05.06.2025 প্রাত: মুরলী ওম শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


“মিষ্টি বাচ্চারা - অসীম সুখ পাওয়ার জন্য তোমরা এই অসীম জ্ঞান লাভ করছো, তোমরা পুনরায় রাজযোগের শিক্ষার দ্বারা রাজত্ব প্রাপ্ত করছো"

প্রশ্নঃ -
তোমাদের এই ঈশ্বরীয় পরিবার (কুটুম্ব) কোন্ দিক দিয়ে একেবারেই আলাদা?

উত্তরঃ  
এই ঈশ্বরীয় পরিবারে কেউ কেউ একদিনের বাচ্চা, আবার আট দিনের বাচ্চাও আছে, কিন্তু সবাই পড়াশুনা করছে। বাবা-ই টিচার রূপে নিজের বাচ্চাদেরকে পড়াচ্ছেন। এটা হলো একেবারেই অন্যরকম ব্যাপার । আত্মা পড়ছে। আত্মা-ই বাবা বলে ডাকছে, বাবা তখন বাচ্চাদেরকে ৮৪ জন্মের কাহিনী শোনাচ্ছেন।

গীতঃ-
হে দূরদেশী....

ওম্ শান্তি ।
বৃক্ষপতিবার। এটাকেই বৃহস্পতি নাম দিয়ে দিয়েছে। এইসব উৎসবাদি তো প্রতিবছরই পালিত হয়। তোমরা প্রত্যেক সপ্তাহে বৃহস্পতি ডে পালন করো। বৃক্ষপতি অর্থাৎ যিনি এই মানব সৃষ্টি রূপী বৃক্ষের বীজ, যিনি চৈতন্য, তিনিই এই বৃক্ষের আদি, মধ্য এবং অন্তিমের জ্ঞান জানেন। অন্যান্য সমস্ত বৃক্ষই হলো জড়। কেবল এই বৃক্ষই হলো চৈতন্য, এটাকেই কল্পবৃক্ষ বলা হয়। এই বৃক্ষের আয়ু ৫ হাজার বছর এবং এটা ৪ ভাগে বিভক্ত। যেকোনো বিষয়ই চার ভাগে বিভক্ত হয়। এই দুনিয়াটাও চার ভাগে বিভক্ত। এখন এই পুরাতন দুনিয়ার অন্তিম সময় উপস্থিত। দুনিয়াটা কতো বড়। কোনো মানুষের বুদ্ধিতেই এই জ্ঞান নেই। এটা হলো নুতন দুনিয়ার জন্য নুতন শিক্ষা। নুতন দুনিয়ার রাজা হওয়ার জন্য কিংবা আদি সনাতন দেবী দেবতা হওয়ার জন্য তো নুতন জ্ঞানের প্রয়োজন। ভাষাতো অবশ্যই হিন্দি। বাবা বুঝিয়েছেন যে যখন দ্বিতীয় কোনো রাজত্ব স্থাপন হয়, তখন তাদের ভাষাও আলাদা হয়। সত্যযুগের ভাষা কেমন হবে? সেটা তো বাচ্চারা অল্প অল্প জানে। আগে কন্যারা ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখে এসে বলত। ওখানে কোনো সংস্কৃত ভাষা থাকবেই না। সংস্কৃত তো এই দুনিয়ায় প্রচলিত। যেটা এখানে আছে সেটা ওখানে থাকতে পারে না। সুতরাং বাচ্চারা জানে যে ইনি হলেন বৃক্ষপতি। তিনি হলেন এই বৃক্ষের ফাদার বা রচয়িতা, অর্থাৎ চৈতন্য বীজ। ওইসব বৃক্ষ তো জড় হয়। বাচ্চাদেরকে এই সৃষ্টির আদি, মধ্য এবং অন্তিমকেও জানতে হবে। এখন জ্ঞান না থাকার জন্য মানুষের মধ্যে সুখ নেই। এটা হল সীমাহীন জ্ঞান, যার দ্বারা অসীম সুখ পাওয়া যায়। দুনিয়ার গন্ডিবদ্ধ শিক্ষার দ্বারা তো কাক-বিষ্ঠা সম সুখ পাওয়া যায়। তোমরা জানো যে আমরা অসীম সুখ পাওয়ার জন্য পুনরায় পুরুষার্থ করছি। এই 'পুনরায়' শব্দটি কেবল তোমরাই শুনছো। তোমরাই মানব থেকে দেবতা হওয়ার জন্য এই রাজযোগের শিক্ষাগ্রহণ করছো। তোমরা এটাও জানো যে জ্ঞানের সাগর বাবা হলেন নিরাকার। বাচ্চারা, তোমরা আত্মারাও হলে নিরাকার, কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব শরীর আছে। এনার জন্মকেই অলৌকিক জন্ম বলা হয়। ইনি যেভাবে জন্ম নেন, সেভাবে অন্য কোনো মানুষ জন্মগ্রহণ করে না। এনার বানপ্রস্থ অবস্থাতে এনার মধ্যে প্রবেশ করেন। বাচ্চাদের (আত্মাদের) সামনে বসে থেকে বোঝাচ্ছেন। অন্য কেউ এইভাবে আত্মাদেরকে বাচ্চা-বাচ্চা বলতে পারবে না। যেকোনো ধর্মাবলম্বী হোক না কেন, সে জানে যে শিববাবা সকল আত্মার পিতা। তিনি তো অবশ্যই 'বাচ্চা-বাচ্চা' বলে ডাকবেন। এছাড়া কোনো মনুষ্য-আত্মাকে ঈশ্বর কিংবা বাবা বলা যাবে না। এমনিতে গান্ধীজিকেও বাপুজী বলা হয়। পৌরসভার মেয়রকেও পিতা (পৌরপিতা) বলা হয়। কিন্তু এইসব ফাদার তো শরীরধারী। তোমরা জানো যে আমাদের অর্থাৎ আত্মাদের পিতা আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন। বাবা প্রতি মুহূর্তে নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করার শিক্ষা দিচ্ছেন। ওই বাবা এসে আত্মাদেরকেই শিক্ষা দেন। এটা হলো ঈশ্বরীয় পরিবার। বাবার তো এতো সন্তান। তোমরাও বলো যে বাবা, আমি তো তোমারই। তোমরা সন্তান হয়েছ। কেউ বলে বাবা, আমি একদিনের বাচ্চা, অথবা আটদিনের বাচ্চা কিংবা একমাসের বাচ্চা। শুরুতে তো অবশ্যই ছোট থাকবে। হয়তো দুই-চারদিনের বাচ্চা, কিন্তু শারীরিক অঙ্গগুলো তো বড়ই রয়েছে। তাই সকল বড় (শারীরিক) বাচ্চাকেই পড়াশুনা করতে হবে। তোমরাও পড়ছো। বাবার বাচ্চা হওয়ার পরে বাবা বোঝাচ্ছেন যে কিভাবে তোমরা ৮৪ জন্ম নিয়েছো? বাবা বলছেন, আমিও এনার অনেক জন্মের অন্তিম জন্মে এনার মধ্যে প্রবেশ করে তারপর পড়াই। বাচ্চারা জানে যে এখানে আমরা সকলের থেকে বড় টিচারের কাছে এসেছি। তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই তারপর এই টিচাররা তৈরি হয়েছে, যাদেরকে পান্ডাও বলা হয়। তারাও সবাইকে পড়াতে থাকেন। যা কিছু জানতে থাকবেন, সেই মতো পড়াতে থাকবেন। সর্বপ্রথম এটাই বোঝাতে হবে যে আমাদের দুইজন পিতা। একজন হলেন লৌকিক পিতা, অন্যজন পারলৌকিক পিতা। এদের মধ্যে তো পারলৌকিক পিতাই বড় হবেন যাঁকে ভগবান বলা হয়। তোমরা জানো যে এখন আমরা এই পারলৌকিক পিতাকে পেয়েছি। অন্য কেউই তাঁকে জানে না। আস্তে আস্তে জানবে। তোমরা বাচ্চারা জানো যে আমাদের মতো আত্মাদেরকে বাবা নিজে পড়াচ্ছেন। আমরা আত্মারাই একটা শরীর ত্যাগ করে আরেকটা শরীর নেব। সর্বোত্তম দেবতা হব। সর্বোত্তম দেবতা হওয়ার জন্যই এসেছি। কোনো কোনো বাচ্চা এই পথে চলতে চলতে এই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেও ছেড়ে দেয়। কোনো বিষয়ে মনে সংশয় উৎপন্ন হয় কিংবা কোনো মায়াবী তুফান সহ্য করতে পারে না। কাম বিকার রূপী মহাশত্রুর কাছে পরাজিত হয়ে যায়। এইসকল কারণেই পড়া ছেড়ে দেয়। কাম বিকারের মতো মহাশত্রুর জন্যই বাচ্চাদেরকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। বাবা বলছেন, তোমরা অবলা মাতা-রাই প্রত্যেক কল্পে চিৎকার করে বাবাকে ডাকো। বলো - বাবা, তুমি এসে আমাদেরকে নগ্ন হওয়ার হাত থেকে বাঁচাও। বাবা এখন বলছেন - স্মরণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। স্মরণের দ্বারা-ই শক্তি আসতে থাকবে। শক্তিশালী মায়ার শক্তিও কমতে থাকবে। তারপর তোমরা মুক্ত হয়ে যাবে। এইভাবে অনেকেই বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে চলে আসে। অত্যাচার বন্ধ হয়ে গেলে এখানে এসে ব্রহ্মা বাবার মাধ্যমে শিববাবার সাথে বার্তালাপ করে। এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। বুদ্ধিতে থাকতে হবে যে আমরা শিববাবার কাছে যাচ্ছি। তিনি এই ব্রহ্মাবাবার শরীরে আসেন। আমরা শিববাবার সম্মুখে বসে আছি। স্মরণের দ্বারা-ই বিকর্ম বিনষ্ট হবে। নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে বাবাকে স্মরণ করতে হবে। এটাই শেখানো হয়। বাবার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেও নিজেকে আত্মা রূপে অনুভব করে এসো। আত্ম-অভিমানী হও। এই সময়েই তোমরা এই জ্ঞান পাচ্ছো। এই বিষয়েই পরিশ্রম করতে হয়। দুনিয়ায় ভক্তিমার্গে তো কত বেদ শাস্ত্র ইত্যাদি পড়তে হয়। এখানে তো কেবল একটাই পরিশ্রম করতে হয় - স্মরণ করার। এটা যেমন সহজ থেকেও সহজ বিষয়, সেইরকম আবার সবচেয়ে ডিফিকাল্ট থেকেও ডিফিকাল্ট বিষয়। বাবাকে স্মরণ করার থেকে সহজ বিষয় তো আর কিছুই নেই। বাচ্চার জন্ম হওয়ার পরই বাবা-বাবা বলে ডাকতে থাকে। কন্যা সন্তান হলে মা-মা বলবে। সেক্ষেত্রে আত্মা ফিমেল শরীর ধারণ করে। ফিমেল হলে তো মায়ের কাছেই যাবে। পুত্র সন্তান হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবাকেই স্মরণ করে । কারণ উত্তরাধিকার পাওয়া যায়। তোমরা আত্মারাও হলে সন্তান। তোমরা বাবার কাছ থেকে স্মরণের দ্বারা উত্তরাধিকার পাও। দেহ-অভিমানের বশে থাকলে উত্তরাধিকার পেতে সমস্যা হবে। বাবা বলছেন, আমি আমার সন্তানদেরকেই শিক্ষা দিই। বাচ্চারাও জানে যে আমাদের মতো বাচ্চাদেরকেই বাবা এসে পড়াচ্ছেন। বাবা ছাড়া এইসব কথা আর কেউই বলতে পারবে না। ভক্তিমার্গে তাঁকেই তোমরা ভালোবাসতে। তোমরা সবাই ওই অদ্বিতীয় প্রেমিকের প্রেমিকা ছিলে। গোটা দুনিয়াই ওই অদ্বিতীয় প্রেমিকের প্রেমিকা। পরমাত্মাকে সবাই পরমপিতাও বলে। বাবাকে তো প্রেমিকা বলা যায় না। বাবা বোঝাচ্ছেন, তোমরা সবাই ভক্তিমার্গে প্রেমিকা ছিলে। এখনো এইরকম অনেক প্রেমিকা রয়েছে। কিন্তু পরমাত্মা কাকে বলা যাবে - এই বিষয়েই তাদের মধ্যে অনেক সংশয় রয়েছে। গণেশ, হনুমান ইত্যাদি সবাইকে পরমাত্মা বলে দিয়ে একেবারে জট পাকিয়ে দিয়েছে। কেবল একজন ছাড়া আর কেউ এই অবস্থা ঠিক করতে পারবে না। আর কারোর সেই শক্তি নেই। বাবা এসেই বাচ্চাদেরকে বোঝাচ্ছেন। তারপর বাচ্চারা তাদের পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে বুঝতে পারে এবং বোঝানোর যোগ্য হয়। রাজধানী স্থাপন হচ্ছে। হুবহু আগের কল্পের মতো তোমরা এখানে শিক্ষা গ্রহণ করছো। তারপর নুতন দুনিয়ায় গিয়ে প্রাপ্তি ভোগ করবে। সেটাকে অমরলোকও বলা হয়। তোমরা কালের (মৃত্যুর) ওপরে বিজয়ী হয়ে যাও। ওখানে কখনোই অকালে মৃত্যু হবে না। নামটাই হলো স্বর্গ। বাচ্চারা, তোমাদের এই পড়াশুনার বিষয়ে অনেক খুশি হওয়া উচিত। বাবা স্মরণে থাকলে বাবার সম্পত্তিও স্মরণে থাকবে। এক সেকেন্ডে পুরো ড্রামার জ্ঞান বুদ্ধিতে চলে আসে। মূলবতন, সূক্ষ্মবতন, স্থূলবতন এবং ৮৪ জন্মের চক্র ব্যস্ । এই গোটা নাটকটা ভারতের ওপরেই বানানো হয়েছে । বাকি সব হলো বাইপ্লট। বাবা নলেজও তোমাদেরকেই শোনান। তোমরাই উচ্চ থেকেও উচ্চ হও, তারপর তোমরাই নীচ এর থেকেও নীচ হয়ে যাও। দ্বি-মুকুটধারী মহারাজা থেকে একেবারে কাঙাল হয়ে যাও। এখন ভারত একেবারে কাঙাল - ভিখারি হয়ে গেছে। প্রজার ওপরে প্রজাদের রাজত্ব চলছে। সত্যযুগে ছিল দ্বি-মুকুটধারী মহারাজা-মহারানীর রাজত্ব। এগুলো আজও সকলেই মানে। আদিদেব ব্রহ্মার অনেক নাম রেখেছে। তাঁকে মহাবীর বলা হয়। আবার হনুমানকেও মহাবীর বলা হয়। বাস্তবে তোমরা বাচ্চারাই হলে সত্যিকারের মহাবীর হনুমান। কারণ তোমরা এত যোগযুক্ত থাকো যে যতই মায়াবী তুফান আসুক না কেন, তোমাদেরকে টলাতে পারে না। তোমরাও মহাবীরের সন্তান মহাবীর হয়ে গেছ। কারণ তোমরাই মায়াকে পরাজিত করে বিজয়ী হও। প্রত্যেকেই ৫ বিকার রূপী রাবণের ওপরে জিৎ প্রাপ্ত করে। কেবল একজন মানুষের কথা নয়। তোমাদের প্রত্যেককেই ধনুক ভাঙতে হবে অর্থাৎ মায়াকে হারাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো লড়াই ঝগড়ার ব্যাপার নেই। ইউরোপীয়রা কেমন ভাবে যুদ্ধ করবে আর ভারতে কৌরব এবং যবনদের মধ্যে লড়াই লাগবে। রক্তের নদীর কথাও প্রচলিত রয়েছে। তারপর দুধের নদীও প্রবাহিত হবে। বিষ্ণুকে ক্ষীরের সাগরে দেখানো হয়। লক্ষ্মী-নারায়ণ হলো পারশনাথ। নেপালের দিকে পশুপতি নাম রেখে দিয়েছে । এক বিষ্ণুর দুই রূপ - পারশনাথ এবং পারশনাথিনী। তারা হলো পশুপতিনাথ পতি আর পশুপতিনাথ পত্নী । ওখানে বিষ্ণুর ছবিও দেখানো হয়। লেকের মতোও বানানো হয়েছে। কিন্তু লেকের মধ্যে ক্ষীর বা দুধ কোথা থেকে আসবে? বড় কোনো উৎসবের দিনে সেই লেকে দুধ ঢেলে দেখানো হয় যে ক্ষীরের সাগরে বিষ্ণু শুয়ে আছে। কোনো অর্থই হয় না। কোনো মানুষই চার ভুজ বিশিষ্ট হতে পারে না।

বাচ্চারা তোমরা হলে সোস্যাল ওয়ার্কার । আত্মিক পিতার সন্তান তোমরা তাই না । বাবা তো সবকিছুই বোঝাচ্ছেন। কোথাও কোনো সংশয় প্রকাশ করা উচিত নয়। সংশয় মানেই মায়াবী তুফান। তোমরা আমাকে পতিত-পাবন রূপেই ডেকে এসেছ। বলেছ - হে পতিত-পাবন এসো, তুমি এসে আমাদেরকে পবিত্র করে দাও। বাবা বলেন, কেবল আমাকেই স্মরণ করলে তোমরা পবিত্র হয়ে যাবে। ৮৪ জন্মের চক্রকেও স্মরণ করতে হবে। বাবাকে পতিত-পাবন এবং জ্ঞানের সাগর বলা হয়। দুটো বিষয় রয়েছে। একদিকে যেমন পতিতদেরকে পবিত্র বানিয়ে দেন, সেইরকম ৮৪ জন্মের জ্ঞানও শোনান। তোমরা বাচ্চারা এটাও জেনেছ যে ৮৪ জন্মের এই চক্র কেবল চলতেই থাকে। এর কোনো সমাপ্তি হয় না। পুরুষার্থের ক্রম অনুসারে তোমরা এটাও জানো যে বাবা কতোই না মিষ্টি। তাঁকে সকল পতিরও পতি বলা হয়। তিনি তো আবার বাবাও। বাবা বলছেন - বাচ্চারা, তোমাদের প্রাপ্তি আমার থেকে অনেক বেশি। কিন্তু আমার মতো এইরকম বাবাকেও ত্যাগ করে চলে যায়। এটাও ড্রামাতেই আছে। পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়ার অর্থ ত্যাগ করা। কতোই না অবোধ। যে বাচ্চা বিচক্ষণ হবে, সে সহজেই সকল বিষয় বুঝে নিয়ে অন্যকেও পড়াতে থাকবে। সে খুব তাড়াতাড়ি নির্ণয় নিয়ে নেবে যে ওই পড়ার দ্বারা কি পাওয়া যায় আর এই পড়ার দ্বারা কি পাওয়া যায়। কোন্ পড়াটা পড়া উচিৎ। বাবা বাচ্চাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। বাচ্চারাও বুঝতে পারে যে এটা খুব ভালো শিক্ষা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলে যে ওই জাগতিক পড়াশুনা না পড়লে আত্মীয়-বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হবে। বাবা বলছেন - দিন দিন সময় আরো কমে আসছে। বেশি দূর তো পড়তে পারবে না। খুব জোরদার প্রস্তুতি চলছে। সব রকমের প্রস্তুতি চলছে। দিনে দিনে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওরা বলে যে এমন সব জিনিস তৈরি করেছে যার দ্বারা একসঙ্গে সবকিছু শেষ করে দেওয়া সম্ভব। তোমরা বাচ্চারা জানো যে ড্রামা অনুসারে এখন লড়াই হবে না। আগে রাজত্ব স্থাপন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তৈরি হব। ইনিও নিজেকে তৈরি করছেন। অন্তিম সময়ে তোমরা অনেক প্রভাব বিস্তার করবে। গায়ন রয়েছে - হে প্রভু, সবই তোমার লীলা। এটা তো এই সময়ের-ই গায়ন। এটাও বলা হয় যে তোমার গতি, মতি একেবারে আলাদা। প্রত্যেক আত্মার ভূমিকা আলাদা আলাদা। বাবা এখন তোমাদেরকে শ্রীমৎ দিচ্ছেন যে কেবল আমাকে স্মরণ করলেই বিকর্ম বিনষ্ট হব। কোথায় শ্রীমৎ আর কোথায় মানুষের মত। তোমরা জানো যে পরমাত্মা ছাড়া আর কেউই পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করতে পারবে না। তিনি ড্রামা অনুসারে আগের কল্পের মতো ১০০ শতাংশ পবিত্রতা, সুখ, শান্তি স্থাপন করছেন। কিভাবে? সেটা এখানে এসে বোঝো। তোমরা বাচ্চারাও সহযোগী হও। যেসব বাচ্চারা অনেক সহযোগ করে, তারা বিজয় মালার দানা হয়ে যায়। বাচ্চারা, তোমাদের নামগুলোও কত সুন্দর ছিল। সেইসব নামের লিস্ট অ্যালবামে লিখে রাখতে হবে। তোমরা ভাট্টি করছিলে। ঘর বাড়ি ত্যাগ করে বাবার হয়ে গিয়েছিলে। একেবারে ভাট্টিতে এসে পড়েছিলে। এমন কঠোর ভাট্টি ছিল যে ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। যেহেতু বাবার বাচ্চা হয়েছ, তাই তোমাদের নাম তো অবশ্যই রাখতে হবে। সবকিছু স্যারেন্ডার করেছিলে। তাই তোমাদের নাম রাখা হয়েছিল। কি আশ্চর্য ব্যাপার, তাই না? বাবা প্রত্যেকের নাম রেখেছিলেন। আচ্ছা।

মিষ্টি-মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা বাপদাদার স্মরণের স্নেহ-সুমন আর সুপ্রভাত। আত্মাদের পিতা তাঁর আত্মা রূপী বাচ্চাদেরকে জানাচ্ছেন নমস্কার।

ধারণার জন্য মুখ্য সার :-
১ ) কোনো ব্যাপারেই সংশয় প্রকাশ করা উচিত নয়, মহাবীর হয়ে মায়াবী তুফানগুলি অতিক্রম করতে হবে। এত যোগযুক্ত থাকো যে মায়াবী তুফান টলাতে পারবে না।

২ ) বিচক্ষণ হয়ে নিজের জীবনকে ঈশ্বরীয় সেবাতে নিয়োজিত করতে হবে। সত্যিকারের আধ্যাত্মিক সোস্যাল ওয়ার্কার হতে হবে। এই আধ্যাত্মিক পাঠ নিজে পডে অন্যকেও পড়াতে হবে।

বরদান:-
অহম্ আর বহম (আমিত্ব আর সংশয়)-কে সমাপ্ত করে রহমদিল (করুণাময়) হয়ে বিশ্ব কল্যাণকারী ভব

যেরকমই অপগুণযুক্ত আত্মা, কড়া সংস্কারী আত্মা, অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন আত্মা হোক, কিন্তু যে দয়াবান বিশ্ব কল্যাণকারী বাচ্চা হবে সে সকল আত্মাদের প্রতি ল' ফুল এর সাথে সাথে লভফুলও হবে। কখনও এই সংশয়ের মধ্যে আসবে না যে, এই আত্মা তো কখনও পরিবর্তন হতেই পারবে না, এ তো এইরকমই... বা এ কিছুই করতে পারবে না, আমিই হলাম সবকিছু.… এই আত্মা কিছুই নয়। এই প্রকারের অহম (আমিত্ব) আর বহম-কে (সংশয়) ছেড়ে, দুর্বলতা বা খারাপগুলিকে জেনেও ক্ষমা করা করুণাময় বাচ্চারাই বিশ্ব কল্যাণের সেবাতে সফল হয়।

স্লোগান:-
যেখানে ব্রাহ্মণদের তন-মন-ধনের সহযোগ আছে সেখানে সফলতা সাথে আছে।

অব্যক্ত ঈশারা : আত্মিক স্থিতিতে থাকার অভ্যাস করো, অন্তর্মুখী হও

আত্মারা যখন নিজের আত্মিক স্বরূপের অনুভব করবে তখন তারা বাবার দিকে আকৃষ্ট হয়ে, অহো প্রভু-র গীত গাইবে আর দেহভান থেকে সহজে অর্পণ হয়ে যাবে। অহো তোমার ভাগ্য! অহো! আমার ভাগ্য! এই ভাগ্যের অনুভূতির কারণে দেহ আর দেহের সম্বন্ধের স্মৃতি ত্যাগ করে দেবে।