30-11-2025 প্রাতঃ মুরলি ওম্ শান্তি "অব্যক্ত বাপদাদা" রিভাইসঃ 18-01-2008 মধুবন


"প্রকৃত স্নেহী হয়ে সব বোঝা বাবাকে দিয়ে পরমানন্দের অনুভব করো, পরিশ্রম মুক্ত হও"


আজ বাপদাদা চতুর্দিকে নিজের নিশ্চিন্ত বাদশাহদের সংগঠন দেখছেন। বাদশাহদের এত বড় সভা সমগ্র কল্পে এই সঙ্গমের সময় হয়ে থাকে। স্বর্গেও বাদশাহদের এত বড় সভা হবে না। কিন্তু এখন বাপদাদা সর্ব বাদশাহের সভা দেখে প্রফুল্লিত হচ্ছেন। যারা দূরের তারাও হৃদয়ের নিকটে প্রতীয়মান হচ্ছে। তোমরা সবাই নয়নে সমাহিত হয়ে আছ, তারা হৃদয়ে সমাহিত হয়ে আছে। কত সুন্দর সভা! আজকের বিশেষ দিবসে সবার মুখে অব্যক্ত স্থিতির স্মৃতির ঔজ্জ্বল্য প্রতীয়মান হচ্ছে। সবার হৃদয়ে ব্রহ্মা বাবার স্মৃতি সমাহিত হয়ে আছে। আদি দেব ব্রহ্মা বাবা এবং শিব বাবা উভয়েই সব বাচ্চাকে দেখে আনন্দিত হচ্ছেন।

আজ তো ভোর দুটো থেকে শুরু করে বাপদাদার গলায় বিভিন্ন রকমের মালা পরানো হচ্ছিল। ফুলের এই মালা কমন। হিরের মালাও কোনো বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু স্নেহের অমূল্য মোতির মালা অতি শ্রেষ্ঠ। প্রত্যেক বাচ্চার হৃদয়ে আজকের দিনে স্নেহ বিশেষভাবে ইমার্জ ছিল। বাপদাদার কাছে চার রকমের ভিন্ন ভিন্ন মালা ইমার্জ ছিল। প্রথম নম্বর শ্রেষ্ঠ বাচ্চাদের, যারা বাবা সমান হওয়ার শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থী বাচ্চা। এমন বাচ্চারা মালা রূপে বাবার গলায় গাঁথা হয়ে ছিল। প্রথম মালা সবচাইতে ছোট ছিল। দ্বিতীয় মালা - হৃদয়ের স্নেহে সমীপ ও সমান হওয়ার পুরুষার্থী বাচ্চাদের মালা। তারা শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থী, এরা পুরুষার্থী।তৃতীয় মালা - যে মালা বড় ছিল তা' স্নেহীও ছিল, বাবার সেবাতে সাথিও ছিল। কিন্তু কখনো তীব্র পুরুষার্থী, আর কখনো কখনো তুফান মোকাবিলা বেশি করে। কিন্তু তারা উৎসাহী, সম্পন্ন হওয়ার প্রচেষ্টাও থাকে ভালো। চতুর্থ মালা ছিল অনুযোগকারীদের। অব্যক্ত ফরিস্তা ফেসের রূপে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের বাচ্চাদের মালা ছিল। বাপদাদাও ভিন্ন ভিন্ন মালা দেখে খুশিও হচ্ছিলেন, আর সেইসাথে স্নেহ আর সকাশ দিচ্ছিলেন। এখন তোমরা সবাই নিজেকে নিজে ভাবো - আমি কে? কিন্তু চতুর্দিকের বাচ্চাদের মধ্যে বর্তমান সময়ে হৃদয়ে বিশেষ সঙ্কল্প ইমার্জ আছে যে এখন কিছু করতেই হবে। এই উৎসাহ উদ্দীপনা মেজরিটির মধ্যে সঙ্কল্প রূপে আছে। স্বরূপে তোমরা নম্বরক্রমে আছ, কিন্তু এটা তোমাদের সঙ্কল্পে আছে।

বাপদাদা সব বাচ্চাকে আজকের এই স্নেহের দিনে, স্মৃতির দিনে, সমর্থী দিবসে হৃদয়ের বিশেষ আশীর্বাদ এবং হৃদয়ের কল্যাণকারী ভাবনা দিচ্ছেন। আজকের বিশেষ দিনে স্নেহ হওয়ার কারণে মেজরিটি স্নেহতে ডুবে আছে। এভাবেই পুরুষার্থে সদা ডুবে থাকো। যদি লাভলীন থাকো তবে সহজ সাধন হলো স্নেহ, হৃদয়ের স্নেহ। বাবার পরিচয়ের স্মৃতি সমেত স্নেহ, বাবার থেকে সমস্ত প্রাপ্তির স্নেহসম্পন্ন স্নেহ। স্নেহ খুব সহজ সাধন, কেননা, স্নেহী আত্মা পরিশ্রম থেকে রেহাই পেয়ে যায়। স্নেহতে লীন হওয়ার কারণে, স্নেহতে ডুবে থাকার কারণে যে কোনো ধরণের পরিশ্রম মনোরঞ্জন রূপে অনুভূত হয়। স্নেহী আপনা থেকেই দেহবোধ, দেহের সম্বন্ধের খেয়াল, দেহ-দুনিয়ার খেয়াল থেকে ঊর্ধ্বে স্নেহতে লীন থাকে। হৃদয়ের স্নেহ বাবার নৈকট্যের, সাথের, সমতার অনুভব করায়। স্নেহী সদা বাবার আশীর্বাদের যোগ্য মনে করে। স্নেহ অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেয়। সদা নিজের বুদ্ধির ওপরে, মাথার ওপরে বাবার সহযোগের, স্নেহের হাত অনুভব করে। নিশ্চয়বুদ্ধি, নিশ্চিন্ত থাকে। তোমরা সকল আদি স্থাপনের বাচ্চাদের আদি সময়ের অনুভব আছে, এখনও সেবার আদি নিমিত্ত বাচ্চাদের অনুভব আছে যে আদিতে সব বাচ্চা বাবাকে পেয়েছে, সেই স্মৃতির সাথে কত নেশা ছিল! নলেজ তো পরে প্রাপ্ত হয় কিন্তু প্রথম প্রথম স্নেহের নেশায় ডুবে যায়। বাবা স্নেহের সাগর, তাইতো মেজরিটি বাচ্চা শুরু থেকে স্নেহের সাগরে ডুবে থাকে, পুরুষার্থের গতিতে খুব ভালো স্পিডে চলে এসেছে। কিন্তু কিছু বাচ্চা স্নেহের সাগরে ডুবে থাকে, কিছু শুধুই ডুব দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। সেইজন্য ডুবে থাকা বাচ্চাদের যত কম পরিশ্রম লাগে ততটা তাদের নয়। কখনো পরিশ্রম, কখনো ভালোবাসা দুইয়ের মধ্যে থাকে। কিন্তু যারা স্নেহতে লাভলীন থাকে তারা সদা নিজেকে ছত্রছায়ার ভিতরে থাকার অনুভব করে। হৃদয়ের স্নেহী বাচ্চারা পরিশ্রমকেও ভালোবাসায় বদল করে নেয়। তাদের সামনে পাহাড়ের মতো সমস্যাও পাহাড় নয়, বরং তুলো সমান অনুভব হয়। পাথরও জলের সমান অনুভূত হয়। তো আজ যদি বিশেষভাবে স্নেহের বায়ুমণ্ডলে থাকো তবে অনুভব করবে পরিশ্রম হয়েছে! নাকি মনোরঞ্জন হয়েছে!

আজ তো সবার স্নেহের অনুভব হয়েছে, হয়েছে না! স্নেহে ডুবে ছিলে? ডুবে ছিলে সবাই? আজ পরিশ্রমের অনুভব হয়েছে? কী, কেন, কীভাবে এসব সঙ্কল্প এসেছে? স্নেহ সব ভুলিয়ে দেয়। তো বাপদাদা বলেন বাপদাদার স্নেহ ভুলো না। স্নেহের সাগর পেয়েছ, খুব ভালো করে তরঙ্গিত হও। যখনই হোক কোনো পরিশ্রমের অনুভব হবে, কেননা মায়া মাঝে মধ্যে পেপার তো নেয়, কিন্তু তোমরা সেই সময় স্নেহের অনুভব স্মরণ করো। তো পরিশ্রম ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়ে যাবে। অনুভব করে দেখ। কী হয়েছে, কী ভুল হয়ে গেছে! সেই সময় কী, কেন ... এর মধ্যে তোমরা ঢুকে যাও। যা আসে তা' চলেও যায় কিন্তু যাবে কীভাবে? স্নেহ স্মরণ করায় পরিশ্রম চলে যায়। কেননা, বিভিন্ন সময়ে বাপদাদা উভয়ের স্নেহের অনুভব তো আছে! আছে না অনুভব! কখনো তো করেছ, তাই না! আচ্ছা যা হোক, সদা নয়, কখনো তো হয়! সেই সময়কে স্মরণ করো - বাবার স্নেহ কী! বাবার স্নেহতে কী কী অনুভব করেছ! তো স্নেহের স্মৃতিতে পরিশ্রম বদলে যাবে। কেননা, বাপদাদার কোনও বাচ্চার পরিশ্রমের স্থিতি ভালো লাগে না। আমার বাচ্চা আর পরিশ্রম! তো পরিশ্রম মুক্ত কবে হবে? এই সঙ্গম যুগই আছে যেখানে পরিশ্রম মুক্ত, পরমানন্দের পরমানুভবে থাকতে পারো। পরমানন্দ যদি না থাকে তবে কোনো না কোনো বোঝা বুদ্ধিতে আছে, বাবা বলেছেন, বোঝা আমাকে দিয়ে দাও। আমিত্ব ভাবকে ভুলে ট্রাস্টি হয়ে যাও। দায়িত্ব বাবাকে দিয়ে দাও এবং স্বয়ং হৃদয়ের প্রকৃত বাচ্চা হয়ে খাও, খেলা করো আর আনন্দ করো। কেননা, সব যুগের মধ্যে এই সঙ্গমযুগ আনন্দের যুগ। এই আনন্দের যুগেও পরমানন্দ যদি উদযাপন না করো তবে কবে উদযাপন করবে? বাপদাদা যখন দেখেন যে তাঁর বাচ্চারা বোঝা উঠিয়ে খুব পরিশ্রম করছে, বোঝা দিয়ে দেয় না, নিজেই উঠিয়ে নেয়, তখন বাবার অনুকম্পা হবে তো না, করুণার উদ্রেক হবে, তাই না! আনন্দের সময় পরিশ্রম! স্নেহতে হারিয়ে যাও, স্নেহের সময়কে স্মরণ করো। কোনো না কোনো সময় প্রত্যেকের বিশেষ স্নেহের অনুভূতি হয়েই থাকে। হয়েছে। বাবা জানেন হয়েছে, কিন্তু তোমরা স্মরণ করো না। পরিশ্রমই দেখতে পাও, সংঘাত-সংঘর্ষে আটকে থাকো। যদি আজও অমৃতবেলা থেকে এখন পর্যন্ত হৃদয়ে বাপদাদা উভয় অথরিটির স্নেহের অনুভব করে থাকো তবে আজকের দিন স্মরণ করার জন্যও স্নেহের সামনে পরিশ্রম সমাপ্ত হয়ে যাবে।

এখন বাপদাদা এই বছরে প্রত্যেক বাচ্চাকে স্নেহযুক্ত, পরিশ্রম মুক্ত দেখতে চান। পরিশ্রমের লেশমাত্র যেন হৃদয়ে না থাকে, জীবনে না থাকে। হতে পারে? হতে পারে? যারা মনে করছ করেই ছাড়ব, সেই সব দৃঢ়চেতা হাত উঠাও। আজ বিশেষ দিনে এমন সব বাচ্চাকে বাবার বিশেষ বরদান - পরিশ্রম মুক্ত হওয়ার। স্বীকৃতি আছে? আছে! পরে যদি কিছু হয়ে যায় তখন কী করবে! কী কেন এসব করবে না তো? ভালোবাসার সময়কে স্মরণ করতে হবে। অনুভবকে স্মরণ করো এবং অনুভবে হারিয়ে যাও। তোমাদের প্রতিজ্ঞা রয়েছে। বাবাও বাচ্চাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের প্রতিজ্ঞা রয়েছে যে আমরা বাবার দ্বারা ২১ জন্মের জন্য জীবনমুক্ত অবস্থার পদ প্রাপ্ত করছি, করবই, তো জীবনমুক্ত অবস্থায় পরিশ্রম হয় কি? ২১ জন্মের মধ্যে এক জন্ম সঙ্গমের। তোমাদের প্রতিজ্ঞা ২১জন্মের, ২০ জন্মের নয়। তো এখন থেকে পরিশ্রম মুক্ত অর্থাৎ জীবনমুক্ত, নিশ্চিন্ত বাদশাহ। এখনের সংস্কার ২১ জন্ম ইমার্জ থাকবে। তো ২১জন্মের উত্তরাধিকার নিয়েছ তো না! নাকি এখন নিতে হবে? তো অ্যাটেনশন প্লিজ, পরিশ্রম মুক্ত, সন্তুষ্ট থাকা এবং সন্তুষ্ট করা। শুধু থাকা নয়, করতেও হবে। তবে পরিশ্রম মুক্ত থাকবে। নয়তো রোজ কোনো না কোনো বোঝার (ভার) পরিস্থিতি, পরিশ্রমের পরিস্থিতি, কী, কেনর ভাষাতে আসবে। এখন সময়ের নৈকট্য দেখছ। সময় যেমন নিকটে আসছে ঠিক তেমনই তোমাদের সবারও বাবার সাথ ও তাঁর কাছাকাছি হওয়ার অনুভব বর্ধিত হওয়া উচিত তো না! বাবার সাথে তোমাদের নৈকট্য সময়ের নৈকট্য সমাপ্ত করবে। তোমরা সব বাচ্চা কি আত্মাদের দুঃখ অশান্তির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছ না! তোমরাই পূর্বজও, পূজ্যও। তো হে পূর্বজ আত্মারা, হে পূজ্য আত্মারা, কবে বিশ্ব কল্যাণের কার্য সম্পন্ন করবে?

বাপদাদা সমাচারে দেখেছেন, সব বর্গ নিজের নিজের মিটিং করে, প্ল্যান বানায়, কীভাবে বিশ্ব কল্যাণের গতিকে তীব্র করবে! প্ল্যান তো খুব ভালো বানায়। কিন্তু বাপদাদা জিজ্ঞাসা করেন শেষমেশ কবে নাগাদ? এর উত্তর দাদিরা দেবে - অবশেষে কবে? পাণ্ডব দেবে - শেষ পর্যন্ত কবে? বাবার প্রত্যক্ষতা হবে, এটাই সব বর্গের সবাই প্ল্যান বানানোতে লক্ষ্য রাখে। কিন্তু প্রত্যক্ষতা হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার দ্বারা। প্রতিজ্ঞায় দৃঢ়তা, কখনো কোনো কারণে অথবা পরিস্থিতিতে দৃঢ়তা কম হয়ে যায়। তোমরা খুব ভালো প্রতিজ্ঞা করো, অমৃতবেলায় তোমরা যদি শুনতে পারতে! বাবা তো শোনেন, তোমাদের কাছে এখন সায়েন্সের এমন সাধন দেওয়া হয়নি যা সবার হৃদয়ের আওয়াজ শুনতে পারো। বাপদাদা শোনেন প্রতিজ্ঞার মালা, এত ভালো ভালো সঙ্কল্পের বিষয়! হৃদয় খুশি হয়ে যায় যার জন্য বাপদাদা বলেন, বাহ্ বাচ্চারা বাহ! বাবা কী বলবেন তোমাদের, কী কী করো তোমরা! যখন কর্মে আসো, মুরলি ৭৫ পার্সেন্ট পর্যন্তও ঠিক থাকে। কিন্তু যখন কর্মযোগে আসো তা'তে ফারাক হয়ে যায়। কিছু সংস্কার, কিছু স্বভাব, স্বভাব আর সংস্কার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকে, তা'তে প্রতিজ্ঞা দৃঢ় হওয়ার পরিবর্তে সাধারণ হয়ে যায়। দৃঢ়তার পার্সেন্টেজ কম হয়ে যায়।

বাচ্চাদের একটা খেলা দেখে বাপদাদা মৃদু হাসেন। কোন খেলা করো, বাবা বলবেন কি? বলবেন তখনই, যখন তোমরা এই খেলা শেষ করবে। করবে শেষ? করবে? আজ তো স্নেহের শক্তি আছে, তাই না! করবে? হাত তোলো। শুধু হাত নয়, অন্তরের হাত তোলো, করতেই হবে। তারপরে বাপদাদা অল্প..., অল্প অল্প কিছু করবেন। বলবেন তোমাদের? পাণ্ডব বলো, বাবা বলবেন? প্রথমের এই লাইন বলো, বলবেন? বলো। করতে হবে। বলবেন? যদি হ্যাঁ হয় তবে প্রথম লাইন হাত তোলো। এই দুই লাইন হাত তোলো। মধুবনের তোমরাও হাত তোলো। অন্তরের হাত তো না! আচ্ছা। তোমাদের খেলা দেখায় বাপদাদার অনুকম্পা হয়, আনন্দ হয় না। কেননা, বাপদাদা দেখেন বাচ্চারা নিজের ব্যাপার অন্যের ওপরে সঁপে দিতে খুব চতুর। কী খেলা করো তোমরা! নিজেদের বড়াই করো। ভাবো কে আর দেখছে! আমি জানি, আমার মন জানে। বাবা তো পরমধামে, সূক্ষ্মবতনে বসে আছেন। যদি কাউকে বলো যে এটা করা উচিত নয়, তো কী খেলা করো জানো তোমরা? হ্যাঁ এটা তো হয়েছে কিন্তু... কিন্তু অবশ্যই জুড়ে দাও। কিন্তু কী? এরকম হয়েছিল তো না, এরকম করেছিল তো না, এরকম হয়েছে তো না, তবেই তো হয়েছে, আমি করিনি, এরকম হয়েছে তখন.. এখন এ' করেছে, তবে করেছি। নয়তো আমি করতাম না, তাহলে এটা কী হয়েছে? নিজের অনুভব, রিয়ালাইজেশন কম। আচ্ছা, মনে করো সে এরকম করেছে, তবে তুমি করেছ, ঠিক আছে খুব ভালো! প্রথম নম্বর সে হয়েছে, দ্বিতীয় নম্বর তুমি হয়েছ, ঠিক আছে। বাপদাদা এটাও মেনে নেন। তুমি প্রথম নম্বর নও, দ্বিতীয় নম্বর কিন্তু যদি তোমরা ভাবো যে প্রথম নম্বর যদি পরিবর্তন হয় তবে আমি ঠিক হবো, ঠিক আছে? এটাই তো মনে করো সেই সময়, তাই না! ধরে নাও, প্রথম নম্বর পরিবর্তন করবে, বাপদাদা আর সবাই যে প্রথম নম্বরের তাকে বললেন তোমার ভুল, তোমাকে পরিবর্তন করতে হবে ঠিক আছে; আচ্ছা প্রথম নম্বরের সে যদি পরিবর্তন করলো, তাহলে প্রথম নম্বর কে পাবে? তোমার তো প্রথম নম্বর হবে না। পরিবর্তন শক্তিতে তোমার প্রথম নম্বর হবে না। প্রথম নম্বর তুমি তাকে দিয়েছ, সুতরাং তোমার কোন নম্বর হলো? দ্বিতীয় নম্বর হলো তো না! যদি তোমাদের দ্বিতীয় নম্বর বলা হয় তবে সেটা মঞ্জুর করবে? করবে? তোমরা বলবে তো না, এরকম ছিল, ওরকম ছিল, কেমন ছিল... এই ভাষা খুব আসে তোমাদের খেলাতে। এরকম, ওরকম, সেরকম এই খেলা বন্ধ করে আমাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমি পরিবর্তন হয়ে অন্যকে পরিবর্তন করবো, কিন্তু যদি অন্যকে পরিবর্তন করতে না পারো তবে শুভ ভাবনা, শুভ কামনা তো রাখতে পারো! সেটা তো তোমাদের নিজেদের জিনিস তো না! তো হে অর্জুন! আমাকে হতে হবে। বিশ্বের প্রথম রাজ্যধারী লক্ষ্মী-নারায়ণের সমীপ আসতে হবে তোমাকে, নাকি যারা দ্বিতীয় নম্বরে তাদেরকে?

বাপদাদার এই বর্ষে এটাই আশা যে সব ব্রাহ্মণ আত্মা, ব্রহ্মাকুমার, ব্রহ্মাকুমারী যেমন এখানে এই ব্যাজ লাগাও, সবাই লাগাও তো না! এখানেও তোমরা এলে ব্যাজ পাও তো, তাই না! সেটা সোনার হোক বা রুপোর। তো যেমন এখানে ব্যাজ লাগাও তেমন বুদ্ধিতে, মনে এই ব্যাজ লাগাও, আমাকে পরিবর্তন হতে হবে। আমাকে নিমিত্ত হতে হবে। অন্য ব্যাপারে ব্যর্থ বিষয়ে যদি বা পিছনে থাকো, পরিবর্তনের কার্যে ব্রহ্মা বাবার সমান প্রথমে আমি। আর পরিবর্তনেও প্রথমে আমি। ঠিক আছে তো না! মঞ্জুর? তো কাল অমৃতবেলায় বাপদাদা দেখবেন, বাপদাদার দেরি লাগে না, সুইচ অন হলেই সাথে সাথে সমগ্র ওয়ার্ল্ড দেখা যায়। তো কাল অমৃতবেলায় সবাই বাবার সাথে মিলন উদযাপন করবে তো না! তো মিলন উদযাপন করাকালীন এই ব্যাজ লাগিও। আমরা দেখবো প্র্যাকটিক্যালি কোন ব্যাজ লাগাও। অযথা কেবল শো এর জন্য লাগিও না, পরিবর্তন হতেই হবে। দৃঢ়তা আছে তো না! তোমরা দৃঢ়, তাইতো না! সবাই হাত তোলো তো না, সেইজন্য বাপদাদার সামান্য এরকম লাগে - জানি না করবে কী করবে না! এটাও ভালো, এই যে হাত তোলো তো এক সেকেন্ড ভালো সঙ্কল্প তো করেছো, কিন্তু করেই ছাড়বে। আমাকে পরিবর্তন হতেই হবে, পরিবর্তিত হয়ে পরিবর্তন করতে হবে। এ' পরিবর্তন হ'লে, এই পরিস্থিতি বদলালে, এই সরকমস্ট্যান্স বদলালে...না। আমার পরিবর্তন হতে হবে। পরিস্থিতি তো আসবে, তোমরা উঁচুতে (উন্নতিতে) যাচ্ছো, উঁচু স্থানে সমস্যাও তো উঁচু আসে, তাই না! কিন্তু যেমন আজ নম্বর ক্রমানুসারে যথাশক্তি স্নেহের স্মৃতির বায়ুমণ্ডল ছিল, ঠিক তেমনই নিজের মনে সদা স্নেহে লাভলীন থাকার বায়ুমণ্ডল সর্বদা ইমার্জ রাখো।

বাপদাদার কাছে খুব ভালো ভালো সমাচার আসে। সঙ্কল্প পর্যন্ত খুব ভালো। স্বরূপে আসতে যথাশক্তি হয়ে যাও। এখন দু'মিনিটের জন্য সবাই পরমাত্ম স্নেহ, সঙ্গমযুগের আত্মিক আনন্দের স্থিতিতে স্থিত হয়ে যাও। আচ্ছা - এই অনুভবে বারবার প্রতিদিন সময় সময়ে অনুভব করতে থাকো। স্নেহ ছেড়ো না। স্নেহতে হারিয়ে যাওয়া শেখো। আচ্ছা।

চতুর্দিকের যোগযুক্ত, যুক্তিযুক্ত, রাজযুক্ত (ত্রিকালজ্ঞ), নিজেও গুহ্য বিষয়কে জেনে সদা অন্যকে সন্তুষ্ট করে আর সন্তুষ্ট থাকে। শুধু নিজে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না, সন্তুষ্ট করতেও হবে, এভাবে সদা স্নেহের সাগরে লাভলীন বাচ্চাদের, সদা বাবা সমান হওয়ার তীব্রগতির পুরুষার্থী বাচ্চাদের, সদা অসম্ভবকেও সহজভাবে সম্ভব করে, এমন শ্রেষ্ঠ আত্মাদের, সদা বাবার সাথে থাকে আর বাবার সেবায় সাথি থাকে এমন অনেক অনেক লাকি আর লাভলি বাচ্চাদের আজকের অব্যক্ত দিবসের অব্যক্ত ফরিস্তা স্বরূপের স্মরণের স্নেহ-সুমন আর হৃদয়ের কল্যাণকারী ভাবনা, আচ্ছা।

বরদান:-
স্মরণের জাদু মন্ত্রের দ্বারা সর্বসিদ্ধি প্রাপ্ত করে সিদ্ধি স্বরূপ ভব

বাবার স্মরণের জাদুমন্ত্র হলো - এই জাদুমন্ত্রের দ্বারা যে সিদ্ধি চাও সেই সিদ্ধি প্রাপ্ত করতে পারো। যেমন স্থূলভাবেও কোনো কার্য সিদ্ধির জন্য জপ করে, তেমন এখানেও তোমরা কোনো কার্যে যদি সিদ্ধি চাও তবে স্মরণের এই মন্ত্রই বিধি স্বরূপ। এই জাদুমন্ত্র সেকেন্ডে পরিবর্তন করে দেয়। এটা সদা স্মৃতিতে বজায় রাখো তবে সদা সিদ্ধি স্বরূপ হয়ে যাবে। কেননা, স্মরণে থাকা কোনো বড় ব্যাপার নয়, সদা স্মরণে থাকা - এটাই বড় বিষয়, এর দ্বারাই সর্বসিদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

স্লোগান:-
সেকেন্ডে বিস্তারকে সার রূপে সমাহিত করে নেওয়া অর্থাৎ অন্তিম সার্টিফিকেট নেওয়া।

অব্যক্ত ইশারা : - অশরীরী এবং বিদেহী স্থিতির অভ্যাস বাড়াও শরীরের কোনো বস্ত্র যেমন সহজভাবে খুলে দিতে পারো, তেমনই এই শরীর রূপী বস্ত্র সহজে খুলতে পারবে, আর প্রয়োজনের সময় ধারণ করতে পারবে - এর অভ্যাস অবশ্যাক। বস্ত্র যদি কষ্টদায়ক বা টাইট হয় তবে সহজে খুলতে পারবে না। ঠিক এমনই দেহরূপী বস্ত্রও সংস্কারে আটকা থেকে যেন কষ্টদায়ক বা টাইট না হয়। সেইজন্য সব পরিস্থিতিতে ইজি থাকো। যদি ইজি থাকো তবে সব কার্য ইজি হবে। পুরানো সংস্কার থেকে যত বিচ্ছিন্ন থাকবে, অবস্থাও ততো সংযোগবিহীন অর্থাৎ বিদেহী হওয়া সহজে হয়ে যাবে।