ্ণুর সমান সদা বিজয়ী, নিশ্চিন্ত ভব

বিষ্ণুর যে শেষ শয্যা দেখায়, এটা হলো তোমাদের অর্থাৎ বিজয়ী বাচ্চাদের সহজযোগী জীবনের স্মরণিক। সহজযোগ দ্বারা বিকাররূপী সাপও অধীন হয়ে যায়। যে বাচ্চারা বিকাররূপী সাপগুলির উপর বিজয় প্রাপ্ত করে, সাপগুলিকে আরাম করার শয্যা বানিয়ে দেয় তারা সদা বিষ্ণুর সমান হর্ষিত আর নিশ্চিন্ত থাকে। তো সদা এই চিত্র নিজের সামনে দেখো যে বিকারগুলিকে অধীন করে অধিকারী হয়েছো? আত্মা সদা আরামের স্থিতিতে নিশ্চিন্ত আছে!

স্লোগান:-
বালক আর মালিকভাবের ব্যালেন্সের দ্বারা প্ল্যানকে প্র্যাক্টিক্যালে নিয়ে এসো।

অব্যক্ত ঈশারা :- এখন সম্পন্ন বা কর্মাতীত হওয়ার ধুন লাগাও

নিজের প্রত্যেক কর্মেন্দ্রিয়ের শক্তিকে ঈশারা করো তাহলে ঈশারার দ্বারাই যেরকম চাও সেরকম চালাতে পারবে। এমন কর্মেন্দ্রিয়জীৎ হও তখন পুনরায় প্রকৃতিজীৎ হয়ে কর্মাতীত স্থিতির আসনধারী তথা বিশ্ব রাজ্য অধিকারী হতে পারবে। প্রত্যেক কর্মেন্দ্রিয় “জি হুজুর”, “জি হাজির” করতে থাকবে। তোমাদেরকে অর্থাৎ রাজ্য অধিকারীদেরকে সদা স্বাগতম অর্থাৎ সেলাম করতে থাকবে, তবে কর্মাতীত হতে পারবে।